১০ টি ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া
কম বাজেটে আমরা অনেকেই ব্যবসা খুঁজি। কিন্তু কোন ব্যবসা করব সেটা নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ থাকে। যার কারণে সঠিকভাবে ব্যবসা করা হয়ে ওঠে না। বলে রাখা ভালো ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই পরিশ্রমী, সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হওয়া জরুরী। তা নাহলে আপনি যেভাবে ব্যবসা করেন না কেন ভবিষ্যতে আপনার ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তাই আমার অভিজ্ঞতায় আজকে কিছু আইডিয়া শেয়ার করব যে ব্যবসা গুলো কম বাজেটে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে করা যাবে।
৩০ হাজার টাকায় যে ব্যবসা গুলো করতে পারবেন
বড় বাজেটে আপনি অনেক ব্যবসা করতে পারেন। কিন্তু কমাতে অনেকে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেনা।যদি এর পেছনে অনেক কারণ থাকে। আজকে সেগুলো নিয়েই কথা বলব
১.সবজি চাষ
গ্রাম অঞ্চলে যদি আপনার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে সবজি চাষের মত লাভজনক আর কোন ব্যবসা হতে পারে না। গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের বিভিন্ন ক্ষেত খামারে কাজ করে। সারা বছর তারা চাকরি বাকরি না করেও বেশ ভালোভাবেই তাদের জীবন মান উন্নয়ন করছে। বারোমাসি শাক-সবজি থেকে শুরু করে মৌসুমি সবজি চাষ করে মানুষ লাভবান হচ্ছে। সবজি চাষের জন্য আমাদের সবজির চারা উৎপাদনের জন্য ভালো মানের বীজ কিনে নিতে পারি। এছাড়াও ক্ষেতের চাষবাসের জন্য হাল চাষ ও সার প্রয়োগ করার জন্য খরচ করতে হবে।যদি এক বিঘা জায়গার মধ্যে ঝিঙ্গা,চিচিঙ্গা,শসা,ধুন্দল, গাজর, ঢেঁড়স, সিম,লাউ,ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি আলাদা আলাদাভাবে রোপন করতে পারেন। ঠিকমতো পানি, সার ও কীটনাশক দিয়ে ভালো পরিচর্যা করলে দুই থেকে তিন গুণ বেশি মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
২.মাছের ব্যবসা
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ না হলে প্রতিদিনের খাবার অপূর্ণতায় থেকে যায়। মাছ আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করে তাই আমরা প্রতিনিয়ত মাছ নিত্যদিনের খাবার হিসেবে বেছে নেই। মাছের আড়ৎ থেকে প্রতিদিন সকালে মাছ পাইকারি বিক্রি হয়। সেখান থেকে মাছ কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করে যা প্রায় দ্বিগুন লাভ হবে। এছাড়াও যদি মাছ কিনে গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের অলি গলিতে মাছ বিক্রি করা যায় তাহলেও লাভের পরিমাণ বেশি হবে। যেমন শিং মাছ, বোয়াল মাছ, কাতল, রুই, কার্প ইত্যাদি এছাড়া ছোট মাছ বেশ জনপ্রিয়।
৩. দেশি মুরগির ব্যবসা
ব্রয়লার মুরগির চেয়ে আমরা দেশি মুরগি বেশি পছন্দ করি। দেশি মুরগির চাহিদা সবসময় থাকে বলেই দিন দিন মুরগির কদর বাড়ছে। ব্রয়লার মুরগিতে লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দেশি মুরগিতে লসের পরিমাণ খুব কম। আপনি আপনার বাড়িতে অল্প জায়গার মধ্যে ছোট করে মুরগির খামার তৈরি করতে পারেন যেখানে ৪০-৫০টা মুরগি অনায়েসে পালন করা যাবে।
এছাড়া মুরগির পর্যাপ্ত বাতাসের জন্য ঘর তৈরি করে দিতে হবে এবং খাবার, সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে শেয়াল, কুকুর মুরগি খেয়ে না ফেলে।ত্রিশ হাজার টাকা বাজেটে দেশি মুরগির ব্যবসাটা করতে পারেন।ছোট থেকে মুরগির বাচ্চা কম দামে কিনে বড় করে বিক্রি করতে পারেন।প্রতি মুরগি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি করা সম্ভব। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসা হবে।
৪.ডিমের ব্যবসা
আমাদের চারপাশে অনেকেই ব্রয়লার মুরগি, দেশি মুরগি পালন করেন থাকেন। মুরগি পালন করার ফলে প্রতিদিন প্রত্যেকটা মুরগি যে পরিমাণ ডিম দেয় তা শুধু পরিবারের জন্য আমিষের চাহিদাই পূরণ করে না এছাড়াও বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়। মুরগির খামার থেকে প্রতিদিন যে ডিম দেয় তা কিনে বাজারে একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা করা যাবে।
ডিম নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে প্রথমে প্রচার প্রচারণা বাড়ালে ধীরে ধীরে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতার অভাব হবে না। ডিম আমাদের শরীরে আমিষের ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে ডিম কিনে রেখে দিলে প্রতিদিন পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করলে ভালো পরিমান লাভ যাবে। ডিমের বর্তমান খুচরা বাজারে ৫০ টাকা হালি। যদিও ডিমের মূল্য সব সময় এক থাকে না ওঠানামা করেই। ব্যবসা যেমনই হোক সৎ ভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হবে।
৫.ইলেকট্রিক পন্যের ব্যবসা
ইলেকট্রিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে আমাদের জীবনের মানও তেমন উন্নত করা হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রেই আমাদের ইলেকট্রিক পণ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। ফ্যান,লাইট,এলইডি লাইট,সুইচ,গ্যাংবোর্ড, মাল্টিপ্লাগ, সকেট,টেস্টার ইত্যাদি ইলেকট্রিক পণ্য দৈনন্দিন কাজে লাগেই।
ঢাকার নবাবপুর, স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে ইলেকট্রিক পণ্য খুবই কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে মালামাল চিনে নিতে হবে। কোন মালামালটা ভালো হবে সেটা দেখে বুঝে তারপর কিনে নিতে পারেন। ইলেকট্রিক কাজের উপর দিয়ে আপনারা অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি লোকাল ইলেকট্রিক সার্ভিস দিতে পারেন। দুইভাবে ব্যবসা করলে সবদিক থেকে আপনার লাভ হবে ।
৬. উন্নত জাতের কবুতর পালন
কবুতর পালন এক ধরনের সৌখিনতা হলেও বর্তমান সময়ে কবুতর পালন এক ধরনের লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়।দেশি কবুতর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নত জাতের কবুতরের চাহিদা প্রচুর। কবুতরের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, অল্প জায়গার মধ্যে ঘর বানিয়ে দিলে অনায়েসে কবুতর পালন করা যায়। কবুতরের খাবার আর কবুতরের বসার জন্য গাছপালা থাকলে ভালো হয়।
তাছাড়া বাজারে কবুতরের জন্য গম,চালের গুড়া, আরও কিছু খাবার কিনতে পারবেন। বাসা বাড়িতে ছাদের উপরে একপাশে ঘর বানিয়ে দিলে কোন সমস্যা ছাড়াই কবুতর পালন করা যায়। সারাদিন ছাদের উপরে চলাচল করবে আর দিনে কয়েকবার খাবার দিলেই হয়ে যায়। আপনি যদি কবুতর প্রদর্শনী মেলায় গিয়ে কয়েক জোড়া উন্নত জাতের এবং কিছু দেশি কবুতর ১৫-২০ হাজার টাকায় কিনে আনতে পারেন।
৭.ফুলের ব্যবসা
ফুল ভালোবাসে না এমন লোকজন খুব কমই পাওয়া যাবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে,গায়ে হলুদ,বিভিন্ন পার্টি, হোটেল রিসিপশন, বিভিন্ন দিবস থেকে শুরু করে যে কোন আয়জনে ফুলের ব্যবহারের শেষ নেই। এছাড়াও ভালোবাসার মানুষকে সবচেয়ে ভালো, মনকে খুশি করার মতো একটা উপহার হচ্ছে ফুল। ফুলকে নিয়ে যদি আমার ব্যবসা করি তাহলে কমবেশি আমাদের বিক্রয় হবে। ফুল সচারচর সব জায়গায় পাওয়া যায় না, ফুলের প্রয়োজন হলে আমাদের শহরে যেতে হয় তাই আমাদের একটা এলাকা বেছে নিতে হবে যেখান থেকে ফুলের চাহিদা ভালো যেমন – বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করা যায়। ফুলবাগান থেকে পাইকারি দামে ফুল কিনে খুচরা বিক্রি করতে পারি। চাহিদা সম্পন্ন ফুল গুলো হচ্ছে-গোলাপ,হাসনাহেনা, বকুল ফুল, গাঁদা ফুল, জবা, রজনীগন্ধা,বেলিফুল সব সময় এই ফুলগুলোর ব্যবহার হয়ে থাকে।ফুলের ব্যবসায় ৩০ থেকে ৪০% লাভ হয়ে থাকে, তাই ৩০ হাজার টাকা বাজেটে এই ব্যবসাটাই লাভজনক হবে।
৮.ফলের ব্যবসা
সব মৌসুমে ফলের চাহিদার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় তাই প্রধান খাবারের পরে আমাদের ফলের অবস্থান।বাংলাদেশের প্রধান খাবার ভাত খাওয়ার পরিবর্তে ফল খেয়ে থাকেন কারণ ভাত আমাদের শরীরের মেদ বাড়ায়।এছাড়াও কোন আত্মীয় বাড়ি যেতে কিংবা অসুস্থ রোগী দেখতে যাওয়ার জন্য ফল নেওয়ার প্রচলন আছে। তাই যে কোন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে একটা
ছোট ফলের দোকান দিলে ভালো হয়।বিশেষ করে শহর অঞ্চলে বড়বাজার এবং বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন গুলোতে চারপাশে খুঁটি দিয়ে পর্দা টানিয়ে এরকম দোকান তৈরি করা যায় করা। পাইকারি দামে ফল কিনে খুচরা বিক্রি করতে পারলে ভালো পরিমাণ লাভ পাওয়া যায়। আপেল, কমলা, লিচু, আঙ্গুর,ডালিম, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফল কিনে বিক্রি করতে পারেন।
৯.মধুর ব্যবসা
খাঁটি মধুর চাহিদা সব সময়ই থাকে। কিন্তু সব সময় খাঁটি মধু পাওয়া যায় না। বিভিন্ন অসুস্থতায় মধু খুব কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই প্রাচীনকাল থেকেই ঠান্ডা-কাশি ছাড়াও অন্যান্য অসুখ-বিসুখে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা চাইলে মধু বিভিন্ন মৌমাছির চাক থেকে সংগ্রহ করতে পারি সেক্ষেত্রে যাদের বাসার মৌমাছির চাক তাদেরকে অর্ধেক মধু দিতে হয়, তা নাহলে মধুর সমপরিমাণ মূল্য দিতে হয়।
দ্বিতীয়ত আপনি নিজের সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছি চাষ করতে পারেন। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রচার প্রচারণা বাড়িয়ে মধু বিক্রয় করতে পারেন। এছাড়া অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে দারাজকে কাজে লাগিয়ে মধু বিক্রয় করা সম্ভব।
১০. ফুড ভ্যান ব্যবসা
স্ট্রিট ফুড আমরা কমবেশি সবাই পছন্দ করি। স্ট্রিট ফুড আইটেমে ফুসকা, দই ফুসকা,চটপটি, কাবাব, পাস্তা, হড্ডগ, চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোল ইত্যাদি অনকে ধরনের খাবার আপনার ফুড ভ্যানে বিক্রয় করতে পারেন। ২০থেকে ৩০ হাজার টাকায় এই ব্যবসাটা বেশ লাভজনক এবং জনপ্রিয়।
এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত এবং শহরের লোকসমাগম যেখানে বেশি সেখানে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারেন। আপনার সাথে একজন লোক নিয়ে কাজ করলে আপনার যেমন অনেক সাহায্য হবে তেমনি কাজ করতেও ভালো লাগবে। এই ব্যবসা করার জন্য প্রথমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায় এমন একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে যার মাধ্যমে আপনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্যানে করে এই খাবর গুলো বিক্রি করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসা করতে কোন লজ্জার কিছু নাই। যেকোনো কাজই হোক না কেন ধৈর্য,পরিশ্রম,সততার মাধ্যমে করতে পারলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।উপরে যে কয়েকটি ব্যবসার আইডিয়া দেওয়া হলো সেগুলোর মধ্যে আপনি যে কোন একটিকে বেছে নিতে পারেন। ধীরে ধীরে ব্যবসা চালিয়ে লাভবান হতে পারবেন।