রাতে কম খাওয়ার যত উপকারিতা
রাতে কম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছ। একজন মানুষ সাধারণত দিনে তিনবেলা খাবার খায় । তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রাতের খাবার। রাতের খাবার সাধারণত যত হালকা হবে ততই ভালো। রাতের বেলা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খাওয়া কিংবা ভারী খাবার খাওয়া, শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই রাতের বেলা তুলনামূলক হালকা খাবার এবং কম খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া।উচিত। রাতে পরিমাণের তুলনায় কম খাবার খাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় আর্লি টাইম রেস্ট্রিক্টেড ফিডিং অর্থাৎ ETRF. এই তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাওয়ার অনেক শারিরীক এবং বৈজ্ঞানিক উপকার রয়েছে। চলুন জেনে নেই রাতে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়ার উপকারীতা গুলোঃ
১.ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
রাতে কম খাওয়া আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।রাতে পাকস্থলীতে বিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় । রাতে অতিরিক্ত ভারি খাবার আমাদের পাকস্থলীতে চাপের সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে রাতে কম খেলে এবং হালকা খাবার খেলে পাকস্থলীতে চাপ কম পড়ে এবং বিপাকের জন্য শরীরকে কম পরিশ্রম করতে হয়। এতে শরীর ক্যালরি কম পোড়ায় এবং আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২.সার্কাডিয়ান রিদমের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখেঃ
সার্কাডিয়ান রিদম বা ছন্দ হলো একটি প্রাকৃতিক শারীবৃত্তিয় প্রক্রিয়া যা ঘুম ও জাগরনের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি প্রতি ২৪ ঘন্টায় পুনরাবৃত্তি হয়। এই চক্র দিন, রাত,সাস্থ্য, খাবার, তাপমাত্রা মতো বিষয় গুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়।এই সার্কাডিয়ান রিদম ঘুম এবং বিপাকক্রিয়ার মত বিভিন্ন শারীরাবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে থাকে। তাই রাতের খাবারের সাথে সার্কাডিয়ান রিদম মেলানো অত্যন্ত জরুরি। এতে বিপাক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। তাই রাতে কম এবং হালকা খাবার খাওয়া উত্তম।
৩.রাতের ঘুম ভালো হয়
রাতে ভারী খাবার খেলে ঘুম ভালো হয় না। রাতে ঠিকমত ঘুম না হয় তাহলে বিভিন্ন প্রকারের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি ঘুম ঠিক মতো না হয় তাহলে শরীরের অন্যান্য ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। রাতে যদি কেউ ভারী খাবার খায় তাহলে তার ঘুম ভালো হবে না। অন্যদিকে যদি সন্ধ্যার দিকে হালকা খাবার খেয়ে কোন মানুষ ঘুমায় কিংবা রাতে হালকা খাবার খায় অথবা কম খায় তাহলে তার ঘুম অত্যন্ত ভালো হয়।
৪.সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে
রাতে কম খাওয়া কিংবা হালকা খাবার খাওয়া রক্তে সুগারের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রিত রাখে। তাই যারা ডায়াবেটিস পেশেন্ট আছেন এবং ডায়াবেটিকস থেকে মুক্তি পেতে চান তাদের উচিত রাতে কম খাবার খাওয়া। এতে আপনাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং এর ফলে ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রাতে কম খাওয়া ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুকি কমায়।
৫.রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে
রাতে কম খাবার কিংবা হালকা খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।।উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট বা চিনি যুক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে।আমাদের মত দক্ষিন এশিয়া মহাদেশের লোক গুলো রাতে শর্করা জাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত এবং অনেকে দেরিতেও খাবার খায় যা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুকি বাড়িয়ে দেয় বহুগুন।তাই রাতে কম খাবার খাবার খাওয়া উচিৎ এবং শর্করা যুক্ত খাবার কমিয়ে প্রোটিন বা ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিৎ। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬.গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের মত রোগের ঝুকি কমায়
রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার কিংবা তেল চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এসিডিটি রিফ্লাক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা তৈরি করে এবং অনেক সময় বদহজমও হয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে আলসারের মতো বড় রোগের সৃষ্টি হয়। এজন্য দ্রুতই রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো এবং তেল চর্বি যুক্ত ভারী খাবার না খেয়ে ভিটামিন যুক্ত হালকা খাবার খাওয়া উচিৎ।
৭.শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে
রাতে কম খাওয়ার অনেক উপকারিতার মধ্যে একটি হল ওজন কমাতে সাহায্য করা। যাদের শরীরের ওজন বেশি কিংবা যারা স্থূলকায় তারা যদি চান যে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলবেন তবে অবশ্যই অবশ্যই রাতে কম খাবার খান। আমাদের খাদ্যাভাসের উপরে ওজনের হ্রাস এবং বৃদ্ধি অনেকটা নির্ভর করে। তাই ওজন কমাতে চাইলে রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খান।শর্করা যুক্ত খাবার পরিহার করুন । এতো দ্রুতই শরীরের ওজন কমে যাবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি রাতে কম খাবার খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান যদি চান আপনার আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা নিমন্ত্রিত থাকুক এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রিত থাকুক তাহলে অবশ্যই রাতে হালকা খাবার খান কম খাবার খান। রাতে কম খাবার খাওয়া আপনার সারকার্ডিয়ান রিদম ঠিক রাখবে রাতের ঘুম ভালো করবে, আপনি হবেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।