বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়

বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়

একজন নারীর ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভপাত বা “বাচ্চা নষ্ট করা” এটি অনেক বড় ধরনের গুনাহের কাজ। বাচ্চা নষ্ট করা যেমন একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, তেমনি অন্যদিকে এর সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সমস্যা। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়। কিভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা যায় তার উপায় নিয়ে 

বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়

বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয় জেনে নিন:

বাচ্চা নষ্ট করার পর শারীরিক সমস্যা

গর্ভপাত বা বাচ্চা নষ্ট করার পর নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গর্ভপাতের পদ্ধতি অনুসারে এই সমস্যাগুলি হালকা থেকে গুরুতর হয়ে থাকে। যা নারীর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে কিছু শারীরিক সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে যা বাচ্চা নষ্ট করার পর দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত রক্তপাত: গর্ভপাতের পর কিছুটা রক্তপাত স্বাভাবিক হলেও, অনেক ক্ষেত্রে এটি অতিরিক্ত হতে পারে। যদি দেখেন যে এই রক্তপাত কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে সাথে শারীরিক দুর্বলতা এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে বসে না থেকে দ্রুত একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। 

স্তন ব্যথা এবং অস্বস্তি: গর্ভপাতের পর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্তনে ব্যথা সাথে অস্বস্তিভাব লাগতে পারে। যদি দেখেন যে স্তনে ফোলাভাব, ব্যথা, বা অস্বাভাবিক লাগছে তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। 

সংক্রমণ (Infection): গর্ভপাতের পর অনেকের ইনফেকশনের সমস্যা দেখা যায়। ইনফেকশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, পেটে তীব্র ব্যথা, অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, এবং তীব্র দুর্গন্ধ। এটি অপরিছন্নতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অপরিষ্কার যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে। যদি সঠিক সময়ে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি অনেক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণত ইনফেকশনের সমস্যায় এন্টিবায়োটিক ডোজ কমপ্লিট করলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

জরায়ু ক্ষত বা আঘাত: ভুল গর্ভপাতের কারণে জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ভবিষ্যতে গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবসময় সতর্ক থাকতে হবে ।

পরবর্তী গর্ভধারণে সমস্যা: বাচ্চা নষ্ট করার কারণে ভবিষ্যত গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জরায়ুতে ক্ষত, সংক্রমণ, বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে পরবর্তীতে বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

হরমোনের পরিবর্তনজনিত সমস্যা: বাচ্চা নষ্ট করার কারণে হরমোনের পরিবর্তনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের স্তরে পরিবর্তনের ফলে শারীরিক অস্বস্তি, মানসিক অস্থিরতা, এবং মাসিক চক্রের অনিয়ম, অবসাদ, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা কিভাবে করবেন?

সঠিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে পারে। উপরে উল্লেখিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিম্নে লিখিত পদক্ষেপ গুলো জেনে নিন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: গর্ভপাতের পর কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে বসে না থেকে দ্রুত একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: গর্ভপাতের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কোনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই যাতে দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন: যেহেতু গর্ভপাতের কারণে শরীরে রক্তক্ষরণ হয় তো সেই জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন সি জাতীয় ফল – শাকসবজি বেশি খেতে হয় যাতে ইনফেকশন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

বিশ্রাম এবং শারীরিক যত্ন: গর্ভপাতের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পাশাপাশি স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন: গর্ভপাতের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে যাতে ইনফেকশনের সমস্যা না হয়। এছাড়াও ভিটামিন সি জাতীয় জিনিস বেশি খেতে হবে যাতে ক্ষতগুলো তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

মানসিক সমস্যা 

গর্ভপাতের পর একজন নারীর মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিম্নের এই মানসিক সমস্যাগুলো জেনে নিন এবং অপরাধমূলক কাজ থেকে সতর্ক থাকুন। 

অপরাধবোধ এবং অনুশোচনা: একজন নারী বাচ্চা নষ্ট করার পর তিনি অপরাধবোধ বা অনুসূচনায় ভুগতে পারেন যা তার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।

বিষণ্ণতা (Depression): অনেক নারী গর্ভপাতের পর বিষন্নতায় ভোগেন। এতে তার মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

আত্মবিশ্বাসের অভাব: বাচ্চা নষ্ট করার পর এর একজন নারীর অনেক আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তারা নিজেদেরকে সমাজের থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতে পারেন।

সামাজিক ও সম্পর্কগত সমস্যা

বাচ্চা নষ্ট করা সমাজের চোখে অনেক বড় গুনাহের কাজ। এগুলো জানাজানি হলে সামাজিক এবং সম্পর্কগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও  গর্ভপাতের সিদ্ধান্তে অনেক সময় পরিবার বা সঙ্গীর মধ্যে মতবিরোধ হতে পারে। যা পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করে। এ সময় তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয় এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যে অনেকটাই প্রভাব পরে। 

শেষ কথা 

আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয় সবকিছুই নিয়ে আলোচনা করেছি। এই সমস্যাগুলি থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের পাশাপাশি মানসিক সমর্থন পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নারীদের সুস্থ সচেতনতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

গর্ভাবস্থা নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *