গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় | সহজ ঘরোয়া সমাধান ও কার্যকরী টিপস

গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আমাদের অনেকেরই দিনের শুরু বা শেষ হয় এক অস্বস্তিকর অনুভূতির মাধ্যমে। বুকে হালকা জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা বা পেটে ব্যথা এই লক্ষণগুলো আমাদের কাছে গ্যাস্ট্রিক নামে পরিচিত। দাওয়াত উৎসবে বা একটু বেশি ভাজাপোড়া খেলেই যেন এই সমস্যা হানা দেয়।

তবে চিন্তার কিছু নেই। গ্যাস্ট্রিক কোনো বড় রোগ নয়, বরং এটি আমাদের জীবনযাত্রার সাথে জড়িত একটি সাধারণ সমস্যা। তবে দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এবং খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন, আজ আমরা গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

গ্যাস্ট্রিক আসলে কী এবং কেন হয়?

খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমাদের পাকস্থলীতে খাবার হজম করার জন্য অ্যাসিড তৈরি হয়। যখন পেটের মধ্যে 
এই অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় বা ভুল সময়ে তৈরি হয়, তখন পেটে ও বুকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একেই আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলি।

এর প্রধান কারণগুলো হলো:

  • অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া।
  • অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা।
  • অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা।
  • দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ।
  • রাতে দেরি করে খাওয়া এবং খেয়েই ঘুমিয়ে পড়া।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার সেরা উপায়

ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি ফলো করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই ভালো হয়। তাই অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হলে ওষুধের জন্য ছোটেন। কিন্তু আমাদের রান্নাঘরেই এমন কিছু জিনিস আছে যা দিয়ে দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়

১. আদা পানি পান করুন

আদা হজমের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আধা বেশ কার্যকরী।

  • কীভাবে খাবেন: এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে ৫-১০ মিনিট পানি ফুটিয়ে গরম করে নিন। এরপর এটি চায়ের মতো পান করুন। এটি পেটের ব্যথা কমাতে দারুণ কাজ করে।

আরও পড়ুন: আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

২. জিরা ভেজানো পানি

জিরা শুধু রান্নার মসলা নয়, এটি গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবেও চমৎকার। জিরা হজমে সাহায্যকারী এনজাইম তৈরি করে এবং দ্রুত গ্যাস কমাতে পারে।

  • কীভাবে খাবেন: এক গ্লাস পানিতে এক চামচ জিরা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এই পানি পান করুন।

তাই যাদের পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারা জিরা পানি খেতে পারেন। পেটের সমস্যা দূর হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।

৩. ঠান্ডা দুধ পান করুন

বুকে হঠাৎ জ্বালাপোড়া শুরু হলে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করতে পারেন। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। তবে যাদের দুধে সমস্যা আছে, তাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও যাদের দুধ খেলে গ্যাসের সমস্যা হয় তারা এড়িয়ে চলুন।

৪. কলা খান

কলা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি করে পাকা কলা খেলে গ্যাস্ট্রিক দূর করার খাবার হিসেবে ভালো ফল পাবেন। এর দামও কম। 

আরও পড়ুন: কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কলা খাওয়ার নিয়ম

জীবনযাত্রায় আনুন কিছু সহজ পরিবর্তন

শুধু ঘরোয়া উপায় নয়, চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হলো জীবনযাত্রায় কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যোগ করা। কিছু সঠিক নিয়ম কারণ মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

খাবারের সঠিক নিয়ম মেনে চলুন

  • একবারে অনেক বেশি খাবার না খেয়ে অল্প পরিমাণে বারবার খান।
  • খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান। এতে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
  • রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে খেয়ে ফেলুন।
  • খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন।

কী খাবেন এবং কী এড়িয়ে চলবেন?

  • যেসব খাবার খাবেন: ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন: শাকসবজি, ডাল, ওটস ইত্যাদি খান। পাকা পেঁপে, আপেল, শসা ইত্যাদি ফল ও সবজি হজমের জন্য বেশ উপকারী।
  • যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন: অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার কম খান। কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। চা কফি অ্যালকোহল পরিহার করুন।

পর্যাপ্ত পানি ও ব্যায়াম

সারাদিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। এছাড়া, প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজের পরে একটু হাটাহাটি করুন। এটি শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী।

হাঁটার অভ্যাস

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

ঘরোয়া উপায় বা সাধারণ পরিবর্তনেও যদি আপনার সমস্যা না কমে এবং গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার উপায় খুঁজে না পান, তবে অবহেলা করবেন না। যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয় তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

  • তীব্র ও অসহ্য পেটে ব্যথা।
  • বমির সাথে রক্ত যাওয়া।
  • দ্রুত ওজন কমে যাওয়া।
  • খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া।

যদি তীব্র ব্যথা অনুভব করেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোন মেডিসিন সেবন করবেন না। চিকিৎসক আপনার সমস্যার কারণ নির্ণয় করে সঠিক পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ বা পরামর্শ দিতে পারবেন।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে অতিরিক্ত তেল – মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং অতিরিক্ত টক জাতীয় ফল (যেমন- লেবু, কমলা) খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।

গ্যাস্ট্রিকের তাৎক্ষণিক সমাধান কী?

এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ, আদা চা অথবা জিরা পানি পান করলে তাৎক্ষণিকভাবে আরাম পাওয়া যেতে পারে।

সকালে খালি পেটে কি খেলে গ্যাস কমে?

সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি, জিরা ভেজানো পানি অথবা ইসবগুলের ভুসি খেলে গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

কি ফল খেলে গ্যাস কমে?

পাকা কলা, পাকা পেঁপে, আপেল এবং তরমুজের মতো ফলগুলো গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।

দুধ খেলে কি গ্যাসের সমস্যা হয়?

অনেকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (lactose intolerance) থাকে যার কারণে দুধ খেলে গ্যাস হতে পারে। তবে ঠান্ডা দুধ অনেকের ক্ষেত্রে অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কারণ সবার হজম শক্তি এক নয়।

শেষ কথা

আশা করি আপনারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায় নিয়ে ভালো একটা গাইডলাইন পেয়েছেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে একটু সচেতন হলেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই হলো গ্যাস থেকে মুক্তির সেরা উপায়। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হন। নিজের শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *