করলা চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা বিস্তারিত
চাষাবাদ করার জন্য যা জানা দরকার
মাটির বৈশিষ্ট্য
আপনি যে কোন ফসল চাষ করেন না কেন জমির মাটির উপর নির্ভর করে অধিক ফলন। আমরা জানি করলা সব মাটিতেই চাষ করা যায় তবে বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করা উত্তম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় করলা বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো অঙ্কুরোদগম হয় এবং গাছের বৃদ্ধি পায়।
আপনার জমির মাটি যদি অনেক ভাল হয় তাহলে অধিক ফলন পাবেন। করলা চাষের জন্য আপনাকে উঁচু এবং সমতল বিশিষ্ট জমি হলে ভালো হয় যাতে পানি না জমে। এবং যে জমিতে সারাদিন রোদের আলো পায় সেসকল জমি বাছাই করা উচিত করলা চাষের জন্য।
জলবায়ু
বাংলাদেশের শুষ্ক ও আর্দ্র উভয়ই জলবায়ুতে করলা চাষ করা যায়। তবে শীতের দুই মাস এই সময় চাষ না করাই ভালো কারণ শীতের মধ্যে করোলা চাষ ভাল হয় না। অত্যাধিক শীতের কারণে গাছের উর্বরতা কমে যায় গাছের পাতা কোঁকড়া ধরে যায় ফলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়াও জ্যৈষ্ঠ মাসে চাষ না করাই ভালো এই মাসে বৃষ্টিপাত বেশি হয় অধিক বৃষ্টিপাতে ফলে করোলা গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই শীত এবং জ্যৈষ্ঠ মাস ব্যতীত বছরের যেকোনো সময় চাষ করতে পারবেন।
জাতের বৈশিষ্ট্য
জাতের উপর নির্ভর করে অধিক ফলন আপনি যদি উন্নত জাত বীজ বপন করেন তাহলেও অধিক ফলন পাবেন করোলা জাতের মধ্যে দুইটি জাত উল্লেখযোগ্যগ্য।
বারি করলা-১
বিএডিসির গজ করলা
এছাড়া বাংলাদেশে আরো করলার বিভিন্ন জাত রয়েছে সিনজেনটা করলা বীজ, লাল তীর করলা বীজ, এ আর মালিক সিডের হাইব্রিড উচ্ছে- মালিক ১০৪, গ্লোরী, রেসার, দূর্বার, রাইডার আপনারা চাইলে এখান থেকে অর্ডার করতে পারবেন।
জীবন কাল
আপনি যদি উন্নত জাতের করলা বীজ বপন করেন তাহলে এর জীবনকাল 90 দিন এর বেশি। উপরে আমি কিছু করলা জাতের নাম বলেছি আপনি যদি এসব জাত বপন করেন তাহলে ৪৫ থেকে ৫০ দিনে ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন। করলার রঙ আকর্ষণীয় গাঢ় সবুজ এরমধ্যে দূর্বার করোলা ভাইরাস সহনশীল জাত।
উৎপাদন মৌসুম:
উৎপাদন মৌসুমে মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে করলা বীজ বপন করা উত্তম। এই সময় আবহাওয়া অনেক ভালো থাকে বৃষ্টিপাত কম হয় গাছের উর্বরতা বৃদ্ধি পায় অধিক ফলন সংগ্রহ করা যায়।
করলা চাষ পদ্ধতি
মালচিং পদ্ধতিতে চাষ
মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা ভালো নিচে মালচিং পেপার ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হল:
আশা করি আপনারা বীজ সংগ্রহ করেছেন এবং মালচিং পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে খরচ বেশি হলেও তবে আমি সুপারিশ করি মালচিং পেপার ব্যবহার করতে।
বীজ অঙ্কুরোদগম
আপনি বাজার থেকে যে জাতের বীজ ক্রয় করেন না কেন প্রথমে বীজগুলো অল্প রোদের তাপ দিয়ে নিবেন তারপর বীজগুলো 24 ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। তারপর ভেজা বীজগুলো একটি সুতি কাপড়ে 1 দিন বেঁধে রাখবেন যাতে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। তারপর জমির মাটি ভালোভাবে চাষ করে বীজগুলো বপন করবেন আশা করি প্রত্যেকটা বীজ অঙ্কুরোদগম ভালো হবে।
জমি বাছাই এবং মাটি তৈরি
আপনারা উঁচু এবং সমতল জমি বাছাই করবেন যাতে জলাবদ্ধতা না হয় এবং বেলে দোআঁশ মাটি হয় একসপ্তাহ আগে গোবর সার, টিএসপি, এবং পটাশ ছিটাতে হবে ট্রাক্টর দিয়ে ভালোভাবে মাটি ওলট পালট করার আগে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : তারপর জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করা যাবে না তা পরিহার করতে হবে এতে করে ফসলে রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ কম হবে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ
সারের নাম | মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) | জমি ও মাদা তৈরির সময় দেয় (শতাংশ প্রতি) | চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে | চারা রোপনের ২০ দিন পর | চারা রোপনের ৪০ দিন পর | চারা রোপনের ৬০ দিন পর |
---|---|---|---|---|---|---|
পঁচা গোবর | ২০ টন | ৮০ কেজি | ৪কেজি | – | – | – |
ইউরিয়া | ১৫০ কেজি | ৭০০ গ্রাম | – | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | ১৫ গ্রাম |
টিএসপি | ১৭৫ কেজি | ৭০০ গ্রাম | ৩০ গ্রাম | – | ||
এমওপি | ১৫০ কেজি | ৬০০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | ১৫ গ্রাম | – | – |
জিপসাম | ১০০ কেজি | ৪০০ গ্রাম | – | – | – | – |
দস্তা সার | ১২.৫ কেজি | ৫০ গ্রাম | – | – | – | – |
বোরাক্স | ৮ কেজি | ৪০ গ্রাম | – | – | – | – |
ম্যাগনোসিয়াম অক্সাইড | ১০ কেজি | ৫০ গ্রাম | ৪ গ্রাম | – | – | – |
বীজ বপন এবং দূরত্ব
অনেকেই আছেন কতটুকু দূরত্ব বীজ বপন করবেন জানেন না। তাই নির্দিষ্ট পরিমান দূরত্বে বীজ বপন না করার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন অত্যাধিক পরিমাণে গাছের বৃদ্ধি, গাছের আলো-বাতাস কম পাওয়া, সঠিক আলো-বাতাস কম পাওয়ার কারণে গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া। আপনাদের জানা উচিত কতটুক দূরত্ব বীজ বপন করতে হয়।
করলা চাষের জন্য মাচা তৈরি
সঠিকভাবে যদি মাটি তৈরি এবং পরিমাণমতো স্যার প্রয়োগ করেন তাহলে বীজ বপনের 20 দিন পর মাচা তৈরি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকেরা বিভিন্নভাবে মাচা তৈরি করে থাকে আপনি যদি আধুনিক পদ্ধতিতে মাচা তৈরি করেন তাহলে অধিক ফলন পাবেন।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাচা তৈরি করতে চান তারা A প্যাটার্নের মাচা তৈরি করতে পারেন। আপনি যদি শসা, করোলা, ঝিঙ্গা এগুলা চাষ করতে চান তাহলে A প্যাটার্নের মাচা তৈরি করার জন্য 7 ফিট লম্বা খুঁটি ব্যবহার করতে হবে। A প্যাটার্নের মাচা তৈরি করার ফলে গাছের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়, আলো-বাতাস ঠিকমতো পায়, পরিচর্যা করা সহজ হয়। যার ফলে গাছের রোগবালাই ও পোকামাকড় দূর করার জন্য কীটনাশক ভালোভাবে স্প্রে করা যায়।
করলা গাছের পরিচর্যা
সঠিকভাবে গাছ পরিচর্যা করার ফলে অধিক ফলন, গাছের জীবন কাল বৃদ্ধি পায় নিচের এই নিয়ম কারণ গুলো ফলো করেন:
সেচ ব্যবস্থা
যে জলবায়ুতে করলা চাষ করা হয় সে সময় অত্যাধিক খরার ফলে জমির মাটি শুকিয়ে যায় সেজন্য সেচ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আপনার জমিতে পানির অভাবে যদি মাটির উর্বরতা কমে যায় তাহলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফুল ফল ঝরে যায়, পরবর্তীতে গাছের জীবনকাল কমে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় জৈষ্ঠ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় এই সময় সেচ ব্যবস্থা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আরো একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় জানি অত্যাধিক পানি না জমে কারণ করোলা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না এবং অধিক পানির কারণে গাছের গোড়া পচন ধরতে পারে।
রোগবালাই দমন
আপনি যেই ফসল চাষ করেন না কেন কোন না কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গাছের চারা থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত বিভিন্ন রোগবালাই আক্রমণ করে থাকে। এই রোগ বালাই দূর করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এবং কোন সংক্রমণের ক্ষেত্রে কি ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে তা সঠিকভাবে জানতে হবে এবং রোগ নির্ণয় করতে হবে।
করলার মাছি পোকা