কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম (শিশু ও বড়দের জন্য)

হঠাৎ পেটের ভেতর অস্বস্তি? বাচ্চার খিদে কমে গেছে? প্রায়ই পেট ব্যথা করছে? এই সমস্যাগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এক সাধারণ কারণ – কৃমি। আমাদের দেশে কৃমির সংক্রমণ খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। মাঝে মধ্যে ছোট বড় সবারই পেটে কৃমির লক্ষণ দেখা দেয়। তবে জেনে রাখা ভালো যে সঠিক নিয়মে কৃমির ঔষধ খেলে খুব সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কিন্তু অনেকেই জানেন না, কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম আসলে কী। কখন খাবেন, কয়টা খাবেন, বা বাচ্চাদের জন্য নিয়মটা কেমন হবে – এসব নিয়ে মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। তাহলে কিভাবে কৃমির ওষুধ খেতে হবে এই সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই।
কৃমির ঔষধ কখন ও কিভাবে খাবেন?
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সঠিক সময়ে ঔষধ না খেলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
কৃমির ট্যাবলেট কখন খেতে হয়?
চিকিৎসকেরা সাধারণত রাতের বেলা খাবার খাওয়ার পর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে ঔষধ খেলে এটি সারারাত ধরে কাজ করার সুযোগ পায়। বিশেষ করে ঠান্ডা সময় কৃমির ওষুধ খাওয়া ভালো যেমন রাতে বৃষ্টি হয়েছে ভালো ঠান্ডা পড়েছে এমন সময় কি ওষুধ খেয়ে নিন।
খালি পেটে নাকি ভরা পেটে
একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম খালি পেটে কি? উত্তর হলো – না। খালি পেটে কৃমির ঔষধ খেলে অনেকের বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে। তাই হালকা কিছু খাওয়ার পর কৃমির ঔষধ খাওয়া সবচেয়ে ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সে যখন খেতে বলে সেই সময় কৃমির ঔষধ ওষুধ খেয়ে নিবেন।
কৃমির ট্যাবলেট কয়টা খেতে হয়?
আমরা অনেকেই জানিনা কৃমির ট্যাবলেট কয়টা খেতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যেমন অ্যালবেনডাজল (Albendazole) গ্রুপের ঔষধের একটি ট্যাবলেটই যথেষ্ট। তবে, সংক্রমণের ধরন ও তীব্রতা বুঝে ডাক্তার আপনাকে দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন যা সাধারণত ২ সপ্তাহ পর খেতে হয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ সেবন করুন অযথা নিজে নিজেই ওষুধ সেবন করবেন না।
কৃমির সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?
ফার্মেসিতে বিভিন্ন নামের কৃমির ঔষধ পাওয়া যায়। যেমন ট্যাবলেট ও সিরাপ। কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো বা কৃমির সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি? – এটি নির্ভর করে আপনার বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী। চিকিৎসকেরা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সিরাপ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ট্যাবলেট দিয়ে থাকে।
সাধারণত, অ্যালবেনডাজল (Albendazole) বা মেবেনডাজল (Mebendazole) গ্রুপের ঔষধগুলো বেশ কার্যকর। তবে যেকোনো ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের সাথে কথা বলে নিন। আপনার বয়স অনুযায়ী
তিনিই আপনার জন্য সঠিক ঔষধটি বেছে দেবেন।
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম একটু ভিন্ন। তাদের বয়স অনুযায়ী সঠিক মাত্রা ও ঔষধ বেছে নেওয়া জরুরি। তাই বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে খাওয়াবেন নিজে নিজে খাওয়াবেন না।

১ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের কৃমির ঔষধ দেওয়া হয় না। যদি খুব প্রয়োজন হয়, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে দিতে হবে।
২ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
২ বছর বা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডাক্তাররা সাধারণত সিরাপ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কৃমির ঔষধের নাম সিরাপ হিসেবে অ্যালবেনডাজল বেশ পরিচিত। সিরাপের পুরো বোতলটিই একটি ডোজ হিসেবে খাওয়ানো হয়।
৩ ও ৫ বছরের বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
এদের ক্ষেত্রেও সিরাপই সবচেয়ে সহজ উপায়। তবে শিশু ট্যাবলেট চিবিয়ে খেতে পারলে ডাক্তার ট্যাবলেটের পরামর্শও দিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, বাচ্চার বয়স যা-ই হোক না কেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তাকে কোনো ঔষধ নিজে নিজে খাওয়াবেন না।
গুড়া কৃমি দূর করার উপায় কী?
গুড়া কৃমি (Pinworm) শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর প্রধান লক্ষণ হলো মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি, বিশেষ করে রাতের বেলা হয়।
গুড়া কৃমি দূর করার ঔষধ
গুড়া কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সাধারণ কৃমির ঔষধের মতোই। ডাক্তার আপনাকে সঠিক ঔষধ ও তার মাত্রা বলে দেবেন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঔষধের পাশাপাশি কিছু নিয়ম মানা খুব জরুরি। যেমন:
- নিয়মিত গরম পানি দিয়ে বাচ্চার ও পরিবারের সকলের কাপড়, তোয়ালে ও বিছানার চাদর ধোয়া।
- বাচ্চার নখ ছোট রাখা।
- বিশেষ করে সবাইকে খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করানো।

সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ)
কৃমির ঔষধ কতদিন পর পর খেতে হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৬ মাস পর পর পরিবারের সকলের এক সাথে কৃমির ঔষধ খাওয়া উচিত। তবে আপনার এলাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি ও ডাক্তারের পরামর্শই চূড়ান্ত।
কি খেলে গুড়া কৃমি দূর হয়?
শুধুমাত্র খাবার খেয়ে কৃমি দূর করা কঠিন। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া এবং পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন থাকাটা জরুরি। কৃমি দূর করার মূল উপায় হলো সঠিক ঔষধ খাওয়া।
শেষ কথা
কৃমি একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে ঔষধ খেলে এবং কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আপনি ও আপনার পরিবার সহজেই কৃমিমুক্ত থাকতে পারেন।
মনে রাখবেন, এই লেখাটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। যেকোনো ঔষধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং কন্টেনটি শেয়ার করুন।