বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক করনীয়
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। গতবছর ডেঙ্গু জ্বরে মোট আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৬২ হাজারের মতো। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১ লাখ ২১ হাজারের মতো এবং মৃত্যুহার টা দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছরে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা একটু বেশি।
ডেঙ্গু জ্বরে মাল্টি অর্গান এফেক্টেড হওয়ার কারণ কী ?
এ বছর বেশিরভাগ রোগীদের একটাই কমপ্লেইন থাকে যে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যাথা, অথবা শরীর ব্যথা। কিন্তু এ বছর রোগীদের শুরুতেই শখ সিনড্রোম ও মাল্টি অর্গান এফেক্টেড হচ্ছে যেমন ব্রেন, লিভার, কিডনি, পাশাপাশি ডায়রিয়া টা প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে। এসব লক্ষণ নিয়ে রোগীরা খুব দ্রুত হাসপাতালে চলে আসছে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন: আগে প্লাটিলেট যেটা ছিল রক্ত কণিকা সেটা জ্বর কমার সময় সাধারণত কম থাকতো। কিন্তু এই বছর দেখা যাচ্ছে শুরুতেই প্লাটিলেট খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে রোগীদের মধ্যে একটা পেনিক তৈরি হচ্ছে। এ কারণে তারা খুব দ্রুত ডক্টরের শরণাপন্ন হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং উপসর্গ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং উপসর্গ গুলো সময়ের উপর কিছুটা নির্ভরশীল যেমন:
- প্রথম দিনেই রোগীর খুব বেশি পরিমাণে জ্বর চলে আসবে।
- তার সাথে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যাথা থাকতে পারে।
- পেটে ব্যথা থাকতে পারে, কারো কারো বমি, বমি বমি ভাব, অনেক বেশি দুর্বলতা।
লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে ডেঙ্গু রোগীকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়
ক্যাটাগরি এ: জ্বর, তার সাথে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যাথা, পেটে ব্যথা, কারো কারো ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, অনেক বেশি দুর্বলতা এরা ক্যাটাগরি এ বিভক্ত।
ক্যাটাগরি বি: যাদের কিছু বিপদজনক চিহ্ন রয়েছে যেমন:
- তীব্র পেটে ব্যথা।
- ২৪ ঘন্টায় তিনবারের বেশি যদি বমি হয়ে থাকে।
- পাতলা পায়খানা ২৪ ঘন্টায় তিন বারের বেশি যদি হয়ে থাকে।
- পেটে হাত দিলে বা চাপ দিলে রোগীরা যদি ব্যথা অনুভব করে থাকে।
জ্বর আছে ডেঙ্গু কনফার্ম সাথে যদি High-risk পেশেন্ট যেমন খুব অল্প বয়স এক বছরের কম, বৃদ্ধ বয়স, বা কারো যদি আন কন্ট্রোল হাইপারটেনশন থাকে, আন কন্ট্রোল ডায়াবেটিস থাকে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগ যেমন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ক্রনিক লিভার ডিজিজ, বা ক্যান্সার পেসেন্ট যারা কেমোথেরাপি পাচ্ছেন বা কোন কারণে স্টেরয়েড পাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে ক্যাটাগরি বি বিরক্ত করা হয়।
ক্যাটাগরি সি: যারা শুরুতেই অনেক পরিমাণে ব্লেডিং নিয়ে আসতেছে, লিভারে পানি নিয়ে আসছে, ফুসফুসে সমস্যা শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এরা ক্যাটাগরি সি এ বিভক্ত।
ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম আসলে কি ?
শক সিনড্রোম হল:
- যখন একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত লোক শখে চলে যায় শখে চলে যাওয়ার মানে হচ্ছে তার পালস খুব দুর্বল থাকবে
- তার হাতের তালু এবং পায়ের তালু খুব ঠান্ডা থাকবে।
- তার ব্লাড প্রেসার মেজার করতে পারবো না।
- রোগী প্রায় অজ্ঞানের মত থাকবে।
- কিছুই খেতে পারবে না।
এসব লক্ষণ মেনেজারমেন্ট করে বোঝা যাবে যে রোগীটা শখ সিনড্রোম এ আছে।
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু কিভাবে ছড়াচ্ছে ?
ডেঙ্গু একটা ভাইরাস জনিত রোগ এটা সাধারণত ফিমেল এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। যদি কোন ফিমেল এডিস মশা কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামরায় তারপর মশাটা নিজে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হতে সময় লাগে সাধারণত তিন থেকে দশ দিন। যদি সেই ইনফেক্টেড মশাটা অন্য একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে তিন থেকে দশ দিন পর ওই সুস্থ লোকের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তাৎক্ষণিক করনীয় কি এবং কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
বর্তমান সময়ে জ্বর আসলেই তৎক্ষণাৎ রোগীর ডেঙ্গু টেস্ট টা বাসায় করতে হবে। টেস্ট করে আমরা যদি বিপদজনক চিহ্ন দেখি তাহলে আমরা ডক্টরের শরণাপন্ন হতে হবে। অথবা যদি কোন রোগী একদমই খেতে পারছে না, সব সময় তার বমি হচ্ছে, খুব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তখন সে দ্রুত হাসপাতালে চলে যাবে। যাদের বয়স কম বা বৃদ্ধ দীর্ঘ দীর্ঘমেয়াদি যদি কোন রোগ থাকে তারা সরাসরি হাসপাতালে চলে যাবে।
ডা: সুমন বণিক। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।