কামরাঙ্গা ফলটি দেখতে খুবই সুন্দর টক মিষ্টি জাতীয় একটি ফল। কামরাঙ্গার কথা শুনলেই জিভে জল এসে যায়। বাড়ির আনাচে কানাচে গাছে কামরাঙ্গা ধরে। কামরাঙ্গা ফলটি সহজলভ্য ও অতি সহজেই পাওয়া যায় । কামরাঙ্গা খেতে টক মিষ্টি। এজন্য অনেকেই কামরাঙ্গা ফল পছন্দ করে। লবণ, মরিচ, পেয়াজ, ধনিয়া পাতা,  বেটে কামরাঙ্গা খাওয়ার মজাই আলাদা। কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এছাড়া কামরাঙ্গা খেলে যে বিপদগুলো হতে পারে তা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আজকের আর্টিকেলে আমরা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব–

কামরাঙ্গার পুষ্টি উপাদান 

কামরাঙ্গায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। তাহলে জেনে নেয়া যাক কামরাঙ্গায় কি কি পুষ্টি উপাদান কত পরিমাণে আছে। প্রতি 100 গ্রাম সমপরিমাণ কামরাঙ্গার পুষ্টি উপাদানের পরিমান –

  • শক্তি ১২৮ কিলোজুল
  • শর্করা ৬.৭৩ গ্রাম 
  • চিনি ৩.৯৮ গ্রাম 
  • ফাইবার ২.৮ গ্রাম 
  • স্নেহ ০.৩৩ গ্রাম 
  • প্রোটিন ১.০৪ গ্রাম
  • প্যানটোথেনিক এসিড ০.৩৯ গ্রাম
  • ফোলেট ১২ মাইক্রগ্রাম 
  • ভিটামিন সি ৩৪ দশমিক চার মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ১৩৩ মিলিগ্রাম 
  • জিংক ০.১২ মিলিগ্রাম 

কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা কি?

কামরাঙ্গার মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে। পাকা কামরাঙ্গা দেখতে অনেক সুন্দর হলুদ বর্ণের আকর্ষণীয় একটি ফল। কামরাঙ্গা রসে ভরপুর ও বহুগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। আমরা প্রায়ই কামরাঙ্গা খাই কিন্তু এর উপকার সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। চলুন জেনে নেই কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি –

ত্বক সুন্দর রাখে 

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কামরাঙ্গা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কামরাঙ্গা একটি অতি প্রয়োজনীয় ফল। যা আমাদের ত্বক করে উজ্জ্বল ও মসৃণ। কামরাঙ্গার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়া আছে ফোলেট ও প্যান্থটেনিক এসিড। ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন সি ত্বক পরিষ্কার রাখতে, ত্বকের কালো দাগ, ত্বকের ব্রণ, বলিরেখা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক  করে উজ্জ্বল ও মসৃণ । ত্বকের কোমলতা বজায় থাকে। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কামরাঙ্গা বেশ উপকারী। আপনি কি হজমের সমস্যায় ভুগছেন? যদি তাই হয় তাহলে কামরাঙ্গা খান। কামরাঙ্গার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আছে। তাই খাবার খেলে খাবার সহজে হজমের সাহায্য করে এবং মুখের রুচি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এছাড়া কামরাঙ্গার ভর্তা ও কামরাঙ্গার পাতা দেহের বিভিন্ন উপকারে আসে। 

ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করে 

একটি দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করা। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো না হলে সেই দেহ দিনের পর দিন নানা রকম অসুস্থতায় ভুগতে থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত কামরাঙ্গা খাওয়া যায়। কামরাঙ্গায় আছে বিভিন্ন পুষ্টি  উপাদানের সমাহার। একটি ফলের মাধ্যমে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান  শরীরে প্রবেশ করানো যায়। উপকারী এই ফলটিকে অবহেলা না করে নিয়মিত আমাদের খাওয়া উচিত। 

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি 

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কি যে যন্ত্রণাদায়ক, সেটা সেই বোঝে যার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আছে। এই মুহূর্তে নিশ্চয়ই ভাবছেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান পেলে মন্দ হয় না! সাধারণ এই ফলটির অসাধারণ গুন হল এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় বুলেটের মতো কাজ করে। কামরাঙ্গায় আছে ভিটামিন সি, ফাইবার, প্রোটিন, পটাশিয়াম, জিংক ও অন্যান্য উপাদান। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় সমাধান দেয়। 

ক্যান্সার থেকে বাঁচায় 

ক্যান্সার সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনারা ভাল মতো জানেন যে ক্যান্সার কতটা ভয়ংকর রোগ। ক্যান্সার হলে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করুন। রসে ভরপুর এ-ই কামরাঙ্গা ফলে থাকে অ্যালজিক নামক এসিড। যা খাদ্যনালী বা অন্ত্রে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন প্রতিরোধ করে। কারণ কোষের বিভাজন যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় তখনই ক্যান্সার শুরু হতে থাকে। এই এলজিন এসিড এর কারণে খাদ্যনালী বা অন্তরের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। 

কৃমি থেকে মুক্তি 

কৃমির সমস্যায় ভুগছেন? মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার কারণ হচ্ছে পেটে কৃমির আবির্ভাব।কৃমি দূর করার জন্য কামরাঙ্গা ফল খেতে পারেন। কামরাঙ্গা ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। দেহে কৃমির প্রভাব বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতার মুখোমুখি হতে হয় 

দুর্বলতা ও ক্লান্তি রোধ করে 

কামরাঙ্গার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম পেশীকে শক্তিশালী রাখলে সাহায্য করে। পেশির দুর্বলতা রোধ করে। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে পেশির ক্র‍্যাম্প বা খিচুনি হয়। পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহের মাত্রা কমে যায়। কামরাঙ্গা খেলে কামরাঙ্গার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম দেহের এই সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খান সুস্থ স্বাভাবিক থাকুন। 

গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খেলে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। কামরাঙ্গায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি নাইন বা ফলিক এসিড পাওয়া যায় যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচায়। কামরাঙ্গার মধ্যে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি হওয়ায় কামরাঙ্গা খেতে হবে। কারণ গর্ব অবস্থায় ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজনীয় 

কামরাঙ্গা পাতার উপকারিতা 

কামরাঙ্গা বহু পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি ফল। এছাড়া কামরাঙ্গার পাতা ও কচি ফলে রয়েছে নানান উপকারিতা। কামরাঙ্গার কচি ফলের রস ও পাতার মধ্যে পাওয়া যায় ট্যানিক এসিড। যাদের রক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্য করে থাকে। এছাড়া মুখের রুচি বৃদ্ধিতে কামরাঙ্গার ভর্তা খেতে পারেন। হজম শক্তিও বেড়ে যাবে এবং ঠান্ডা জনিত সমস্যার সমাধান হবে। 

কামরাঙ্গা খাওয়ার অপকারিতা কি? 

  • অতিরিক্ত পরিমাণে কামরাঙ্গা খেলে বদহজম হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কামরাঙ্গা খেলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মত মারাত্মক দুর্ঘটনা করতে পারে। কারন কামরাঙ্গায় থাকে অক্সালিক এসিড। দীর্ঘদিন যখন অতিরিক্ত পরিমাণে কামরাঙ্গা খাওয়া হয় তখন ঐ অক্সালিক  এসিড বৃদ্ধি পেতে পেতে নেফ্রোপ্যাথিতে পরিণত হয় এবং কিডনি বিকল করে দেয়। 
  • কারো যদি কিডনির রোগ থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি যদি সামান্য পরিমাণে কামরাঙ্গা খায় তাহলে সেই সামান্য পরিমাণের ফলেও কিডনি বিকল হতে পারে। 
  • কামরাঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান ক্যারাম্বক্সিন উপাদানের কারনে কিডনি রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং কিডনি ফেইলর হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। 

কামরাঙ্গা কোন এসিড?

কামরাঙ্গায়  এসকরবিক এসিড থাকে। এছাড়া কামরাঙ্গার মধ্যে অক্সালিক এসিড, ক্যারাম্বক্সিন এসিড থাকে। 

গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়া যাবে কি? 

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের খাবার স্বাভাবিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। স্বাভাবিকের থেকে বেশি খেলে সমস্যা হবেই। গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়া যাবে তবে পরিমাণ মতো খেতে হবে। পরিমাণের অধিক খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

ডায়াবেটিস রোগী কামরাঙ্গা খেতে পারবে কিনা? 

হ্যা, ডায়াবেটিস রোগী কামরাঙ্গা খেতে পারবে। কামরাঙ্গা খেলে ডায়াবেটিস রোগীর অনেক উপকার হয়। কামরাঙ্গার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আন্টি অক্সিডেন্ট, ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

কামরাঙ্গা কি ভিটামিন আছে? 

কামরাঙ্গায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান আছে। এতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, লৌহ, ফসফরাস, শর্করা, শক্তি ইত্যাদি। 

মন্তব্য

এতক্ষণ আমরা  আলোচনা করলাম কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। কামরাঙ্গা খেলে কি কি ক্ষতি হয় সেসব বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও বিভিন্ন ধরনের টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *