লেবুর দ্বিপদী নাম হলো সাইট্রাস লেমন। লেবু মূলত রুটেসি পরিবারের ছোট প্রজাতি এবং গারো সবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। বর্তমানে লেবু অপছন্দকারী ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাড়ির আনাচে কানাচে, জমির আশেপাশ,  বাগানের মধ্যে লেবু গাছ রোপন করা যায় এবং এর উদ্দেশ্য হলো পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করা। প্রাক্তাহিক জীবনে লেবুর ব্যবহার করা হয় মূলত তার রসের জন্য। 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। তো আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্য লেখা। লেবু সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা কর। আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি? 

লেবু খাওয়ার উপকারিতা সমূহ 

লেবু খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা আছে যেমন:

ভিটামিন সি এর অভাব পুরন করে :একটি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ভিটামিন। ভিটামিন সি এর অভাবে মানুষের শরীরে স্কার্ভি রোগ দেখা যায়। কিন্তু নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয় এবং স্কার্ভি রোগের  বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা যায়। 

মুখের রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে: রুচির অভাবে অনেক ভালো জিনিস, ভালো খাবার  আমাদের ভালো লাগে না। ভালো জিনিস মনে হয় তেতো এবং খাবার খেতে বসলে শুরু হয় বিরক্তিকর। এই রুচির সমস্যার সমাধান হতে পারে লেবুর রস নিয়মিত খাওয়া। লেবুর রস মুখে রুচির বাধ্যবাধকতা ভেঙে ফেলে মুখে আনে রুচি। খাবারের সাথে লেবু খেলে খাবার স্বাদে হয় অনন্য। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেরই হজমের সমস্যা আছে। এই ভয়ে আমরা অনেক সময় খাবার বেছে বেছে খাই এবং পেটে খিদা থাকা সত্ত্বেও খাবার অল্প করে খাই। কারণ ভয় একটাই যদি পেটের সমস্যা হয়ে যায়। হজমের সমস্যার একটা কার্যকরী সমাধান হতে পারে লেবুর রস খাওয়া। লেবুর রস  যেমন খাবার  হজম করতে সাহায্য করে তেমনি শরীরে হজম শক্তি  বৃদ্ধি করে। তাই পরিমাণ মতো লেবুর রস খাওয়া উচিত। 

হার্ট সুস্থ রাখে: হাটের সুস্থতায় লেবু বেশ  উপকারী। কারণ লেবুতে ভিটামিন সি পাওয়া যায় এবং ভিটামিন সি আমাদের হার্টের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। হার্টের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়াও হার্টের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। 

কাটা, ছেড়া বা ক্ষতস্থান সারাতে: বিভিন্ন ক্লিনিক, মেডিকেলে ডাক্তাররা অপারেশন করা রোগীদের লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ লেবুর রস কাটা ছেঁড়া বা ক্ষত স্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে বা ভরাট হতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: বর্তমানে প্রায় মানুষের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এর ফলে ঘটে যায় হার্ট অ্যাটাক, প্যারালাইজড এর মত আরো নানা রকম বড় বড় দুর্ঘটনা। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কারণ সাধারণত পটাশিয়ামের অভাব এবং লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাই উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য লেবু বেশ কার্যকর। 

মরণব্যাধি ক্যান্সার কোষ  ধ্বংস হতে সাহায্য করে: ক্যান্সার এমন একটা রোগ যার কোন ওষুধ নেই, নেই কোন কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। আবার যেসব চিকিৎসা আছে তা অতিরিক্ত ব্যয়বহুল এবং মধ্যম আয়ের  মানুষের ক্ষেত্রে যেই সব চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। আবার কেউ যদি চিকিৎসা করেও তারপরও ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ক্যান্সার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল প্রতিরোধ করা। লেবুর রস ক্যান্সার কোষ কে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। নিয়মিত লেবুর রস খেলে ক্যান্সার কোষ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

কিডনির সমস্যা সাহায্য করে: কিডনির একটি বহু প্রচলিত  সমস্যা হলো কিডনিতে পাথর হওয়া। লেবুতে সাইট্রিক এসিড থাকার কারণে কিডনিতে সহজে পাথর হয় না আর যদি পাথর হয়ে যায় তাহলে সেই পাথরকে ভেঙ্গে ফেলে।

গর্ভবতীর সুস্বাস্থ্যে লেবুর উপকারিতা: ডাক্তাররা গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে করে গর্ভবতীর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো তেমনি গর্ভের সন্তানের জন্যও ভালো। গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়ার  প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

লেবু খাওয়ার অপকারিতা 

লেবু খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি? –

  • অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত আয়রন মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। 
  • লেবু খাওয়া ভালো কিন্তু পরিমাণ বেশি হলে দাঁতের এনামেল নষ্ট করে ক্ষয় করতে পারে। 
  • খাবার হজমের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস খেয়ে ফেললে সেটার ফল বিপরীত হয়ে যাবে অর্থাৎ পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • লেবু রস বেশি পরিমাণে পান করলে শরীরে দুর্বলতা আসে। 

এছাড়া মাথাব্যথার সমস্যা, পুষ্টিহীনতার সমস্যা, এসিডিটির কারণে পেটের ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। 

লেবুতে ভিটামিনের পরিমাণ কি? 

একটি ১০০ গ্রাম পাতি লেবু থেকে আপনি ভিটামিন সি পাবেন ৬৩ মিগ্রা., ক্যালসিয়াম পাবেন ৯০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ পাবেন 15 মাইক্রগ্রাম এবং ফসফরাস পাওয়া যায় ২০ মিগ্রা., লৌহ ও ভিটামিন বি যথাক্রমে  ০.৩ মিগ্রা. ও ০.১৫ মিগ্রা.

ভালো লেবুর জাত কি কি ? 

বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের  লেবুর জাত পাওয়া যায়। তার মধ্যে উন্নত মানের কিছু জাত হলো –

  • পাতিলেবু  বা কাগজি লেবু
  • বারি লেবু- ১,২,৩
  • বিনা লেবু ২
  • সীডলেস লেবু 
  • বাউ লেবু ২ ও ৩

এই জাতের লেবু গুলো বাংলাদেশে সারা বছর উৎপাদিত হয়। বর্তমানে লেবু চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হচ্ছে। 

লেবু চাষের সঠিক মৌসুম কি 

বর্তমানে লেবুর যেই পরিমান চাহিদা তাতে লেবু চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া সম্ভব। বর্তমানে খাবার খাবারে,ওষুধ তৈরিতে, রূপচর্চায়, ক্লিনিং এর কাজে লেবুর ব্যাপক ব্যবহার। বাংলাদেশের দিন দিন লেবুর চাষ লাভজনক ব্যবসা হয়েছে।

লেবু চাষের উপযুক্ত সময় : বাংলায় জৈষ্ঠ্য  মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত, ইংরেজিতে মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে লেবু চাষে উপযুক্ত সময়। 

গরম পানি ও লেবুর রসের উপকারিতা কি? 

লেবুর রসের একটা চমৎকার গুণ হলো এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে একগ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের চর্বি কমে যায়। শরীরের চর্বি কমাতে গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন পান করা উচিত। 

লেবু ও মধু খাওয়ার নিয়ম? 

মধুর সাথে লেবুর রস মিশ্রিত করার পর সেই মিশ্রণ পান করলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের হয়ে যায়। এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম পানিতে হাফ(১/২) চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে পান করুন।  এতে শরীর বিশুদ্ধ হয় বা পরিষ্কার হয়। শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অলসতা কমায়। 

লেবু চা খাওয়ার উপকারিতা 

  • রক্তে কোলেস্টোরেলের এর মাত্রা কমায়। 
  • দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ করে। 
  • টনসিলের ব্যথায় আরামদায়ক 
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এর মাত্রা বাড় 
  • গলা পরিষ্কার করে 

লেবুর চামড়া বা ছাল কি খাওয়া যায়? 

লেবুর খোসায় বা ছালে পেকটিন নামক পদার্থের উপস্থিতির কারণে শরীরের ফ্যাট ক্লিয়ার হয়। ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে কারণ লেবুর ছালে থাকে সাইট্রাস বায়ো ফ্লেভোনয়েড। 

ত্বকের ও চুলের যত্নে লেবুর উপকারিতা 

ত্বকের যত্নে লেবু রস গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে। আমাদের ত্বকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ থাকে লেবু রস ব্যবহার করে সহজেই এই কালো দাগ তোলা যায়  এবং লেবুর রসের মাধ্যমে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, ত্বকের তৈলাক্ত ভাব থাকে না। এছাড়া  মাথার ত্বকে বিভিন্ন কারণে ময়লা জমে যায় এবং লেবুর রস মিশ্রিত পানির মাধ্যমে তা পরিষ্কার করা যায়। এছাড়া চুলের বর্ধনেও লেবুর রস উপযোগী। লেবুর খোসায় এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং ক্ষতিকার টক্সিন শরীর থেকে বের করে দেয়। 

দাঁতের যত্নে লেবুর রস এর উপকারিতা 

দাঁতের ময়লা দূর করতে, কালো দাগ দূর করতে, দাঁতের মাড়ির  ব্যথা, মাড়ির রক্ত পড়া এছাড়া দাঁত ঝকঝকে করার জন্য লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। 

পরিষ্কারের কাজে কি ব্যবহৃত হয়? 

পরিষ্কারের কাজে লেবুর রসের ব্যবহার বহুল –

  • থালাবাসন পরিষ্কার করতে লেবুর রস ব্যবহার করা যায় 
  • তৈলাক্ত জিনিস পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা যায় 
  • মুখের দুর্গন্ধ রোধে ব্যবহার 
  • পোশাকে বা কোথাও দাগ লেগে গেলে তা পরিষ্কার করতে ব্যবহার হয় 
  • ফ্রিজ বা মাইক্রোওভেন পরিষ্কারের কাজে 
  • এ ছাড়া আর একটা কমন সমস্যা হলো যে ভাত রান্না করার পর দেখা যায় যে ভাত ঝরঝরে হয় না ভাত নরম হয়ে যাবে বা আঠালো হয়ে এক্ষেত্রে চাল সিদ্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে গরম পানিতে এক চামচ লেবুর রস দিলেই সমস্যা সমাধান। 

মন্তব্য 

আমরা এতক্ষণ লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লেবুর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আপনারা যারা আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন আশা করছি আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন। আরো নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য প্রতিদিন আমাদের পেজটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *