রসুন মুলত একটা সবজি যা এশিয়া মহাদেশে মসলা এবং আয়ুর্বেদীয় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। রসুন অ্যালিসন এসিড,এন্টি অক্সিডেন্ট ও সেলেনিয়াম এ ভরপুর যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং চীনে রসুন আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হত। একে রক্ত পাতলা রাখার ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হত।এছাড়াও  সার্ভিক্যাল ক্যান্সার এর ঔষধ হিসেবে রসুন ব্যবহার করেছেন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস। তাই রসুন একটা অত্যন্ত উপকারী সবজি।রসুন মুলত রান্না এবং কাচা উভয় ভাবেই খাওয়া হয়। তবে এই আর্টিকেলে আমরা জানব কাচা রসুন খাওয়ার উপকারীতা কি?  কাচা রসুন খেলে কি হয়? চলুন জেনে নেয়া যাক কাচা রসুন খাওয়ার উপকারী দিক গুলো…

কাচা রসুন খাওয়ার উপকারী দিক

১.উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

উচ্চ রক্তচাপ এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কাঁচা রসুন অত্যন্ত উপকারী ভুমিকা পালন করে। কাচা রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে পানি খান।  এটি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধের মতোই কাজ করবে।

২.হৃদরোগের ঝুকি কমায়

কাঁচা রসুন এ থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।কারণ কাঁচা রসুন রক্তের ফ্যাট কমায় এবং এলডিএল ও ট্রাই গ্লিসারাইড কমায়।এসব উপাদান হৃদরোগের কারণ হিসেবে কাজ করে।তাই হৃদরোগে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও যারা নিয়মিত কঁাচা রসুন খান তাদের কে অন্যদের তুলনায় বেশি সুস্থ থাকতে দেখা যায়।

৩.ব্লাড কোলেস্টেরল ও এল ডি এল নিয়ন্ত্রণে রাখে

কাঁচা রসুন ব্লাড কোলেস্টেরল ও এল ডি এল নিয়ন্ত্রণে চমৎকার কাজ করে।এমন কি রসুন আপনার শরীরে উপকারী HDL বাড়ায়। তাই কোলেস্টেরল কমাতে প্রতিদিন অন্তত দুই কোয়া কাঁচা রসুন খান।

৪.শরীরের ফ্রী র‍্যাডিকেলস কমায়

প্রতিদিনের পরিবেশ দূষণ ও শরীরে বিপাক ক্রিয়ার ফলে অনেক ফ্রী র‍্যাডিকেলস তৈরি হয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ফ্রী র‍্যাডিকেলস কমাতে কাঁচা রসুন এর জুড়ি নেই।তাই শরীর ফ্রী র‍্যাডিকেলস মুক্ত রাখতে কাঁচা রসুন নিয়মিত খাওয়া উচিৎ। 

৫. ডিমনেশিয়া ও আলঝেইমার্স প্রতিরোধ করে

 রসুনে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা এন্টি অক্সিডেটিভ ডিজিজ এর ঝুকি কমায় এবং একাধিক গবেষণায় এও দেখা গেছে এই কাঁচা রসুন এ থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট আলঝেইমার্স ও ডিমনেশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধ এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬. টেস্টোস্টেরন ও শুক্রাণু বৃদ্ধি তে সহায়তা করে

কাঁচা রসুন পুরুষদের জন্য বিশেষ উপকারী । কাচা রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এলিসিন ও সেলেনিয়াম।এলিসিন যৌনাঙ্গে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ায়।এতে শুক্রাণুর পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতি হয়না। সেলেনিয়াম এক প্রকারএন্টি অক্সিডেন্ট যা পুরুষদের ফার্টিলিটি জনিত সমস্যা গুলো দূর করে। 

৭. নারীদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়

কাঁচা রসুন নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিসরণ বৃদ্ধি করে। এতে নারীদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে ও হাড় সুগঠিত হয়। এছাড়াও কাঁচা রসুন লেড টক্সিসিটি কমাতে সাহায্য করে।

৮. ঠান্ডা ও ফ্লু সংক্রমন থেকে বাঁচায়

কাঁচা রসুন ঠান্ডা এবং ফ্লু ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাঁচা রসুন খেলে কাশি, জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়। 

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কাঁচা রসুনে রয়েছে এলিসিন এসিড যা ক্যান্সার কোষ ধবংস করে।বিশেষ করে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে কাঁচা রসুন বহুল আলোচিত। 

কিভাবে খাবেন কাঁচা রসুন

কাঁচা রসুন খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। যদি খেতে অসুবিধা হয় কোনো ফলের রসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। কিংবা কোনো ভারী খাবারের সাথে যেমন সালাদের সাথে কুচি করে রসুন খেতে পারেন।

কাঁচা রসুন এর কিছু অপকারীতা

যদিওবা কাচা রসুন খাওয়ার উপকারী দিক অনেক বেশি। তবুও কাঁচা রসুন এর কিছু অপকারীতা রয়েছে। সেগুলো হলোঃ 

১. খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া বমি বমি ভাব ও বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে । 

২. অতিরিক্ত রসুন শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।

৩. গর্ভবতী নারীদের জন্য কাঁচা রসুন নিরাপদ নয়।

৪. অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খাওয়া ডায়রিয়া ও মাথা ঘোরানোর কারণ হতে পারে। 

৫. অতিরিক্ত কাঁচা রসুন খাওয়া যকৃতের ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

এসব কারণে অতিরিক্ত কাচা রসুন খাওয়া ঠিক নয়।

পরিশেষে বলব কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারীতা অনেক। তাই সুস্থ্য থাকতে এবং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুকি কমাতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ  কাঁচা রসুন খান। তবে যাদের কাঁচা রসুন খেলে সমস্যা হয় কিংবা এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তারা কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *