গ্রিন টি হলো একটি উপকারী ভেষজ পানীয় যা উৎপন্ন হয় মুলত ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অর্থাৎ চা গাছের পাতা ও কুড়ি থেকে।এই গ্রিন টি এর উৎপত্তি স্থল চিন হলেও এশিয়ার সব দেশেই এই চা জনপ্রিয়।বাংলাদেশের সিলেটে এই চা উৎপন্ন করা হয়। এইটার এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অন্যান্য যে কোন চায়ের থেকে অনেক বেশি। গ্রিন টি বাংলাদেশের ডিটক্স পানীয় হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশী অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ওজন কমাতে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করার জন্য নিয়মিত গ্রিন টি পান করে থাকেন। ওজন কমাতে গ্রিন টি চমৎকার কাজ করে থাকে।

গ্রিন টি তে যেসব ভেষজ উপাদান থাকে

অন্যান্য চায়ের মতো গ্রিন টি ক্ষতিকর নয়। বরং এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ভেষজ উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী । রং চা কিংবা দুধ চায়ের মত গ্রিন টি আমাদের শরীরে জারিত হয় না। যার ফলে এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। গ্রিন টি তে রয়েছে পলিফেনাল এবং ফ্লাভেনয়েড এগুলো অত্যন্ত উচ্চ মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।  এছাড়াও গ্রিন টি ওজন কমানোর জন্য, ত্বকের জন্য এবং চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।  

গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা 

গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। গ্রিন টি ওজন কমাতে খুব দ্রুত কাজ করে। মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে দ্রুত ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে , শরীর ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিকস প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণে ও সহায়তা করে, বিভিন্ন প্রকার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, শরীরের অবসাদ দূর করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । শরীরে থাকা কিছু ক্যান্সার সেল ধ্বংস করে। গ্রিন টি রক্তের ডিএলডি, ট্রাইগলিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরল জমতে দেয় না, রক্তনালীতে এসব ফ্যাট জমলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা পায।  এছাড়া নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। গ্রিনটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি এজিং উপাদান থাকে যা ত্বকের বলিরেখা দূর করে,ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে না দিয়ে  ত্বক কে রাখে তারুণ্যদীপ্ত।

গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

যদিওবা অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ  চা তারপরেও এটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পান করা উচিত নয়। এতে শরীরের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। একইভাবে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে, এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। সারাদিনে দুই কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা যাবে না। ওয়ার্ক আউটের পরে কিং স্ন্যাকস  খাওয়ার সময় এক কাপ করে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে।

গ্রিন টি বানানোর সঠিক পদ্ধতি 

এককাপ ফুটন্ত গরম পানিতে এক চামচ গ্রিন টি যোগ করুন।এরপর তিন মিনিট  ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। চা পাতা পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে রঙ ছাড়লে পছন্দের পাত্রে ঢেলে নিয়ে পান করুন গ্রীন টি। গ্রীন টি এর স্বাদ বাড়াতে সামান্য আদা যোগ করতে পারেন, কিংবা এক চামুচ লেবুর রস যোগ করতে পারেন।এটি চায়ের স্বাদ বাড়িয়ে দেবে বহুগুন। এছাড়াও দাড়চিনি,এলাচ কিংবা পুদিনা পাতাও এই চায়ে যোগ করা যায়।গ্রীন টি তে চিনি এবং দুধ যোগ করা উচিৎ না, এতে চায়ের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। 

গ্রিন টি খাওয়ার পরে যা করবেন না

গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে গ্রিন টি খাবার পরে উপোস করে থাকা ঠিক না। এতে শরীরে টক্সিসিটির  পরিমাণ বাড়ে। ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ডাক্তারের পরামর্শ কিংবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া গ্রিন টি  পান করবেন না । যাদের পেপটিক আলসারের সমস্যা আছে তারা গ্রিন টি পান করবেন না। প্রেগনেন্ট অবস্থায় গ্রিন টি পান করতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শুধুমাত্র গ্রিন টি খেলেই ওজন কমানো যায় এটি একটি প্রচলিত মিথ। এসব কথায় বিশ্বাস করবেন না। ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে গ্রিন টি পান করতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন, পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন কমানোর জন্য দেয়া ডায়েট চার্ট মেনে চলুন।

কয়েকটি বাংলাদেশী গ্রিন টি ব্রান্ড

বাংলাদেশ ও জনপ্রিয় কয়েকটি চা উৎপাদনকারী ব্র্যান্ড রয়েছে। এই ব্র্যান্ডগুলোর গ্রিনটি ও আছে। যা বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এমন কয়েকটি গ্রিন টি ব্র্যান্ড এবং তাদের প্রোডাক্ট প্রাইজ দেয়া হলো:

  • তেতুলিয়া গ্রিন টি -৬৫০ টাকা
  • কাজী এন্ড কাজী টি এর গ্রিন টি ।১ বাক্স ১৫০ টাকা। 

গ্রিন টি যদিও বা একটি খুবই উপকারী ভেষজ চা তারপরেও এই চা নিয়মমাফিক পান করা উচিত। এই চায়ের যেমন উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না, তেমনি এর অতিরিক্ত সেবনের একটি প্রচ্ছন্ন ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। তাই সুস্থ থাকার জন্য নিয়ম মেনে , চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রিন টি পান করুন, সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *