ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায়

সকল নারী ও পুরুষেও চায় যে ঠোঁটের রং গোলাপি হোক। সুন্দর গোলাপী ঠোঁট মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং স্মার্ট আকর্ষণীয় করে তোলে। কিন্তু আমরা স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকার কারণে নিজের ঠোঁটের সৌন্দর্য নিজেরাই হারিয়ে ফেলি। যখন আয়নায় মুখ দেখতে যাই তখন মনে হয় আমার ঠোঁট কালো হল কিভাবে। তখন আমাদের মনে হয় কিভাবে এই ঠোঁটের কালো দাগ দূর করব তাহলে কেন ঠোঁট কালো হয়, ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ, এবং ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় জেনে নিন। 

ঠোঁট কেন কালো হয়। ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ 

সাধারণত ঠোঁট কালো কিছু মানুষের বংশগত কারণে হতে পারে সবার ক্ষেত্রে না কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের কিছু বাজে অভ্যাসের কারণে ঠোঁট কালো হয়ে থাকে। তো, যেসব কারণে ঠোঁট কালো হয় জেনে নিন:

লিপস্টিক: বিশেষ করে মেয়েরা ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে খুব গাঢ় শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করেন। আপনার ঠোঁট হয়তো সুন্দর আছে কিন্তু ঠোঁটের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধির জন্য গাঢ় শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সাইড ইফেক্ট হিসেবে এই লিপস্টিক অনেক দিন ব্যবহারের কারণে আপনার ঠোঁট কালো হয়ে যায়। কারণ সবার ত্বকে সব কিছু খাপ খায় না এই বিষয়টা জেনে রাখাটা জরুরী।  

আর্দ্রতা হারালেও: লিপস্টিক ব্যবহার করলেই যে সবার ঠোঁট কালো হবে এমনটাও নয় জাস্ট সতর্ক থাকা উচিত। অনেক সময় আর্দ্রতা হারালেও ঠোঁট ফেটে যায়, বিবর্ণ ও কালো হয়ে যায় তাই ত্বকের যত্নের পাশাপাশি ঠোঁটেরও সমান যত্ন নেয়া জরুরি।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি: কর্মজীবনে যারা বাহিরে কাজ করেন তাদের বেশিক্ষণ রোদে থাকার কারণে ঠোঁট কালো হয়। 

ধূমপান: ঠোঁট কালো হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। ছেলেদের ক্ষেত্রে কমন একটি সমস্যা হল দীর্ঘদিন ধূমপানের কারণে সিগারেটের নিকোটিন ঠোঁটে প্রবেশ করে ঠোঁটকে বিবর্ণ ও কালো করে তোলে।

চা ও কফি পান: চা ও কফি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও আছে। কারণ দীর্ঘদিন অতিরিক্ত চা ও কফি পান করার কারণে ঠোঁটে হতে পারে কালচে দাগ।

ভিটামিনের অভাবে: শরীরে ভিটামিনের অভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় এবং সেই সাথে সাথে মুখ ও ঠোঁটের উজ্জ্বলতাও নষ্ট হয়ে যায় সে দেখে খেয়াল রাখাটা জরুরী।

এলার্জি ও হরমোনের সমস্যা: যারা এলার্জি এবং হরমোনের সমস্যায় ভুগতেছেন তাদের শারীরিক নানা সমস্যা দেখা যায়। ফলে শরীরে ত্বকের সেই সাথে মুখের-ঠোঁটের সমস্যা হতে পারে যেমন, ঠোঁট ফেটে যাওয়া. ঠোঁটে কালছে দাগ হওয়া. এগুলো এলার্জি এবং হরমোনের  সমস্যায় হতে পারে। তো সে দেখে আমাদের খেয়াল রাখাটা জরুরী এবং এলার্জি নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় এরকম মেডিসিন সেবন করা উচিত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হরমোন বৃদ্ধিতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। 

পানিশূন্যতা: যারা বাহিরে রোদ্রে কাজ করেন তাদের শরীর থেকে অত্যাধিক ঘাম ঝরে ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। পানি শূন্যতার কারণে শরীরের ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই সাথে সাথে ঠোঁট ফেটে যায় এবং কালচে দাগ হয়।  

নিম্নমানের কসমেটিকসের ব্যবহার: অনেকে আছেন যারা নিম্নমানের কসমেটিকস ব্যবহার করেন কিন্তু তাদের ত্বকের সাথে সেটা খাপ খায় না। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় তাই নিম্নমানের কসমেটিকস ব্যবহার করার আগে সেই কসমেটিকস সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। 

ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায়

লেবু ও চিনি: ঠোঁটের যত্নে আপনি লেবু ও চিনির মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। একটি বাটিতে লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে দুই মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখুন এরপর নরম কাপড় দ্বারা হালকাভাবে গোসুন এতে ঠোঁট হবে গোলাপি এবং আকর্ষণীয়।  

লেবু ও মধু: অনেকক্ষণ যাদের রোদে থাকতে হয় তারা লেবুর রসের সাথে মধুর মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন এরপর ভেজা নরম কাপড় দ্বারা মুছে ফেলুন।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার: ঠোঁটের সৌন্দর্য বাড়াতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এক চা চামচ পানিতে এক চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তুলা দিয়ে ঠোঁটে লাগান কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দানকারী উপাদান হিসেবে ভালো কাজ করবে।

ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ঠোঁটে কালো দাগ দূর করতে কিছু সতর্কতা

স্ক্রিন ও ভেনেরিওলজি স্পেশালিস্ট ডক্টর নাতাশা নাসির চৌধুরী বলেন: ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেকেই লিপস্টিক বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ইউজ করেন ঠোঁট-টা একটু সাদা করার জন্য। না বুঝে এই সমস্ত লিপস্টিক দীর্ঘদিন ব্যবহার করার কারণে অল্প বয়সেই ঠোঁটটা কালো হয়ে যায়। অনেকেই প্রশ্ন করেন যে আমরা তো অনেক দামি ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ঠোট কালো হচ্ছে কেন। উত্তর হল লিপস্টিকে যে ইনগ্রেডিয়েন্ট আছে তা আপনার ঠোঁটের ত্বকের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। লিপস্টিকে যে কেমিক্যাল টা থাকে সেটা যদি আপনার ঠোঁটের ত্বকে রিএকশন করে তাহলে আপনার ঠোঁট আস্তে আস্তে কালো হতে থাকবে।

ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যেমন:

  • ঠোঁট কালো হয়ে গেলে হাত দিয়ে ঠোঁটের চামড়া তোলা যাবেনা এবং রাতের বেলা লিপজেল ব্যবহার করতে হবে।
  • অবশ্যই আপনাকে ঠোঁটে নিয়মিত ভ্যাসলিন লাগাতে হবে যাতে ঠোট শুষ্ক না থাকে পাশাপাশি রেগুলার বেসিসে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
  • পানিশূন্যতা আপনার ঠোঁটের আদ্রতা কেড়ে নেয় তাই নিয়ম করে কমপক্ষে আড়াই লিটার বা ৮ থেকে ১০ গ্লাস পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
  • সরাসরি সূর্যের আলো ঠোঁটের স্বাভাবিক রং নষ্ট করে ঠোঁট আদ্রতা হারিয়ে ফেলে যতদূর সম্ভব এটি এড়িয়ে চলুন।  বাহিরে যেতে হলে সূর্যের আলো থেকে ত্বককে সুস্থ রাখতে ভালো মানের সানস্কিন লওশন ব্যবহার করুন। 
  • শরীরে যাতে পুষ্টি এবং ভিটামিনের অভাব না হয় সেজন্য ঠোঁটের যত্নে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রচুর সবুজ শাকসবজি রাখুন।
  • চা-কফি ও অন্যান্য পানীয় আপনার ঠোঁট কালো হওয়ার জন্য দায়ী। তাই দীর্ঘদিন চা-কফি ও অন্যান্য পানি সেবন করলে আপনার ঠোঁট কালচে ভাব হবে এগুলো কম পরিমাণে সেবন করুন।  
  • সুন্দর গোলাপী ঠোঁট একমাত্র ধূমপানের কারণে কালচে দাগ হয়। তাই ধূমপানের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করুন কারণ সিগারেটের নিকোটিন ঠোঁট কালো করার জন্য দায়ী।  
  • নিয়মিত ঠোঁটের পরিচর্চা করলে এবং কিছু অভ্যাস মেনে চললে আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হবে  এবং ঠোঁট গোলাপি কালার হবে।  

ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঔষধ কী?

ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার জন্য সবচেয়ে বেস্ট ওয়ে হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা কালো দাগ দূর করা। কেননা, বিভিন্ন ক্রিম বা মলমে ঠোঁটের ত্বক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে ভালো কিছু ক্রিম আছে যেগুলা একজন স্কিন-স্পেশালিস্ট সাজেস্ট করবে যেগুলো ব্যবহার করলে ঠোটের কালো দাগ দূর হবে তবে বেশিদিন ইউজ না করাই ভালো।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *