ত্বকের সৌন্দর্যহানীতে একটি বড় আতংকের নাম হলো ব্রণ। ব্রণ হলো একধরনের ত্বকের সমস্যা। ব্রণ নানা কারণে হয়ে থাকে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো ত্বকের সেবাম নিসরণের ব্যাঘাত,হরমোন নিসরণে তারতম্য, ত্বক অপরিষ্কার রাখা,ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ,অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া,পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, প্রচন্ড পরিমাণে ঘাম হওয়া,না জেনে বুঝে ভুল প্রসাধনী ব্যবহার ইত্যাদি।আমাদের ত্বকে সেবাসিয়াস নামক গ্রন্থি থাকে, এই গ্রন্থি থেকে সেবাম নামক তেল নিসরন হয়। এটি দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই তেল নিসরণ বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে ত্বকের লোমকুপ বা পোরস গুলো বন্ধ হয়ে গেলে ব্রণ সৃষ্টি হয় । ব্রণ হলে অনেক সময় স্কিনে দাগ পড়ে যায় যা ত্বকের সৌন্দর্য এবং উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়। তাই ব্রণ প্রতিরোধ করতে ত্বকের যত্ন নিতে হবে এবং প্রপার স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে হবে।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় সমুহ

যথাযথ ত্বকের যত্নের মাধ্যমে খুব সহজে ব্রণ এবং এর দাগ দূর করা যায়।তবে নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার হলো স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং ত্বকের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। বাড়ি থেকে রোদে বের হলে সুযোগ পেলেই ত্বক ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বক পরিষ্কার ও তরতাজা থাকবে এবং জীবাণু সংক্রমণ করার সুযোগ পাবেনা। এছাড়া সাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা এবং ঠিকঠাক ঘুমানো ব্রণ প্রতিকারে কার্যকরী। এতে শরীরের হরমোন নিসরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়না তাই ব্রণ ও হয়না।তবে তারপর ও ত্বকে ব্রণ হলে সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে তা দূর করা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রণ দূরীকরণে ১০ টি ঘরোয়া উপায়……….

১. এলোভেরা জেল :
ব্রণ হলে ব্রণের উপরে হালকা এলোভেরা জেলের প্রলেপ দিয়ে ১০ মিনিট পরে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এলোভেরা জেলে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্টস যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
২. মুলতানি মাটি ও মধুর ফেসপ্যাক:
মুলতানি মাটি, মধু ও সামান্য পানি মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন।এই ফেসপ্যাক টি ত্বকে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।ব্রণ কমাতে এর জুড়ি নেই।
৩. কাচঁা হলুদ ও নিম পাতার প্রলেপ :
কাচা হলুদ এবং নিম পাতায় কি পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে তা আমরা সবাই জানি।তাই কিছু কাচা হলুদের সাথে ৫-৬ টি নিমপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে তা ত্বকের ব্রণ আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিন। আধা ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট খুব দ্রুত ব্রণ কমায়
৪.তুলসী পাতার রসের প্রলেপ:
তুলসী গাছ একটি আয়ুর্বেদীয় উদ্ভিদ। এর পাতার রয়েছে ঔষধি গুনাগুন। তুলসীপাতার রসের প্রলেপ ব্রণ দূর করতে অত্যান্ত কার্যকরী। তাই তুলসীপাতার রস করে নিয়ে তা ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর উষ্ম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ব্রণ ভালো হয়ে যাবে।
৫. ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করুন শসার রসঃ
শসা খুব ভালো ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে ত্বকের জন্য। তাই ব্রণ দূর করতে ত্বকে শসার রস লাগান।আপনি চাইলে শসার রস বানিয়ে তা ফ্রিজে জমিয়ে আইসকিউব বানিয়ে রাখতে পারেন। প্রতিদিন শসার আইসকিউব দিয়ে চেহারা ঘষে ধুয়ে ফেলুন এতে ত্বক তেলমুক্ত থাকে ফলে ব্রণ হয়না।

৬. চন্দনগুড়া ও কাচা হলুদ বাটার প্রলেপ

চন্দন কাঠের গুড়া এবং কাচা হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এন্ড এন্টি ফাংগাল উপাদান যা ব্রণ সহ ত্বকের আরও অন্যান্য রোগ দূরীকরণে অত্যান্ত কার্যকরী। তাই ব্রণ হলে চন্দন গুড়ো ও কাচাহলুদ সম পরিমাণ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে চেহারায় লাগান, শুকোনোর পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

৭.লেবুর রস

 ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে লেবুর রসের চাইতে সহজ সমাধান অন্য কোথাও নেই। কয়েক ফোঁটা লেবুর রসই কপালের ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম যদি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করে যেতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাজা লেবুর রস ব্রণের উপরে লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান। সকালে ত্বক ভালো করে ধুয়ে নিন। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া জনিত ব্রণ সমস্যার সমাধান করবে, এছাড়াও লেবু তৈলাক্ততা দূর করতে কার্যকরী বলে ত্বকের তৈলাক্ততা রোধ করার মাধ্যমে ব্রণ হওয়ার সমস্যা সমাধান করবে। তবে আপনার ত্বক লেবুর কারণে অ্যালার্জি প্রবণ হয় তাহলে ব্যবহার না করাই ভালো’।

পরিশেষে ব্রণ যদি অনেক বেশি হয় এবং তা কোনো প্রকার ঘরোয়া উপায় কিংবা প্রসাধনীতে ভালো না হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুতই একজন চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নয়তো চেহারায় দাগ হয়ে যেতে পারে। এতে আপনার চেহারার ত্বকের সৌন্দর্য এবং লাবণ্য হারিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *