বর্তমান সময়ে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে প্রযুক্তি নির্ভর। ঘুম থেকে ওঠার পর শুরু হয় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চলে এই ধারাবাহিকতা। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। ব্যাংকিং সুবিধা এর মধ্যে একটি। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের কাছে হাজির হচ্ছে। তার মধ্যে প্রধান হল মাস্টার কার্ড সার্ভিস। আমরা যারা  মাস্টার কার্ড সম্পর্কে জানি না, মাস্টার কার্ড নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানিনা। আজকের লেখাটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। চলুন তাহলে মাস্টার কার্ড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

মাস্টার কার্ড কি ?

মাস্টার কার্ড হল ডুয়েল কারেন্সিযুক্ত একটি পেমেন্ট প্রসেসর নেটওয়ার্ক। বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় কার্ডের নাম হল মাস্টার কার্ড।সাধারণত ডলার লেনেদেন এর ক্ষেত্রে মাস্টার কার্ড বেশি প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক মাস্টার কার্ড দিয়ে থাকেন। এর জন্য ব্যাংকগুলোকে মাস্টার কার্ড কোম্পানির মেম্বারশিপ হতে হয়। মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো দেশে টাকা লেনদেন করা যায়। আমাদের দেশীয় ব্যাংকগুলো  যে কার্ড দেয় তা দিয়ে শুধুমাত্র দেশের ভিতরে লেনদেন করা যায়। মাস্টার কার্ড ইন্টারন্যাশনাল লেনদেন সুবিধা প্রদান করে। মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে ঘরে বসে যে কোন দেশের ই কমার্স পণ্য কেনা যায়। এছাড়া মাস্টার কার্ড ব্যবহারে আরো অনেক সুযোগ সুবিধা আছে।

মাস্টার কার্ড কত প্রকার 

মাস্টার কার্ড সাধারণত তিন ধরনের –

প্রিপেইড: এই ধরনের মাস্টার কার্ডে আগে থেকে টাকা জমা করে রাখতে হবে। টাকা ডিপোজিট ছাড়া এই কার্ড অচল।প্রিপেইড মাস্টার কার্ড ব্যবহারের জন্য কার্ডে ডিপোজিট টাকা কেটে নেওয়ার পর আপনি প্রিপেইড মাস্টার কার্ডের সুবিধা পাবেন।  এ কার্ড ব্যবহার করে আপনি সকল ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। 

ক্রেডিট মাস্টার কার্ড :এই কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যদি কার্ডে টাকা না থাকে তারপরও কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। ক্রেডিট মাস্টার কার্ডে যত খুশি লোন নেওয়া যায়। ক্রেডিট মাস্টার কার্ড অনেকটা সিমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ধরুন, আপনার সিমে যদি টাকা না থাকে তাহলে আপনি ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিয়ে কথা বলতে পারবেন। পরে আবার সেই ব্যালেন্স পরিশোধ না করা পর্যন্ত আপনি টাকা জমা করতে পারবেন না। এডিট মাস্টার কার্ড ঠিক অনুরূপ। 

ডেভিড মাস্টার কার্ড : এটি হলো স্টান্ডার্ড মাস্টার কার্ড। এই কার্ড দিয়ে আপনি ইচ্ছা মতো লোন গ্রহণ বা লোন পরিশোধ করতে পারবেন না। অগ্রিম খরচ করার জন্য এই কার্ড দিয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ শুধু খরচ করতে পারবেন। এই কার্ড দিয়ে আপনি কোন পরিমান লোন না পেলেও কিছু পরিমাণ অর্থ করতে অগ্রিম পরিশোধ করতে পারবেন। 

মাস্টার কার্ড করার নিয়ম বা মাস্টার কার্ড করতে কি কি লাগে ?

মাস্টার কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলো –

  • জাতীয় পরিচয় পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স 
  • পাসপোর্ট (ডলার লেনদেন করলে প্রয়োজন হবে) 
  • ছবি দুই কপি (পাসপোর্ট সাইজ) 
  • ভেরিফাইড email address 
  • মোবাইল নাম্বার 
  • ব্যাংক একাউন্ট এর কাগজপত্র

এগুলো হলে সহজেই মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করা যায় এবং মাস্টার কার্ড পাওয়া যায়। 

মাস্টার কার্ডের সুবিধা 

মাস্টার কার্ড হলে ইন্টারন্যাশনালি জনপ্রিয় একটা কার্ড। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মাস্টার কার্ডের সুবিধা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি  না।

  • মাস্টার কার্ডের প্রধান সুবিধা হয়েছে এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড আর ইন্টারন্যাশনাল কার্ড হওয়ার কারণে যে কোন দেশের কারেন্সি লেনদেন করা যায়।
  • এক দেশের কারেন্সি আপনি অন্য দেশের কারেন্সিতে রূপান্তর করতে পারবেন। 
  • দেশে বসে মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইট থেকে অন্য দেশের পণ্য কেনাকাটা করা যায় 
  • মাস্টার কার্ড দিয়ে যদি অধিক পরিমাণে লেনদেন করা হয়, তাহলে মাস্টার কার্ড কোম্পানি থেকে বোনাস দেওয়া হয়।

এছাড়া মাস্টার কার্ডের তিনটি প্যাকেজ আছে 

  • স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ : এই প্যাকেজের প্রধান সুবিধা হল, গ্লোবালি সাহায্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ মাস্টার কার্ডে যে হট লাইন নাম্বার আছে সেটাতে কল করে আপনি যেকোন স্থান থেকে সাহায্য পেতে পারেন। মাস্টার কার্ড আইডির দায়ভার শুধুমাত্র তারা বহন করবে। 
  • ওয়ার্ল্ড প্যাকেজ: ওয়ার্ল্ড প্যাকেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় যেমন এয়ারপোর্ট সুবিধ,  বিলাসবহুল হোটেল সুবিধা, ট্রাভেলিং সুবিধা, ট্যুরের সুবিধা, এছাড়া আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। 
  • ওয়ার্ল্ড এলিট প্যাকেজ: ওয়ার্ল্ড এলিট প্যাকেজ ওয়াল্ড প্যাকেজ এর ন্যায় কিছু সুবিধা প্রদান করে। যেমন টিকিটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট, ইন্সুরেন্সের সুবিধা।

অনলাইনের মাধ্যমে কি মাস্টার কার্ড পাওয়া যায় ?

বাংলাদেশের যে ব্যাংকগুলো আছে সেগুলোর মাস্টার কার্ড নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ কম থাকে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে মাস্টার কার্ডের আবেদন করা যায়। তবে পেওনার ইন্টারন্যাশনাল প্রিপেইড অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যায়।

মাস্টার কার্ড করতে কতদিন সময় লাগে ?

মাস্টার কার্ড করতে খুব বেশিদিন সময় লাগে না। আবেদন করার পর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৮ দিন পর মাস্টার কার্ড পেয়ে যাবেন।

মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড এর মধ্যে পার্থক্য 

মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড দুটোই জনপ্রিয়। তবে মাস্টার কার্ড ভিসা কার্ডের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে যেমন, মাস্টার কার্ড  ও ভিসা কার্ড দুটোই আলাদা আলাদা নেটওয়ার্কে কাজ করে। কার্ডগুলো যে কোম্পানির পেমেন্ট নেটওয়ার্ক দ্বারা পরিচালিত হবে শুধুমাত্র সেই নেটওয়ার্কেই কাজ করবে। ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ড একই নেটওয়ার্কের কাজ করে না।

পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড কি ?

পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড হলো একটা পেমেন্ট কার্ড। এটার মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করা যায় এবং সেই টাকা উত্তোলন করা যায়। এ কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে কারেন্সি বা মুদ্রা গ্রহণ করে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক, মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ বা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তোলা যায়।

আমাদের কিছু কথা

আমাদের আর্টিকেলটিতে আমরা মাস্টার কার্ড সম্পর্কে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা মাস্টার কার্ড সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা পেয়েছেন। আরো অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে যদি আপনাদের জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *