বর্তমান প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট হলো সবচেয়ে বড় অবদান এবং আশ্চর্যজনক আবিষ্কার। ইন্টারনেট ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষা, যাতাআত, যোগাযোগ, তথ্য আদান প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা কম বেশি সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। আর এসব কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় অ্যাকাউন্ট। নিত্যদিনের যাবতীয় কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করার জন্য ইন্টারনেটে বিভিন্ন সোশ্যাল একাউন্ট, ব্যাংক একাউন্ট, পার্সোনাল ওয়েবসাইট ইত্যাদি থাকতে হয়। আর এসবের জন্য ইন্টারনেটে আমাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত  তথ্য দিতে করতে হয়। অসাবধানতা ও অসচেতনতার কারণে আমার বিভিন্ন সময় হ্যাকিং এর শিকার হই। জেনে নিন কারন গুলো –

হ্যাকিং হওয়ার ১০ টি কারণ 

১. নরমাল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা 

হ্যাকিং এর শিকার হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে নরমাল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। একাউন্টে যদি আমরা নরমাল কোন পাসওয়ার্ড বা সহজ কোন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি তাহলে হ্যাকার সেটা সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা শুধুমাত্র নিজের নাম  বা মোবাইল নাম্বার বা সহজ কোনো সংখ্যা দিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করি। এক্ষেত্রে হ্যাকার তার আনুমানিক ধারণা থেকে সহজেই হ্যাক করতে পারে। তাই পাসওয়ার্ড হতে হবে ইউনিক। বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, সিম্বল ইত্যাদি ব্যবহার করে ৮ ডিজিটের বেশি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। তাহলে হ্যাকিং থেকে বাচা যাবে। 

২. অজানা ওয়েবসাইটে ক্লিক করা 

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের  সময় হোম পেজে স্ক্রল করতে করতে অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইট সামনে আসে। সেগুলোতে এমন কিছু পিকচার যুক্ত থাকে যা দেখেই আমরা ক্লিক করে ফেলি। আসলে সাইট গুলো হ্যাকিং এর ওয়েবসাইট এরফলে ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যায়। এবং পরবর্তীতে আমরা হ্যাকিং এর ঝুঁকিতে পড়ে যাই। 

৩. যাচাই না করে ব্যাক্তিগত তথ্য দেওয়া 

অনেক সময় আমাদের ইমেইলে বা ফোনে বা কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের লটারি, পুরস্কার, প্রতিযোগিতার এসএমএস আসে। আমরা কোন কিছু না ভেবেই, ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করেই, আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করি। এরফলে যখন আমরা রেজিস্ট্রেশন করি তখন আমাদের নাম, মোবাইল নাম্বার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ইমেইল, ইত্যাদি সবকিছুর তথ্য হ্যাকারের দখলে চলে যায়। এবং পরবর্তীতে আমরা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে পড়ে যাই। বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। 

৪. বিভিন্ন একাউন্টে একই রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা 

মুলত হ্যাকিং হওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয় পাসওয়ার্ড কে। বিভিন্ন একাউন্টের পাসওয়ার্ড একসাথে আমরা মনে রাখতে পারি না। মনে রাখার সুবিধার্থে সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি বা বিভিন্ন একাউন্টে একই রকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি। এই কারণে হ্যাকাররা সহজেই যখন আপনার একটি একাউন্ট দখল করতে পারবে, পরবর্তীতে আরও সহজেই অন্য একাউন্টগুলো হ্যাকিং এর ঝুঁকিতে পড়বে । তাই প্রত্যেক একাউন্টে আলাদা আলাদা ইউনিট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। 

৫. পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখা 

বিভিন্ন সোশ্যাল একাউন্ট, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধার জন্য আমার পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখি। এতে করে সোসাল একাউন্ট, কম্পিউটার,  ল্যাপটপ এ প্রবেশের সময়  বারবার পাসওয়ার্ড দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই সুবিধা ভোগ করার জন্য আমরা হ্যাকিং এ-র ঝুঁকিতে পড়তে পারি। পাসওয়ার্ড সেভ করা থাকলে হ্যাকার সহজেই এক্সেস নিতে পারে। তাই পাসওয়ার্ড সেভ না করা উচিত এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করলে হ্যাকিং থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। 

৬. লোভনীয় অফার 

অনেক সময় আমরা লোভনীয়  নিয়ে কিছু অফারের পাল্লায় পড়ি। 

যেমন –

  • এই লিংকে ক্লিক করে ১ লক্ষ টাকা জিতে নিন, 
  • কংগ্রাচুলেশন আপনার একাউন্টে ১০ হাজার টাকা যুক্ত হয়েছে, 
  • ৫০ জিবি এমবি ফ্রি নিতে ক্লিক করুন। 

এরকম আরো লোভনীয় অফার আমাদের চোখের সামনে পরে। আমরা কোন কিছু আগে পিছে না ভেবেই লিংকগুলোতে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করি। এর ফলে আমাদের সকল ব্যক্তিগত ডাটা হ্যাকারের দখলে চলে যায় এবং আমরা হ্যাকিং এর শিকার হই। 

৭. অপরিচিত ফোন কল

বর্তমানে অপরিচিত ফোন কলের মাধ্যমেও আমরা হ্যাকিং এর শিকার হয়ে থাকি। বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে আমাদেরকে ভুলভাল বোঝায়। আমরা কোন কিছু না ভেবেই তথ্য দিতে থাকি। বিশেষ করে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিকাশ একাউন্ট গ্রাহকরা বেশি হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল দিয়ে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একাউন্ট থেকে হাতিয়ে দিচ্ছে অনেক টাকা। 

৮. যে কেউ হ্যাকিং হতে পারে 

হ্যাকারদের উদ্দেশ্যই থাকে হ্যাকিং করে অর্থ আত্মসাৎ করা। এক্ষেত্রে যে কেউ হ্যাকিং এর শিকার হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন, আপনার বড় বিজনেস নেই, আপনার বড় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, আপনি একজন সাধারণ লোক, আপনি হ্যাকিং এর শিকার হবেন না। এসব ভেবে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে, তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক না হলে আপনিও হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন। 

৯. ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার 

ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কে না চায়। এজন্য অনেক সময় আমরা ফ্রি ওয়াইফাই পেলে সেটা ফোনে কানেক্ট করে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে হ্যাকিং এর ঝুকি অনেক বেশি। ফ্রি ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাকাররা সহজেই কন্ট্রোল করতে পারে। এরফলে ব্যবহারকারীদের ডাটা তাড়া দখলে করে নিতে পারে। 

১০.সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য গোপন না রাখা 

সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে সব ধরনের মানুষের বিচরণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত রাখলে হ্যাকাররা সেইসব তথ্য হারিয়ে নেয়। জন্ম সাল,  ফোন নাম্বার, ইমেইল ইত্যাদি উন্মুক্ত থাকলে হ্যাকাররা তথ্যগুলো হাতিয়ে নিয়ে সহজেই হ্যাকিং করতে পারে এবং প্রতারণামূলক কাজ করতে পারে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *