৫ হাজার টাকায় ব্যবসা

যেকোনো কাজের পাশাপাশি  যদি কোন ছোটখাটো ব্যবসা করা যায় তাহলে কতই না ভালো হয়। প্রথম অবস্থায় যদি ইনভেস্ট কম করা হয় ধীরে ধীরে তা বড় ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়। ব্যবসা করার জন্য প্রথমত আপনার ধৈর্য, পরিশ্রম, মেধা এবং মূলধন প্রয়োজন। ব্যবসা করার মত মন মানসিকতা নিয়ে ধৈর্য ও পরিশ্রম দিয়ে অবশ্যই সে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব হয়। বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে বেশি টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসা করার মতো পরিস্থিতি সবার হয়ে ওঠে না। 

আমার সবাই কম বেশি রোজগার করে থাকি, বর্তমান বাজারে এই রোজগার আমাদের প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারঘাট থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও ব্যবসা করার মত অভিজ্ঞতা না থাকায় মূলধন নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকে ব্যবসা করতে চায় না। কম মূলধনে অনেকে ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করে থাকেন। আজকে সেই ছোট ৫ হাজার টাকায় ব্যবসা নিয়ে কথা বলব। 

৫ হাজার টাকায় যে ব্যবসাগুলো করা যেতে পারে

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন ৫ হজার টাকায় আদো কি ব্যবসা করা যায়?

আমি বলি হ্যা, অবশ্যই ব্যবসা করা যায়। যদি আপনার মূলধন ৫হাজার বা ৫হাজারের কম হয়ে থাকে তাহলে আপনি কয়েকটি ব্যবসা করতে পারেন তা নিয়েই আজকের আলোচনা। ৫ হাজার টাকায় ব্যবসা বর্তমান বাজারে তেমন কিছুই না। বিশ্ববাজারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে মালামালের দামের ঊর্ধ্বগতি। তারপরও কিছু কম টাকায় শুরু করার মত ছোটখাটো ব্যবসা করা সম্ভব। 

১.ফুসকার দোকান

স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে সবার প্রিয় খাবার হচ্ছে ফুচকা। ফুচকার জন্য মানুষ লাইন পর লাইন ধরে বসে থাকে। ফুসকার সাথে লেবুর টক আর একটু ঝাল দিয়ে খেতে ভালোই লাগে প্রায় সবার কাছেই। তাই ছোট বড় সবার কাছেই ফুসকা বেশ জনপ্রিয়। ফুসকার মালামাল তৈরি করতে খুব একটা টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না। ডিম,শসা,কাচা মরিচ, শুকনা মরিচের গুঁড়ো, ডাল আর টক দিয়ে ফুসকা বানানো হয়। ফুসকার ভ্যানে এক প্লেট(৮-১০পিস) ফুসকার মূল্য ৪০-৫০ টাকা নেওয়া হয়। আবার ফাস্টফুডে একপ্লেট ফুসকার দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুসকার চাহিদা হওয়ার কারনে ফুসকার দামও বেশি। কম পুজিতে এটাই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। 

২.চা-পানের দোকান

ব্রিটিশ শাসনের পর থেকে চা বাঙ্গালির বেশ জনপ্রিয় পানীয়। গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটা অলি-গলিতে, গ্রামের প্রতিটা মোড়ের দোকানে কিছু থাকুক আর না থাকুক চা-পান ও সিগারেটের দোকানের দেখতে পাওয়া যায়। রিকশা চালক, ভ্যান চালক, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছোট বড় প্রায় সবাই চায়ের দোকানে গিয়ে বসে আড্ডা দেয়। চায়ের উপকরণ  হিসেবে খুব বেশি কিছু লাগে না যেমন-চা পাতি,আদা,লেবু,চিনি,লবঙ্গ এবং গরম পানির সমন্বয়ে চা তৈরি হয় । তাই কম পুজিতে এই ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় একটা ব্যবসা। কম মুলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করে তা ধীরে ধীরে আরো বড় ব্যবসায় পরিবর্তন করা সম্ভব। 

৩.লন্ড্রির ব্যবসা

আমাদের প্রতিটা দিনই ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায়। কোনো না কোনো কারনেই প্রতিদিন এর অফিসে যাওয়ার শার্ট-প্যান্ট আয়রন করতেই হয়। এত কাজের চাপের মধ্যে এত কম সময়ে কাপড় চোপড় আয়রন করতে একদমি ইচ্ছে করে না। তাই আমরা আমাদের আশেপাশের লন্ড্রি দোকান খুজে থাকি। নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য অল্প সময় আর অল্প টাকার বিনিময়ে কাপড় আয়রন করা যায়। এতে করে যেমন সময় আর শ্রম দুটোই বাচানো সম্ভব। লন্ড্রি ব্যবসার জন্য তেমন কোন মালামাল লাগে না, শুধু একটা ইস্ত্রি আর ছোট একটা দোকান নিয়ে মোড়ে / বাসা বাড়ির সামনে বসলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন আশাকরি। 

৪. সেলাই ব্যবসা

আমারা প্রতি ২-৩ মাস পর পর সবাই কম বেশি নতুন কাপড় চোপড় বানিয়ে থাকি। আর সেলাই করার জন্য আমাদের অবশ্যই দর্জির কাছে যেতে হয়, নিজের জন্য না গেলেও বউ বাচ্চা সহ পরিবারের কারো না কারো জন্য যেতেই হয়। আপনার যদি ব্যবসার বাজেট কম হয়ে থাকে তাহলে কম খরচে শুধু সেলাই মেশিন কিনে নিজের এবং আশেপাশের মানুষের কাপড় চোপড় বানিয়ে দিতে পারেন। এতে করে আপনার যেমন খরচ বাচিয়ে দিবে তেমনি আপনার মানুষের উপকারও করবে। কাপড় চোপড় ছাড়াও আপনি পর্দা সেলাই, ব্যাগ সেলাই করেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

৫. খাবার ডেলিভারি 

আপনি যদি রান্নার হাত ভালো হয়ে থাকে এবং আপনি রান্না করতে খুব ভালোবাসেন তাহলে আপনি খাবার ডেলিভারি দিয়ে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ ইনকাম করতে পারেন। হোমমেইড যতসব খাবার আছে সেগুলো নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। খাবার তৈরি করার জন্য প্রথমে বাজার থেকে খাবারের জিনিসপত্র কিনে তারপর সেটি রান্না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা করতে হবে। মার্কেটিং এর জন্য আপনার মূল টার্গেট হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন-ফেসবুক। কারণ বর্তমান সময়ে ছোট বড় থেকে শুরু করে সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে আর বিনা খরচে মার্কেটিং এর সবচেয়ে ভালো উপায়। ফেসবুকে একটা পেইজ খুলে এবং ফুডপান্ডার রাইডারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে খাবার ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব। বর্তমান সময়ের অল্প টাকার মধ্যে এই ব্যবসা আপনার জন্য লাভের একটি বড় অংশ।

৬.মাছের ব্যবসা 

মাছ আমাদের প্রতিদিনের আমিষের উৎস। দৈনিক খাবারের সাথে মাছ অত্যন্ত ভূমিকা পালন করে। মাছ ছাড়া খাবার কল্পনা করা যায় না, কারন কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। তাই যেকোনো বাজারে গেলে আগে আমরা মাছের খোজ খবর নেই, আর মাছের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা শুরু করতে পারি। মাছের ব্যবসায় অনেক বেশি পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করার প্রয়োজন নেই যদি আমরা ৪-৫ হাজার টাকার মাছ কিনে ব্যবসা শুরু করি তাহলে সেখান থেকে আমাদের ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লাভ হবে।প্রতিটা শহরের বড় বাজারে প্রতিদিন সকালে ঢাকের মাছ বিক্রি করা হয় সেখান থেকে যদি আমরা মাছ কিনে নেই তারপর সেটা আমরা নিজেদের দামে বিক্রি করতে পারব। 

৭.বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা  

আমাদের সবার বাড়িতে কমবেশি ছোট-বড় অনেক বাচ্চা আছে। তাদের প্রয়োজনে অনেকগুলো খেলনা থাকার পরও তাদের আবদার পূরণ করার জন্য আবার নতুন করে খেলনা কিনতেই হয়। যেহেতু এগুলো  চাহিদা সম্পন্ন পণ্য তাই প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঢাকার চকবাজার ও গুলিস্থান থেকে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় খেলনা কিনে এনে ব্যবসা করতে পারেন৷ প্রথম অবস্থায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার খেলনা কিনে পরবর্তীতে তা বিক্রি করে আবার বেশি পরিমাণে খেলনা কিনে ব্যবসা করতে পারবেন। বাচ্চাদের খেলনার চাহিদা কমবে না তাই ব্যবসাটা অনেক লাভজনক ব্যবসা। 

৮.মৌসুমী ফলের ব্যবসা

আমাদের দেশে বারোমাসি ফল থেকে শুরু করে মৌসুমী অনেক ফল পাওয়া যায় যে ফলগুলোর চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকে। তাই কম পুজিতে এইসব ফল নিয়ে ব্যবসা করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। যেমন- ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি, আতা, কদবেল, বেল, আম, জাম, কাঠাল,লিচু, আমড়া, কালো আঙ্গুর ইত্যাদি ফল পাইকারি কিনে ব্যবসা করা যায়। শহরাঞ্চলে বা গ্রামের হাট বাজারে এই ফলগুলোর চাহিদা প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে। এছাড়া আপেল, কমলা, আঙ্গুর বারোমাসই পাওয়া যায় এগুলো দিয়েও ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।

গরমের দিনে আম, জাম, কাঠাল,আনারসের চাহিদা থাকে বেশি তাই রাজশাহীর আম সারাদেশে বিখ্যাত। রাজশাহীর আম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ফলে এই ব্যবসা করে আপনি ভালো লাভবান হতে পারবেন। রাজশাহী থেকে আম এনে সারাদেশে কুরিয়ার করে দিতে পারবেন।

৯.শাক-সবজি ফেরি করে বিক্রি

গ্রামাঞ্চলে যাদের জায়গা জমি আছে তারা বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে থাকে। তারা সারামাস কষ্ট করে শাক-সবজি আবাদ করে এবং তাদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে এই সব শাক-সবজি। এই শাক-সবজি গ্রামাঞ্চল থেকে অল্প দামে কিনে শহরে বিক্রি করতে পারেন। গ্রামে কাচা সবজি যেমন-লাউ, কুমরা, চিচিঙ্গা,ঝিঙ্গা,ধুন্দল, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি,ঢেঁড়স ইত্যাদি সবজি এবং পালংশাক, কলমি শাক, লাউ শাক,পুঁইশাক আরও অনেক ধরনের শাক পাওয়া যায়। 

শহরের বাজারে বিক্রি করতে পারলে আপনার পরিশ্রম কম হবে আর যদি শহরের অলি-গলিতে সবজির ভ্যান দিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন তাহলে আপনার লাভ বেশি হবে। সবজি ছাড়াও আলু, কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন।

১০.বিভিন্ন ফলের জুসের দোকান 

প্রচন্ড তাপদাহে তৃষ্ণার্ত হয়ে জুস খেলে অনেক ভালো লাগে। শহরে কর্মজীবী মানুষের ভীড়ে হাজার ব্যস্ততার মাঝে যদি এক গ্লাস টাটকা ফলের জুস পাওয়া যায় তাহলে মনটা আনন্দে ভরে যায়। আর যদি আমরা এই ফলের জুস দিয়ে ব্যবসা করতে পারি তাহলে কতই না ভাল হয়। এই ব্যবসায় অল্প টাকা ইনভেস্ট করলে লাভের পরিমান বেশি পাওয়া যাবে।

ফলের জুসের তৈরি করতে উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ফল যেমন-ডালিম,আনারস, পেঁপে,বেল,কমলা আরও কিছু ফল লাগে।

এছাড়া জুস মেকার, বরফ, সোডা, পানি দিয়ে ভালোভাবেই জুস তৈরি করা যায়। 

১১. ফ্লেক্সিলোড  ও মোবাইল সার্ভিসিং 

মোবাইল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় সঙ্গী। প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করা যায় না। যেকোনো কাজেই এই মোবাইল ফোন আমাদের সাহায্য করে। সময় দেখতে, বিনোদন নিতে, সবার সাথে যোগাযোগ করতে, গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে এছাড়াও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হঠাৎ করে যে যদি এই ফোনটা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বিষন্নতা বিলম্ব না দেখা দেয় আর কোনভাবেই যেন সময় কাটে না।তাই অল্প টাকা পুজিতে যদি এই মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসা করা হয় সেটা যেকোনো জায়গায় হোক সেখান থেকে আপনি লাভবান হতে পারবেন। এছাড়াও পাশাপাশি যদি মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করতে পারবেন।এভাবে যৌথ ব্যবসার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত লাভবান হবেন।

পরিশেষে বলা যায়,উপরের যে কয়েকটি ৫ হাজার টাকায় ব্যবসা কথা বলা হয়েছে এছাড়া আরো অনেক ব্যবসা আছে যেগুলো খুবই কম বাজেটে ব্যবসা করা সম্ভব। ঝাল মুড়ি, বাদাম, ড্রাই ফুডস, আচার, বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি,ব্লগিং, হস্তশিল্পের ব্যবসা এইসব ব্যবসাও আপনি অনায়াসে কম বাজেটের মধ্যে করতে পারবেন। আমার কাছে যে ব্যবসাগুলো কম খরচে ভালো মনে হয়েছে সেগুলোকে তুলে ধরেছি। আপনি শুধু আমাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবসা করবেন এমন নয়, আপনি আগে জানুন,বুঝুন তারপর ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করুন। শুভকামনা রইল ধন্যবাদ।

One Comment

  1. পাঁচ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া গুলো সময়োপযোগী। লেখাটা সুন্দর হয়েছে। এ সংক্রান্ত আমার সাইটে একটি ব্লগ পোস্ট রয়েছে। ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল। প্রদত্ত ইমেইল এ যোগাযোগ করার অনুরোধ থাকল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *