যেকোনো জিনিস কেনার আগে সর্বপ্রথম মাথায় আসে বাজেট। অনেক সময় বাজেট ঠিক থাকলেও ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। বাইক কেনার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি হয়। বর্তমানে যাতায়াত, ভ্রমণ, ঘোরাঘুরির জন্য উপযুক্ত যানবাহন হলো বাইক। ২ লক্ষ টাকার মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইক আছে। তবে এর মধ্যে সেরা বাইকটি বেছে নেওয়া খুব কঠিন। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমি বাইক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব যাতে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী পছন্দের বাইকটি চয়েস করতে পারেন। 

আপনি কি বাইক কেনার জন্য চিন্তাভাবনা করছেন? ২ লক্ষ টাকার মধ্যে কি ভালো বাইক খুজচ্ছেন? যদি তাই হয় তাহলে আমাদের আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ ভালোভাবে পড়ুন এবং ২ লক্ষ টাকার মধ্যে আপনার পছন্দের বাইকটি বেছে নিন। আজকে আমরা আলোচনা করব দুই লক্ষ টাকার মধ্যে ভালো বাইক নিয়ে। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক –

টিভিএস Apache RTR

 টিভিএস এপাচি আরটিআর বর্তমানে বাইক লাভারদের মন জয় করে নিয়েছে। দামে কম এবং সার্ভিসে ভালো হওয়ায় দিন দিন টিভিএস এপাছি আরটিয়ার এর চাহিদা বেড়েই চলেছে । অনেকেই মনে করেন এই বাইক শুধু এক্সিডেন্ট হয়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল তথ্য। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাইকের কারনে কখনো এক্সিডেন্ট হয় না, এক্সিডেন্ট হয় চালকের অদক্ষতার কারণে। আপনি যদি দুই লক্ষ টাকার মধ্যে বাইক খুঁজে থাকেন তাহলে পাওয়ারফুল এই টিভিএস এপাচি আরটিআর বাইকটি নিতে পারেন। 

স্পেসিফিকেশন্স 

  • ইঞ্জিন — ৪ স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলেড
  • ম্যাক্সিমাম পাওয়ার —- ১৫.২ বিএইচপি, ৮৫০০ আর পি এম 
  • সর্বোচ্চ স্পিড —১৩০+ কিমি/ঘ.
  • মাইলেজ— ৪৫+ কিমি/লি.
  • ওজন –— ১৩৭ কেজি 
  • সিসি –—  ১৫০ 
  • স্টাটিং –—- সেলফ এবং কিক 
  • উচ্চতা –— ১১০৫ মিলি মিটার 
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি –— ১৬ লিটার 
  • ব্যাটারি –— ১২ ভোল্ট 
  • কালার —- কালো, লাল, নীল

ক্লল, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, ট্রিপ মিটার, অডোমিটার, লো ফুয়েল ইন্ডিকেটর এই সবগুলোই আছে। 

টিভিএস Apache RTR  এর দাম

  • সিঙ্গেল ডিস্ক —- ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা 
  • ডাবল ডিস্ক –— ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা 
  • ম্যাট ভার্সন –— ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯০০ টাকা 

টিভিএস এপাচি আরটিআর ২ লক্ষ টাকার মধ্যে অনেক ভালো একটি মোটরসাইকেল। এই বাইকটি ১ ঘন্টায় ১৩০+ কিলোমিটার যেতে সক্ষম এবং ১লিটার তেল দিয়ে ৪৫+ কিলোমিটার চলতে পারে। এর ইঞ্জিনটা অনেক শক্তিশালী টাইপের ইঞ্জিন। এই বাইকটির একটি সুবিধা হল এর ইঞ্জিন সহজে গরম হয় না। বাইকটির বিল্ট কোয়ালিটি অত্যন্ত উন্নতমানের তাই এটি লং লাস্টিং হয়। টি ভি এস এপাচি আরটিআর বাইকের তিনটি ধরনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ম্যাট ভার্শন। তবে সিঙ্গেল ডিস্ক এবং ডাবল ডিস্ক ম্যাট ভার্সনের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। 

বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি

বাজাজ গ্রুপের বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়তা লাভ করে আছে। সার্ভিস ভালো থাকার কারণে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।কারণ বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি অত্যন্ত টেকসই সম্পূর্ণ একটি বাইক। এর সার্ভিস টাইম লং লাস্ট।  টাইম ২ লক্ষ টাকার মধ্যে বাইক কিনতে চাইলে বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি বাইক টাও সেরা হবে। 

স্পেসিফিকেশন  

  • ইঞ্জিন — ৪ স্ট্রোক, ২ ভাল্ভ, টুইন স্পার্ক  BSVI কমপ্লিয়্যান্ট DTS-i এফ আই ইঞ্জিন 
  • ম্যাক্সিমাম পাওয়ার —- ১০.২৯ kw,  ৮০০০ আর পি এম 
  • সর্বোচ্চ স্পিড —১৩০ কিমি/ঘ.
  • মাইলেজ— ৫২ কিমি/লি.
  • ওজন –— ১৪৪ কেজি 
  • সিসি –—  ১৫০ 
  • স্টাটিং –—- সেলফ এবং কিক 
  • উচ্চতা –— ১০৬০ মিলি মিটার 
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি –— ১৫ লিটার 
  • ব্যাটারি–— ১২ ভোল্ট 
  • দাম–  ১৯৮৫০০ টাকা (সিঙ্গেল ডিস্ক) 

বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি বাংলাদেশের সর্বত্র চলমান। বাংলাদেশের সব এলাকার মানুষই এই বাইক টিকে চেনে। আপনি যদি ২০০৯, ২০১০ সালের দিকে একটু তাকান সেই সময় যদি মানুষকে জিজ্ঞেস করা হতো ভালো মানের বাইক কোনটি? তাহলে বাঙালি এক কথাই বলে দিত বাজাজ পালসার ১৫০ সিসি। তো তখন থেকে কিন্তু এই বাইকের জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। 

এই বাইকটি ১ লিটার তেল দিয়ে ৫২ কিলোমিটার চলতে পারে। এর সর্বোচ্চ স্পিড এক ঘন্টায় ১৩০ কিলো মিটার। বাইকটিতে শক্তিশালী টুইন স্পার্ক কম্পলিয়্যান্ট ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে।  বাইকটি ১০.২৯ কিলোওয়াটে ৮০০০ আর পি এম শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।এর ফুয়েল ক্যাপাসিটি অনেক বেশি। বাজারে বাইকটির বর্তমান মূল্য ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা (সিঙ্গেল ডিস্ক)। ডাবল ডিস্ক এর দাম এর থেকে একটু বেশি। তবে বাজারের  তারম্যের কারণে বাইকের দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পার।  তো সব দিক দিয়ে বাইকটা কিন্তু অত্যন্ত ভালো মানের একটি বাইক। 

সুজুকি জিক্সার 

সুজুকি ব্রান্ডের বাইকগুলো আধুনিক বাইক হিসেবে পরিচিত। এই বাইকটির গুনগত মান এবং সার্ভিস খুবই ভালো। কারণ এই বাইকটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জাপানি। আর আমরা সবাই জানি যে জাপানের যে কোন জিনিস গুণগত মানে খুবই ভালো। সুজুকি জিক্সার মডেলটি বাংলাদেশে ভালই মার্কেট দখল করে আছে। 

স্পেসিফিকেশন

  • ইঞ্জিন — ৪ স্ট্রোক, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলিং 
  • ম্যাক্সিমাম পাওয়ার —- ১৪.৮ পিএস, ৮০০০ আর পি এম 
  • সর্বোচ্চ স্পিড —১৩০ কিমি/ঘ.
  • মাইলেজ— ৬৪ কিমি/লি.
  • ওজন –— ১৩৫ কেজি 
  • সিসি –—  ১৫৫
  • স্টাটিং –—- সেলফ এবং কিক 
  • উচ্চতা –— ১০৩০ মিলি মিটার 
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি –— ১২ লিটার 
  • ব্যাটারি–— ১২ ভোল্ট 
  • কালার— লাল, কালো, নীল 
  • দাম– ১৯২৯৫০ টাকা

স্পিডোমিটার, টেকো মিটার, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ফুয়েল ইন্ডিকেটর ইত্যাদি। 

সুজুকি জিক্সার বাইক এর ডিজাইন অনেক আকর্ষণীয় যা ইয়ং জেনারেশন এর কাছে খুবই পছন্দের। বাইকটিতে ব্যবহৃত হয়েছে শক্তিশালী ব্রেক এবং ওজনে হাল্কা হওয়ার কারণে  ড্রাইভ করে অনেক ইনজয় করা যায়। সুজুকি ব্রান্ড দর্শক চাহিদার উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন ডিজাইনের বাইক বাজারে নিয়ে আসতেছে। 

বাইকটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার যেতে পারে। এছাড়া ১৪.৮ পিএস পাওয়ার এর মাধ্যমে 8000 rpm শক্তি উৎপন্ন  করতে পারে। এই বাইকে তেল খরচ অনেক কম। ১ লিটার তেল দিয়ে ৬৪ কিলোমিটার ড্রাইভ করা যায়। বাইক টির বর্তমান বাজার মূল্য ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৯৫০ টাকা। 

তবে বাজারের তার তম্যের কারণে দামের ও তারতম হতে পারে। বাইকটিতে সেলফ অথবা কিক দুই ভাবেই স্টার্ট করা যায়। বাইকটির উচ্চতা স্বাভাবিক হওয়ায় সব ধরনের মানুষ  বাইক টিতে স্বাচ্ছন্দে ড্রাইভিং করতে পারবে। তো আপনার বাজেট যদি  দুই লাখ টাকা হয়,  তাহলে আপনার বাজেটের মধ্যে সুজুকি জিক্সার বাইকটি অত্যন্ত ভালো হবে 

হোন্ডা এক্স ব্লেড ১৬০ 

হোন্ডা কোম্পানির বাইক গুলোর প্রাইস অনেক বেশি হয়ে থাকে। তবে ২ লাখ টাকার মধ্যে হোন্ডা এক্স ব্লেড ১৬০ খুবই ভালো মানের একটা বাইক। বাইকটি দেখতে যেরকম মর্ডান ঠিক তেমনি সার্ভিস। শুধু শুরুতেই হিরো এবং হোন্ডা একসঙ্গে থাকলেও পরবর্তীতে আলাদা হয়ে যায়। শুধু আলাদা হওয়ার পরও হোন্ডা ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। 

স্পেসিফিকেশন 

  • ইঞ্জিন — এয়ারকুলেট ফোর স্টক এস আই ইঞ্জিন 
  • ম্যাক্সিমাম পাওয়ার —- ১৩.৯৩ এইচপি , ৮৫০০ আর পি এম 
  • সর্বোচ্চ স্পিড —১১৫ কিমি/ঘ.
  • মাইলেজ— ৪২ কিমি/লি.
  • ওজন –— ১৪০ কেজি 
  • সিসি –—  ১৬২ সিসি
  • গিয়ার বক্স –—৫
  • স্টাটিং –—- সেলফ এবং কিক 
  • উচ্চতা –— ১১১৫ মিলি মিটার 
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি –— ১২ লিটার 
  • ব্যাটারি–— ১২ ভোল্ট 
  • কালার— লাল, কালো, নীল 
  • দাম–— ১৭২০০০ টাকা 

হোন্ডা কোম্পানির বাইক গুলো দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই হোন্ডা কোম্পানির বাইকের প্রচুর চাহিদা। এর কারণ এই বাইকের দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, অত্যাধিক পাওয়ার ক্ষমতা এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন। দিন দিন নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা ও ডিজাইন নিয়ে হাজির হচ্ছে হোন্ডা। দেশের বাজারে হোন্ডার আধিপত্য দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ১৬২ সিসির এই শক্তিশালী  বাইকটি এক ঘন্টায় এক শত পনেরো কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া বাইকটির মাইলেজ ক্যাপাসিটি হলো  ১ লিটার তেল দিয়ে সর্বোচ্চ ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত গুরুত্ব অতিক্রম করতে পারে। দুই লাখ টাকার মধ্যে যদি বাইক কিনতে চান তাহলে হোন্ডা কোম্পানির হোন্ডা এক্স ব্লেড নিতে পারেন। 

হিরো হাঙ্ক গ্লোসি

হিরো ব্রান্ডের বাইকগুলো ডিজাইনে সুন্দর ও লং লাস্টিং ক্যাপাসিটি বিশিষ্ট হয়। লং ড্রাইভের জন্য হিরো হাঙ্ক গ্লসি একটি উপযুক্ত মোটরসাইকেল। 

স্পেসিফিকেশন  

  • ইঞ্জিন — এয়ারকোলেট ৪ স্ট্রোক ২ ভালভ ইঞ্জিন 
  • ম্যাক্সিমাম পাওয়ার —- ১৪.২ বি পি এইস, ৮০০০ আরপিএম 
  • সর্বোচ্চ স্পিড —১২০ কিমি/ঘ.
  • মাইলেজ— ৩৫ কিমি/লি.
  • ওজন –— ১৪৫ কেজি 
  • সিসি –—  ১৫০ সিসি
  • গিয়ার বক্স –—৫
  • স্টাটিং –—- সেলফ এবং কিক 
  • উচ্চতা –— ১০৯৫ মিলি মিটার 
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি –— ১২ লিটার 
  • ব্যাটারি–— ১২ ভোল্ট ৪ অ্যাম্পিয়ার 
  • কালার— লাল, কালো, নীল 
  • দাম–— ১৭০৪৯০ টাকা

বাইকটির অত্যাধুনিক ডিজাইন এবং মজবুত গঠনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া ইঞ্জিন পারফরমেন্স হয় লং লাস্টিং। ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। ১৫০ সিসির এই বাইকটি এক লিটার তেলের পরিবর্তে ৩৫ কিলোমিটার নিয়ে যেতে পারে। বাইকটি ১৪.২ বিপিএইস এ ৮০০০ আরপিএম শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।  আপনি যদি দুই লক্ষ টাকার মধ্যে বাইক খুঁজে থাকেন তাহলে হিরো হাঙ্ক গ্লোসি আপনার জন্য পারফেক্ট হবে। 

মন্তব্য 

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম ২ লক্ষ টাকার মধ্যে ভালো বাইক নিয়ে। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনাদের একটা ধারণা অবশ্যই হয়েছে। নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন ২ লক্ষ টাকার মধ্যে আপনার কেমন বাইক দরকার। বাইক সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *