দিনে ঘুমানোর উপকারিতা, দিনে ঘুমালে কি হয়?
দিনের বেলা ঘুম নিয়ে অনেকের নানান মতবাদ আছে। দিনের বেলার অল্প ঘুম নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন। কেউ মনে করেন দিনের বেলা ঘুম শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। আবার কেউ ভাবেন দিনের বেলার ঘুম শরীরের জন্য উপকারী নয় বরং আমাদের শরীরে ক্ষতিকর যা রাতের ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটায়।
দিনে ঘুমালে কি হয়?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রেই সবার কমবেশি মতবিরোধ আছেই। সে অনুযায়ী সবার জন্য সম্প্রতি এই মতবিরোধ নিয়েই গবেষণা করেছেন লন্ডনের (ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন) কয়েকজন গবেষক। যেখানে তারা ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী প্রায় ৪ লাখ মানুষের ওপর পরীক্ষা চালায়। আর এই পরীক্ষায় তারা নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
জার্নাল অফ স্লিপ হেলথ–এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, দুপুরে অন্তত ৩০ মিনিটের ঘুম মস্তিষ্কের জন্য ভালো যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এছাড়াও “ডিমেনশিয়া ” নামক ভুলে যাওয়া রোগকে প্রতিরোধ করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
মানুষের যত বয়স বাড়তে থাকে, ততই মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা কমতে থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু নিয়মিত ভাতঘুম মস্তিষ্কের এই সংকোচন কমাতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের এই সংকোচন যত ধীরগতির হবে, আমাদের শরীরে বার্ধক্যও তত ধীরে ধীরে ধরা দেবে ।
কিন্তু কখন ঘুমাতে হবে?
দিনের বেলা অল্প একটু ঘুম যাকে আমরা ভাতঘুম নামে জানি। প্রাপ্তবয়স্ক সকল মানুষের দেহ ও মনের সুস্থতায় প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। রাত হচ্ছে ঘুমের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। রাতে ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠে যাওয়া ভালো অভ্যাস। ভোরে ঘুম থেকে জাগলে সারা দিন নানা কাজের ব্যস্ততায় একসময় শরীরে ক্লান্তি চলে আসে। ক্লান্ত শরীরে মনের মধ্যে প্রফুল্লতা হারিয়ে যায়। মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়লে স্বাভাবিক মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়। স্বাভাবিকভাবে কাজের গতিও কমে যায়। এমন সমস্যা মোকাবিলায় দুপুরের পর স্বল্পমেয়াদি হালকা ঘুম হতে পারে উপকারী। এই ঘুমটা হতে হবে রোজ একটি নির্দিষ্ট সময়ে, এলোমেলো রুটিনে নয়। সুযোগ থাকলে দুপুরে কিংবা বিকেলে ২০-৩০ মিনিটের একটা ছোট্ট ঘুম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
দিনে ঘুমালে কি ওজন বাড়ে?
এই ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন যে দিনে ঘুমালে কি ওজন বাড়ে? মুলত, ঘুমের সঙ্গে ওজন বাড়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক যদি থাকে সেটা আছে শারীরিক শ্রম বা পরিশ্রমের। যারা অলস, কর্মহীন ও কায়িক শ্রমহীন তাদের ওজন বাড়ারই কথা। কিন্তু যিনি অনেক পরিশ্রম করেন, যেমন একজন দিনমজুর বা রিকশাচালক দিনে বা রাতের অনেক সময় ঘুমালেও ওজন বাড়ার কথা নয়।
দৈনন্দিন কাজে শ্রমের ও খাদ্য গ্রহণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা ব্যাপার থাকে যার কারনে শরীরে ওজনের তারতম্য দেখা যায়। তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য নিজের খাদ্যাভ্যাস ও শ্রমের দিকে নজর দিন। তাহলেই আপনি আপনার পরিবর্তন নিজেই দেখতে পারবেন। তাছাড়া যদি আপনার দিনে প্রচুর ঘুম পায় তাহলে আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকতে পারে সেক্ষেত্রে ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্বল্প সময় দিনে ঘুমানোর উপকারিতা
প্রতিদিনের ছোট করে একবার ঘুম বা ভাতঘুম আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে দিনের এই ছোট ঘুম অনেক বড় প্রভাব রাখে। তাই বলে এই নয় যে, দিনের বেলা দুই-তিন ঘণ্টার ঘুম দেবেন। ঘুমের ব্যাপারটা ঠিক এমনও নয়। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন, দুপুরের ঘুমের ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ মিনিট। ঘুম চক্রে ২০ মিনিটের নিচের ঘুমকে ঠিক বিশ্রাম হিসেবে ধরা হয় না। অন্যদিকে বিশ্রামের পরিমাণ ৩০ মিনিট ছাড়িয়ে গেলে তাকে ঘুম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। যে কারণে দুপুরের ভাতঘুম যাতে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মাঝামাঝি হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
দিনের বেলায় ঘুম, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না খারাপ?
বেশি ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমনটাই মানছেন গবেষকরা। শরীরের বিপাকীয় কাজে প্রভাব ফেলে দিনের বেলায় ঘুমের অভ্যাস। এই গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমান তাঁদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যারা দিনে বেশি ঘুমায় না তাদের অসুস্থতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। রাতে আর দিনে ঘুমানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
দিনের বেলার একটু ঘুম যেভাবে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে
দিনের বেলা ঘুম আপনাকে সুস্থ রাখবে যদি আপনি প্রতিদিন নিয়মমাফিক ঘুমাতে যান। সে ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুম পারতে হব। 20 মিনিটের কম বিশ্রাম / ঘুম তৎক্ষণাৎ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করলেও তা এক ঘণ্টার মধ্যেই মিলিয়ে যায়। অন্যদিকে এক ঘণ্টার বেশি বিশ্রাম নিলে তা মস্তিষ্ককে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলে, যা উপকারের থেকে অপকারই বেশি করবে । বিকেলের একদম শুরুতে ঘুমালে তা শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী হয় । তবে বিকেলের ঘুম যে সবার ওপরই সমান প্রভাব ফেলবে, ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং প্রত্যেকের ঘুমের বৈশিষ্ট্য আলাদা। নিজের ঘুমের অবস্থা বুঝে সে অনুযায়ী দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। তা নাহলে শরীরে ভালোর থেকে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিশেষে
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন, দুপুরের ঘুমের ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ মিনিট। ঘুম চক্র অনুযায়ী, ২০ মিনিটের নিচের ঘুমকে ঠিক বিশ্রাম হিসেবে ধরা হয় না। অন্যদিকে বিশ্রামের পরিমাণ ৩০ মিনিট ছাড়িয়ে গেলে তাকে ঘুম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। যে কারণে দুপুরের ভাতঘুম যাতে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মাঝামাঝি হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাহলে শরীরে কোন ধরনের সমস্যা হওয়া সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
One Comment