দিনের ঘুম তাড়াতে যা করবেন

ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ঘুমটা নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য ও মন সবসময় প্রফুল্ল থাকে। ঘুমের জন্য উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে রাতের বেলা। প্রতিদিন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম পারলে শরীরে অসুস্থতা ও আলসেমি  কম দেখা যায়। কিন্তু অনেকেরই দিনের বেলা ঘুম পায় বা ঘুম ঘুম ভাব চোখে লেগে থাকে। তাতে কাজের যেমন সমস্যা হয়, তেমন ক্ষতি হয় শরীরের।

দিনে ঘুম কতটা ক্ষতিকর!

সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুম শরীরের অলসতা কে দূরে ঠেলে দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে চাঙ্গা রাখে। ঘুম শরীরকে পুনর্জীবিত করার পাশাপাশি পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের প্রস্তুত করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের বেলার ঘুমের অভ্যাসে হতে পারে চরম ক্ষতি। কারণ দিনের বেলা ২-৩ ঘন্টার ঘুম শরীরের জন্য  ভালো হয় না।বরং আমাদের শরীরে স্থূলতা,মেদ,অলসতা, হৃদরোগ আরও অজানা কিছু রোগের সৃষ্টি হয়। সেজন্য দিনের বেলা ঘুমভালোর চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।

দিনে ঘুমানো কি খারাপ অভ্যাস?

আমাদের দেহ ও মনের সুস্থতায় প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের জন্য উৎকৃষ্ট সময় হলো রাত। রাতে ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠতে পারলে সেটা শরীরের জন্য ভালো অভ্যাস। ভোরে ঘুম থেকে জাগলে সারা দিন নানা কাজের ব্যস্ততায় একসময় ক্লান্তি চলে  আসে শরীরে। ক্লান্ত শরীর কাজের আগ্রহ  হারিয়ে ফেলে। মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়লে স্বাভাবিক মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়। কাজের গতি কমে যায়। এমন সমস্যা মোকাবিলায় দুপুরের পর স্বল্পমেয়াদি হালকা ঘুম হতে পারে উপকারী। তবে ঘুমটা হতে হবে রোজ একটি নির্দিষ্ট সময়ে, এলোমেলো রুটিনে নয়। সুযোগ থাকলে দুপুরে কিংবা বিকেলে ২০-৩০ মিনিটের একটা ছোট্ট ঘুম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে দিনে ঘুমানো হবে আপনার জন্য ভালো অভ্যাস।

রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে কি ক্ষতি হয়?

রাতের ঘুম আর দিনের ঘুমের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। শরীরের বিপাকীয় কাজে প্রভাব ফেলে দিনের বেলায় ঘুমের অভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “বেশি ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর”। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমান তাঁদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আর যারা দিনে ঘুমায় না তাদের এইসব রোগ ব্যধির সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া খাবারের নিয়ম ঠিক না থাকলে ও ধূমপানের অভ্যাস থাকলে রোগ ব্যাধি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । যারা স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমান, তাঁদের দেহে একাধিক পরিবর্তনও ঘটে। একেবারে ঘুম না পারলে যেমন খারাপ, তেমন দিনের বেলায় ঘুমও বেশ খারাপ। যার কারনে রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে।    

একেবারে ঘুম না পারলে যেমন খারাপ, তেমন দিনের বেলায় ঘুমও বেশ খারাপ। যার কারনে রক্তচাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে।গবেষণায় এটি স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে যে দিনের ঘুমের দৈর্ঘ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং ভাল স্বাস্থ্যের জন্য ২০-৩০ মিনিটের ঘুম অপরিহার্য । কিন্তু দুপুরের খাবারের পরই যদি একটা লম্বা ঘুম দেন, তবে তা মোটেও শরীরের জন্য ভাল হবে না।

দিনে ঘুম ঘুম ভাব থেকে মুক্তির উপায়

দিনে ঘুমানোর অভ্যাস অনেক মানুষের মাঝেই দেখা যায়। সাধারণত কর্মব্যস্ততার কারণে শরীরে অলসতা দেখা দেয়। তাছাড়া কাজকর্মহীন দিন যাপন করলেও দিনে ঘুম এম্নিতেই চলে আসে।তাই ঘুম ঘুম ভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকই অনেক কিছু করে থাকেন। এর মধ্যে চা,কফি পান করেন অনেকেই।

কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন যা আমাদের শরীরে ক্লান্তি দূর করে শরীরে প্রফুল্লতা এনে দেয়। এছাড়া ঘুম ভাব থেকে মুক্তি পেতে নিচের কিছু উপায় গুলো মেনে চলতে পারলেও আপনার অনেক উপকারে আসতে পারে-

রাতে গভীর ঘুম দেওয়া

রাতের খাবার শেষ করেই ৩০ মিনিটের পরে ঘুমাতে যাওয়া। যত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাবেন তত তাড়াতাড়ি সকালে উঠতে পারবেন। যার ফলে রাতের বেলা পরিপূর্ণভাবে ঘুমাতে পারবেন। দেরি করে ঘুমাতে গেলে ঘুমের পরিমাণ কম হয় বলে দিনে ঘুম ঘুম ভাব থাকে। তাই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।

সময় মেনে ঘুম

সময় ঠিক রেখে প্রতিদিন যে সময়ে ঘুমাতে যান আবার প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান। আবার যে সময়ে ঘুম থেকে উঠুন ঐ  সময়ে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠতে শুরু করুন। এভাবে সময় মেনে চললে আপনার শরীর ঘুমের সময় সেট করে নিবে। ফলে অসময়ে ঘুম আসবে না।

দিনের বেলা বিছানা থেকে দূরে থাকা 

আমরা অনেকেই আছি যেকোনো টুকটাক কাজ বিছানাতে শুয়ে-বসে করতে পছন্দ করি যার কারনেও দিনের বেলায় ঘুম পায় আমাদের।  দিনের বেলা বিছানায় বসে খাওয়া, মুভি দেখা, বই পড়া ইত্যাদি কাজ করলে ঘুম চলে আসে। তাই ডাইনিং টেবিলে বসে খান, চেয়ারে বসে বই পড়ুন বা মুভি দেখুন।

হালকা ব্যায়াম 

ঘুম দূর করার জন্য ব্যায়াম সব থেকে ভাল উপায়। ঘুম দূর করার পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখবে তেমনি আপনার ঘুমের সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করবে । এই ক্ষেত্রে পুশআপ, ক্রাঞ্চেস, পা ওঠানামা বা জগিং করুন। যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে কাজ করবে এবং দিনের বেলার ঘুম কমাবে।

চা-কফি পান করা

ঘুম দূর করতে দিনের বেলা চা-কফি পান করতে পারেন। এতে আছে ক্যাফেইন। এই পদার্থটি আপনার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তুলবে। যার ফলে ঘুম কমে যাবে।

বিরতি নিন

সারাদিন কাজের বিরক্তিকর সময় থেকে হাল্কা বিরতির প্রয়োজন। বিরতিহীন কাজ করতে করতে এক সময় ঘুম চলেই আসে কাজের সময় খুব ঘুম পেলে একটু বিরতি দিন। এই সময় কাজ থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। যা আপনার দিনের বেলায় ঘুম কমাতে কাজ করবে আশাকরি।

উপসংহার 

আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছেন যারা অনিদ্রায় ভোগেন। দিনের ২-৩ ঘন্টার ঘুম রাতের অনিদ্রার কারণ হতে পারে। তাই রাতে যাঁদের ঘুম আসে না, দিনে তাঁদের না ঘুমানোই ভালো হবে। ঘুমের চক্রটাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর রাখতে হবে। রোজ রাতে নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া, ভোরে নির্দিষ্ট সময়ে জেগে ওঠার অভ্যাস করা প্রয়োজন। মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তাও অনিদ্রার বড় কারণ। সকালে দেরি করে ওঠার অভ্যাসও ভালো নয়। তাই আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য সময়মেনে পর্যাপ্ত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে তাহলেই আমরা ঘুম ভাব থেকে রেহাই পেতে পারি। ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *