ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা

বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকটি জীবের খাবারের প্রয়োজন। মানুষ এর ব্যতিক্রম নয়। সুস্বাস্থ্, বাহ্যিক গঠন ও মানসিক গঠনের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হয়। শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। এই ছয়টি জিনিস একজন মানুষের শরীর গঠনের জন্য মহামূল্যবান। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। শিশুদের শরীরে বর্তমানে ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত লক্ষণ বেশি প্রকাশ পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা এবং ভিটামিন ডি এর খুঁটিনাটি।

ভিটামিন ডি সম্পর্কে আলোচনা

ভিটামিন ডি মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন মানুষ ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত কারণে ভোগে। বাংলাদেশের দিন দিন ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি যদি আপনার শিশুকে শারীরিক, মানসিক, দৈহিকভাবে ভালো রাখতে চান তাহলে ভিটামিন ডি এর কোনো বিকল্প নেই। নয়তো ভবিষ্যতে আপনার শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এইজন্য ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের জন্য খুবই জরুরী। ভিটামিন ডি এর প্রধান কাজ হচ্ছে দাঁত ও হাড়ের গঠন।

ভিটামিন ডি এর শ্রেণীবিভাগ

ভিটামিন ডি ১,ভিটামিন ডি ২,ভিটামিন ডি ৩,ভিটামিন ডি ৪, ভিটামিন বি ৫, এদের মধ্যে প্রধান হল ভিটামিন ডি ২ এবং ভিটামিন ডি ৩। আমরা যদি নিয়মিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখি তাহলে ভিটামিন ডি এর সবগুলি উপাদানই আমরা পাব।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা

ডিমের কুসুম: ডিম হচ্ছে সহজলভ্য খাবার ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ডিমের যে সাদা অংশ তাতে প্রোটিন পাওয়া যায় এবং হলুদ অংশে ফ্যাট থাকে। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত তবে উচ্চ রক্তচাপ হলে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

গরুর কলিজা : ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ আরেকটি খাবার হচ্ছে গরুর কলিজা। ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে নিয়মিত গরুর কলিজা খেতে হবে। ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি অন্যান্য অভাব পূরণ হবে তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।

টক দই: বিশেষ কিছু রান্না ছাড়া টক দই তেমন খাওয়া হয় না। কিন্তু আমরা জানি না টক দই এর মধ্যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। নিয়মিত আমাদের টক দই খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে।

সামুদ্রিক ও তেল চর্বি যুক্ত মাছ: ভিটামিন ডি এর বড় উৎস হতে পারে সামুদ্রিক ও তেল চর্বিযুক্ত মাছ। সামুদ্রিক মাছ সবসময় পাওয়া না গেলেও আমাদের দেশে কিছু তেল চর্বি যুক্ত মাছ আছে। যেমন পাঙ্গা, রূপচাঁদা। তাই ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে খাবারের তালিকায় সামুদ্রিক ও তেল চর্বি যুক্ত মাছ রাখা দরকার।

দুগ্ধ জাতীয় খাবার: সকল ধরনের দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন পনির, ছানা, দই, মাখন ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই খাবার তালিকায় দুগ্ধ জাতীয় খাবার আবশ্যক।

কমলা: কমলা ফলটা দেখতে যেরকম সুন্দর তেমনি তার গুনাগুন গুলো সুন্দর। কমলায় পাওয়া যায় ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণে কমলা খুবই কার্যকর। ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি কমলায় ভিটামিন সি ও পাওয়া যায় ।

বাদাম: বাদাম সহজলভ্য খাবার হলেও এর অবদান অসামান্য। ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে নিয়মিত বাদাম খেতে হবে। বাদাম কাঁচা অবস্থায় এবং ভাজা অবস্থায় খাওয়া যায়।

সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি

আমরা হয়তোবা অনেকেই জানিনা যে সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। সূর্যের আলোকে বলা হয় ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। সকাল বেলার সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বেশি থাকে। সব সময় সূর্যের আলোতে থাকার দরকার নেই প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট শরীরে সূর্যের আলো লাগানো উচিত। সূর্যের আলো গায়ে পড়লে ত্বক ভিটামিন ডি তৈরি করে। তাছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় ১০০ ভাগ ভিটামিনের মধ্যে ৮০ ভাগ ভিটামিন পাই সূর্যের আলো থেকে এবং বাকি ২০ ভাগ ভিটামিন পায় খাবার থেকে। তাই নিয়মিত শরীরে সূর্যের আলো লাগানো দরকার।

ভিটামিন ডি কেন প্রয়োজন?

মানবদেহের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেহের ক্ষয় রোধ, হাড় গঠনে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মরণবেধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল থেকে মুক্ত করে। এইজন্য ভিটামিন ডি আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হতে পারে?

ভিটামিন ডি এমন একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন যার অভাবে আমরা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারি। ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন:

  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • হাড়ের ক্ষয়।
  • দাঁতের ক্ষয়।
  • হাড় বেঁকে যাওয়া।
  • হাড়ে ব্যথা ও পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • রিকেটস রোগ হওয়া।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি।
  • ডায়াবেটিস।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ও বিষন্নতা।

ভিটামিন ডি কাদের জন্য বেশি প্রয়োজন?

ভিটামিন ভিটামিন ডি সবার জন্য প্রয়োজন হলেও অসুস্থ এবং শিশুদের জন্য বেশি প্রয়োজন। একটি শিশুর বাড়ন্ত অবস্থায় তার ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাড়ন্ত অবস্থায় একটি শিশুর হাড়ের গঠন মজবুত হয়। এই সময় যদি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার না দেওয়া হয়, তাহলে হাড়ের গঠন ব্যাহত হবে এবং হাড় দুর্ব, পেশি দুর্বল হয়ে যাবে। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ব্যক্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, টিবি রোগ, যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন এবং স্থূলতায় ভোগেন, তাদের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা বেশি।

পরিশেষে কিছু কথা

এতক্ষণ আলোচনা করলাম ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা এবং ভিটামিন ডি এর খুটিনাটি বিষয়। আশা করছি আপনারা ভিটামিন ডি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। ভিটামিন ডি সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে বা অন্য যেকোন ভিটামিন সম্পর্কেও যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনার উত্তর দিয়ে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *