মিয়ানমারে বিখ্যাত সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আরাকান আর্মিরা। যাদের সাথে যুদ্ধে প্রায়ই মিয়ানমারের আর্মিরা নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। এছাড়াও রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাও তাদের প্রতিপক্ষ। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবির সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত ঘটে এ থেকে বোঝা যায় তারা ত্রিমাত্রিক সংঘাতে লিপ্ত।  

কারা এই আরাকান আর্মি

প্রায় এক দশক আগে থেকে শুরু হয় এই আরাকান আর্মির পথ চলা এরা মূলত রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর বা আরাকানের বৌদ্ধ ধর্মাবলিদের একটি সংগঠন। এদের প্রথমাবস্থায় 26 জন বিদ্রোহী পুরুষদের নিয়ে সংগঠনটি শুরু হয়।  আরাকান আর্মিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স এর দখলে থাকা একটি অঞ্চলে। এজন্য কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি এবং আরাকান আর্মি সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই মুহূর্তে আরাকান আর্মির সদস্য সংখ্যা প্রায় 25 হাজার। এদের শুধু সামরিক শক্তি নয় তাদের প্রকৃত অস্ত্র হচ্ছে আরাকানের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন। সেজন্য অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এই সংগঠনের সাথে শক্তির লড়াইয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বারবারি ভুগতে হয়।  

উপকূলীয় রাখাইন প্রদেশ প্রাচীনকালে স্বাধীন আরাকান রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু আঠারো শতকে বার্মিজদের আগ্রাসনে অঞ্চলটি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। উত্তর অঞ্চলের সান প্রদেশে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছেন কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি এবং তাদের পাশাপাশি আরাকান আর্মিরা। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যে তেল সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ রাজ্যটি বেল্ট অ্যান্ড রোড সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হওয়া এ অঞ্চলটি চীনাদের নজর রয়েছে। এরপরও রাখাইন প্রদেশটি অন্যতম দরিদ্র প্রদেশ হিসেবে পরিচিত।

বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী মাত্র 17 শতাংশ বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে যা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে সামান্য। এবং জরিপের তথ্য অনুযায়ী প্রায় 3 লক্ষ বাড়িতে টয়লেট নেই। এমন বাস্তবতায় কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়তে থাকা বৌদ্ধ এবং মুসলিমদের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়। এরমধ্যে আরাকানীদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলি আর এটাই মিয়ানমারের মূল ধর্ম। 

বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সামরিক আগ্রাসনের জবাব দিচ্ছে তারা। একবার ইরাবতীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাকান আর্মির প্রধান বলেন, রাখাইনে অবশ্যই নিজেদের বাহিনী থাকা উচিত। এবং আরো বলেন এমন সশস্ত্র বাহিনী থাকলে রাখাইন জাতি গোষ্ঠী টিকে থাকবে। মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসের হামলার মধ্য দিয়ে রাখাইনে নিজেদের সক্রিয়তার জানান দিয়েছে তারা। 2019 সালের 4 জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসের দিন পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় আরাকান সদস্যরা। হামলায় 13 জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং 9 জন আহত হয় এবং হামলার পর সেখানে সেনা মোতায়েন করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

এর পরপরই আকাশপথে এবং স্থলপথে সামরিক মহড়া বাড়ানো হয় এবং সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। 13 ই জানুয়ারি মিয়ানমার আর্মির এক ইউনিট এর সাথে আরাকান আর্মির প্রায় 4 ঘন্টা সংঘর্ষ হয় সেখানে এই সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। বিপাকে পড়ে মিয়ানমার আর্মি দাবি করে আরাকান আর্মি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং আরও দাবি করে তাদের সাথে রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি যোগসাজশ রয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বৈঠক হয়েছিল বিশ্লেষকেরা বলেছিল কাচিন বিদ্রোহীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া আরাকান আর্মিরা রোহিঙ্গা আরস্যার চেয়ে বড় হুমকি। বিশ্লেষকেরা আরও বলেছে আরাকান আর্মি দের উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। কয়েক বছর যাবৎ ছোট একটি সংগঠন নিয়ে ধাপে ধাপে বৃহৎ একটি সংগঠনের জন্ম দিয়েছে এই আরাকান আর্মিরা। রাখাইনদের উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে শক্তিশালী আরাকান আর্মি। ফলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে শক্ত পজিশনে দাঁড়িয়ে আছে এই আরাকান আর্মিরা। তাই বলা যায় মিয়ানমার আর্মি সাথে এবং আরাকান আর্মি সংঘর্ষ ঘন ঘন দেখা যায়। 

এছাড়াও, বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তে নিজেদের অভয় রাজ্য গড়ে তুলেছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে ছোট সংঘাতের সৃষ্টি হয় তাদের সাথে তারা বিবৃতি দিয়েছিল যে ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এই সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল। এবং তারা বিবৃতিতে বলেছিল বাংলাদেশের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই এবং তারা বিবৃতিতে বলেছিল আমরা বাংলাদেশের সমর্থন প্রত্যাশা করি।

আন্তর্জাতিক খবর নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *