পার্ট টাইম ব্যবসা আইডিয়া

পার্টটাইম ব্যবসা চিন্তাভাবনা আমাদের কম বেশি সবারই মনে আসে।পার্ট টাইম ব্যবসা করার জন্য সঠিক সময় ও সুযোগ হয় না।আমাদের অনেকেরই জানতে ইচ্ছা হয় পার্টটাইম ব্যবসা কি?

  • কিভাবে পার্টটাইম ব্যবসা করব?
  • কিভাবে পার্ট টাইম ব্যবসা করলে লাভবান হব?
  • ব্যবসায় ঠিকমতো সময় দিতে পারব কিনা?

এসব নানা ধরনের প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই এসব চিন্তাভাবনা দূর করতে আজকে কিছু পার্টটাইম ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করব। 

পার্ট টাইম ব্যবসা কি?

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তাই মানুষের জীবিকার তাগিদে অনেক ধরনের কাজই করতে হয়। সেটা যে কোন বয়সে কিংবা যে কোন সময়ে করতে হয়। অনেক সময় আমাদের প্রতিদিনের নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের উৎস দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তাই আমাদের একের অধিক কাজের প্রয়োজন হয় আর এই কাজকে পার্ট টাইম কাজ বলা হয়।আর এই কাজকে লোকবল দিয়ে বিস্তর পরিসরে কাজ করাকে পার্ট টাইম ব্যবসা বলা হয়। বর্তমান সময়ে অনেক ধরনের পার্টটাইম ব্যবসা লক্ষ্য করা যায়। যে যার অবস্থান থেকে তার সাধ্যমত চেষ্টা করলেই ব্যবসা করতে পারে। তার জন্য মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সফল ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব। চাইলেই হুটহাট করে ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব নয়, যে ব্যবসা করেন না কেন এর জন্য আপনার ওই ব্যবসায় অভিজ্ঞতা,মেধা ও শ্রম প্রয়োজন।

কয়েকটি পার্টটাইম ব্যবসা

১. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ বর্তমান সময়ে পার্টটাইম ব্যবসার মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে সর্বোত্তম।বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে দেশের নামিদামি কোম্পানির এবং কিছু কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে আমরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারি।বড় কোম্পানি থেকে মাধ্যম হয়ে তাদের পণ্য অন্য কোন জায়গায় বিক্রি করে দিলে ওই বিক্রিত পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ আপনাকে দেওয়া হবে। যার উদাহরণ হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানি অ্যামাজন। বিনা পুজিতে আপনার ইচ্ছামত বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে কাজটি করতে পারবেন। আমরা সবাই ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে আছি বলেই এই কাজটা আমাদের অনেক সহজ করে দেবে। 

২. ফ্রিল্যান্সিংঃ ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে অনেক বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং এমন এক পেশা যা সকল বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এটি একটি মুক্তপেশা, যার যেভাবে সুবিধা সে সেই ভাবেই কাজ করতে পারে কারো কোনো আদেশ-নিষেধ ছাড়াই। তাই এই পেশাটি সবার কাছে বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিতা পেয়েছে। কতগুলো ওয়েবসাইট আছে যেগুলো থেকে আপনারা ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন সেগুলো হল-

  • www.fiverr.com 
  • www.freelancer.com 
  • www.upwork.com 
  • www.guru.com 
  • www.toptal.com 
  • www.truelancer.com 

৩.কোচিং সেন্টারঃ  স্কুল কলেজের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কোচিং সেন্টার অন্যতম অবদান রাখে।কোচিং সেন্টার মূলত ছেলেমেয়েদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পড়াশোনা করানো হয়। যার ফলে ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পার্ট টাইম হিসেবে কোচিং সেন্টার ব্যবসাটা শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তেমনি নিজেদের জ্ঞান প্রসারিত হয়। 

৪. গিফট কর্নারঃ বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে আমরা অনেক রকমের উপহার সামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়ে থাকি। আর এই আইডিয়া কে কাজে লাগিয়ে আমরা বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র দিয়ে গিফট কর্নারের দোকান খুলতে পারি। পার্ট টাইম হিসেবে বিভিন্ন ধরনের খেলনা,গ্লাস,ডিনার সেট,প্লেট,কাগজের ফুল ইত্যাদি দিয়ে গিফট কর না শুরু করতে পারেন।ধীরে ধীরে ধৈর্য পরিশ্রম দ্বারা  প্রচার প্রচারণা বাড়ালে অবশ্যই সফলতা পাবেন। 

৫.কসমেটিক্সঃ গ্রাম অঞ্চলের স্কুল কলেজের আশেপাশে বাজারে এবং শহরাঞ্চলে কসমেটিক্সের পণ্য ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন। আমরা যদি স্কুল-কলেজের পাশের বাজারে কিংবা শহরাঞ্চলে দোকান নিয়ে কসমেটিক্সের মালামাল বিক্রয় করি তাহলে লেখাপড়ার কিংবা কোন একটা চাকরির পাশাপাশি এই ব্যবসা করা যায়।নিজে না করতে পারলে পরিবারের কাউকে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন। বর্তমানে এই ব্যবসাটি অনেক লাভজনক এবং চাহিদা সম্পন্ন  ব্যবসা। 

৬.সবজি চাষঃ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সবজি প্রতিনিয়তই খেয়ে থাকি। বাজারে গেলে দেখে দেখে সবচেয়ে টাটকা সবজি বাজার থেকে কিনে আনি। আমরা চাইলে পার্টটাইম হিসেবে সবজি চাষ করতে পারি।সবজি চাষ করার জন্য খুব বেশি জায়গা জমির প্রয়োজন নেই। আমরা চাইলে যে কোন জায়গায় করতে পারে সবজি চাষ করতে পারি।বাড়িতে পর্যন্ত জায়গা না থাকলে বাসা বাড়ির ছাদে ছাদ বাগান হিসেবে সবজি চাষ করতে পারি। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে সেখানে সব ধরনের সবজি চাষ করা সম্ভব। কিছু কিছু মৌসুমী সবজি চাষ করলে ভালো পরিমাণ লাভবান হওয়া সম্ভব।

৭.মাছের ব্যবসাঃ  রান্নায় যেমন সবজি প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন মাছের। প্রতিদিনের খাবারে সবজি আর মাছ না হলে আমাদের চলেই না। তাই আমরা নিজেদের পুকুরে মাছ চাষ করতে পারি।এতে করে আমাদের পরিবারের আমিষের চাহিদা যেমন পূরণ করবে তেমনি ভাবে মাছ বিক্রি করতে পারলে আমাদেরকে লাভবানও করবে। আমাদের বাড়ির আশেপাশে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করতে পারি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে মানুষের পুকুর লিজ নিয়ে  যদি মাছ চাষ করা যায় তাহলে পার্ট টাইম ব্যবসা হিসেবে খারাপ হবে না। 

৮.পশুপাখি পালনঃ আমাদের বাড়ির আশেপাশে পর্যাপ্ত জায়গায় এমনিতেই পড়ে থাকে।যদি বাসা বাড়ি হয় তাহলে বাসার  ছাদে পশুপাখি পালন করতে পারি। বাড়ির সামনে কবুতরের বাসা,কোয়েল পাখির বাসা, দেশি মুরগির জন্য বাসা করে দিলে সেখান থেকে যে বাচ্চা ও ডিম দিবে তা দিয়ে অনায়াসে সংসার চালানো সম্ভব।এর পাশাপাশি আমাদের আমিষের চাহিদাও পূরণ হবে। দেশি হাঁস-মুরগি ও কবুতরের জন্য বাড়তি কোনো খাবার কিনে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অল্প কিছু খাবার দিলে এরা এমনি ঘুরে ঘুরে খাবার খায় যার ফলে আপনার খাবার সঞ্চয় হবে। 

৯.মৌসুমী ফলের ব্যবসাঃ ফল আমরা কমবেশি সবাই খাই। তবে বেশিরভাগ মৌসুমী ফলের দাম বৃদ্ধি পায়।বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন রকমের ফল যেমন- ডালিম,আঙ্গুর,তরমুজ,আতা,কলা,বেল, ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ফল নিয়ে ব্যবসা করা যায়।শহরে বা গ্রামের হাট বাজারের আশেপাশে ফল নিয়ে বসলে কম বেশি বিক্রি হবেই। তাই এই ব্যবসাটা পার্ট টাইম হিসেবে করা যায়। 

১০.ফুটপাতের ব্যবসাঃ রাজধানীর ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ফুটপাতের ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলতেছে।ফুটপাতে যেকোনো ধরনের ব্যবসা করতে পারেন। এই ব্যবসাতে কোন লস নেই। 

  • ফুটপাতে আপনি চাইলে ছোট বাচ্চাদের  কাপড়ের ব্যবসা করতে পারেন। 
  • কসমেটিক্সের ব্যবসা করতে পারেন। 
  • স্ন্যাকস, ঝালমুড়ি, ফুসকার ব্যবসা করতে পারেন।
  • বাদাম, ছোলা, সিমের বিচি ভেজে বিক্রি করতে পারেন। 
  • বিভিন্ন মৌসুমে পিঠা বিক্রি করতে পারেন। 

এই সব ব্যবসা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম হিসেবে করতে পারে।  

১১.টি-শার্ট পেন্টিংঃ আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমরা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করার  টি-শার্ট পেইন্টিং করে থাকি। যার যার নিজের নাম দিয়ে বা অন্য কোন স্টিকার দিয়ে টি-শার্ট পেন্টিং করে সেগুলো পরি।বিভিন্ন খেলাধুলা ও অনুষ্ঠানের জন্য অনেক রকমের টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। টি-শার্ট প্রিন্টিং ব্যবসাটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে এটা পার্টটাইম হিসেবে করতে পারবো। 

১২.ইলেকট্রিক ওয়ার্কশপঃ একজন ভালো ইলেকট্রিশিয়ান হাতের কাছে থাকলে কার না উপকার হয়।আমাদের আরাম আয়েশ করার জন্য ফ্যান,লাইট,টিভি, ফ্রিজ,রাইস কুকার,ব্লেন্ডার থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক জিনিসপত্র বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করেই সমস্যা দেখা দেয়।যার কারণে আমাদের ছুটতে হয় শহরে। আর এটা যদি আপনার হাতের কাছে থাকে তাহলে আপনার যেমন চাপ কমে গেল তেমনি ইলেকট্রিশিয়ানের কিছু অর্থ উপার্জন হবে।বাসা বাড়ি যাবতীয় টুকটাক কাজ প্রতিনিয়ত লেগে থাকে আর ইলেকট্রিশিয়ান হাতের কাছে থাকলে সব সময় তাহলে তো কোন কাজে পড়ে থাকবে না। তাই ইলেকট্রিক কাজ শিখেও  একটা পার্টটাইম ব্যবসা করা যায়।

১৩.রিসাইকেল ব্যবসাঃ পুরাতন জিনিসপত্র কিরে বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া  গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া এক ধরনের সাইকেল ব্যবসা। এতে আপনি মাধ্যমে কাজ করবেন। পুরাতন জিনিস বা কোন জিনিস কিনে বা মাধ্যম হয়ে পার্ট টাইম ব্যবসা করতে পারেন। পুরাতন জিনিসপত্র কারো কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও সেটা কারো কাছে মূল্যবান হতে পারে। এই ব্যবসা বর্তমান সময় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন -ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বেশ জনপ্রিয় একটা ব্যবসা।

শেষ কথা হচ্ছে, আপনি যে কাজই করেন না কেন তার পাশাপাশি উপরের ১৩টি কাজ আপনি অনায়েসে করতে পারবেন।সেক্ষেত্রে আপনার ধৈর্য,ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম মিলেয়ে কাজ করতে হবে। তবেই আপনি যেকোনো কাজেই আশাকরি সফল হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *