ঘুরে আসুন ভালবাসার অমর স্মৃথি টেকনাফের মাথিনের কূপ

টেকনাফের মাথিনের কূপ

আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগের কথা চিরসবুজ পাহাড়ে ঘেরা বর্তমানে টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ ও পশ্চিমে সুনীল সমুদ্রের আকাশ নীল জলরাশির পাশেই এক ঐতিহাসিক  কূপ নিয়ে আজকের এই লেখা। টেকনাফ উপজেলাটি প্রায় তিন দিকেই সমুদ্র দিয়ে ঘেরা সেখানে শুধু লোনা পানি, কিন্তু এই পানিতো আর পান করা যায় না। তাছাড়া এখান কার মাটির নিচে অনেক পাথর যার কারনে টিউবেল বানানো অনেক দূরহ কাজ। এজন্য টেকনাফ থানার পক্ষ থেকে স্থানীয় লোক সুবিধার কথা চিন্তা করে  একটি কূপ খনন করা হয়েছিল ঐ সময়ে। আর সেই কূপটি আজকের মাথিনে কূপ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। কি কারণে একটি পানির কূপ ঐতিহাসিক হলো বা কেনই বা ধীরাঝ ভট্টচার্য লিখেছিলেন ’যখন আমি পুলিশ ছিলাম বইয়ে’ এই বই পড়ে ৭৫ বছর পর টেকনাফের এক যুবকের কেন মনে হলো কূপটি সংরক্ষণ প্রয়োজন। আর এই মাথিনে কূপ নিয়ে আজকে আমি লিখার চেষ্টা করেছি।

যে ছেলেটির জন্য টেকনাফ থানায় যে মাথিনের কূপটি সন্ধান পাওয়া গিয়ে ছিলো তার নাম আব্দুল কুদ্দুস রানা। রানার কাছে মাথিনের কূপটি বিয়োগান্তক অমর প্রেমের কাহিনী। আর এটি তুলে ধরতে ১৯৮৪ সালে রানা ১৭৫ টাকা খরচ করে একটি সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে রানা বলেন, ”যখন পুলিশ ছিলাম” বইটির ভেতরে তিন থেকে চার পৃষ্ঠায় বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টচার্যের লেখা একটি চিঠি। এটি পড়ে এই কূপের কাহিনী আমি জানতে পাই। এরপর আমি এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহন করি। এর পর থেকে প্রায় প্রত্যেক বছর ৬-৭ লক্ষ ভ্রমন পিপাসু লোক এই মাথিনের কুপটি দেখতে ভিড় করে, বিশেষ করে শীতকালে তিল পরিমান জায়গা পাওয়া যায় না দাড়িয়ে দেখার। তাছাড়া রানা আরো বলেন –”টেকনাফ মানে মাথিনের কূপ, মাথিন মানে টেকনাফ”

এরপর এটি যখন আস্তে আস্তে সারা দেশে পর্যটকদের কাছে একটি তীর্থ স্থানে রূপ নেয় টেকনাফ থানার পুলিশ প্রশাসন বিয়োগান্তক অমর প্রেমের স্থান হিসাবে স্থানীয় প্রশাসন এটিকে প্রায় ৮০ বছর পর ২০০৬ সালে সংরক্ষন করার উদ্যোগ গ্রহন করে। আর এর পর থেকে এটি টেকনাফ উপজেলার অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান হিসাবে ভ্রমন বিলাসীদের নিকট পরিচিতি লাভ করে।

একশত বছর আগে ১৯২৪ সালের  দিকে তখনকার টেকনাফ থানা চাকুরির বদলি হয়ে আসেন বাঙালি পুলিশ ধীরাজ ভট্টচার্য। ঐ সময় টেকনাফ থানা ছিলো ব্যবসা-বানিজ্যর জন্য এক আদর্শ স্থান। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চুরি-ডাকাতি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া কারণে এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে টেকনাফে একটি পুলিশ থানা স্থাপন করা হয়। আর সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হয়ে টেকনায়ে আসেন ধীরাজ ভট্টচার্য। কিন্তু টেকনাফ থানায় বাঙালি কর্মকর্তা ধীরাজের তেমন কোন কাজ ছিলো না। তাই তিনি প্রায়ই টেকনাফের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেফিরে দেখতেন। তিনি যে আধা-পাকা ঘরে রাত্রী যাপন করতেন ঠিক তার সামনেই ছিল একটি মিঠা পানির কূপ। কারন টেকনাফে তখন মিঠা পানির খুব অভাব ছিলো। আর এই কূপ থেকে খুব সকালে টেকনাফ থানার আসে পাশ থেকে অনেকেই পানি নিতে আসত ।

তাছাড়া আশপাশের বাঙালি এবং মগ তরুনীরাই বেশি ভীর করতো পানি সংগ্রহের জন্য। কিন্তু একদিন সকালে ধীরাজের ঘুম ভাংঙ্গে খুব সকালে মেয়েদের কথা বার্তায়। সেখানে ধীরাজ লক্ষ করেন অনেক বাঙালি মেয়ের সাথে রাখাইন মেয়েও পানি নিতে এসেছি কূপ থেকে। মেয়েটিকে দেখে ধীরাজ ভট্টচার্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিন সকাল বেলায় সে দাড়িয়ে থেকে মাথিনকে দেখে এবং তাদের আসা যাওয়া দেখতেন। যা আস্তে আস্তে তাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কে রূপ নেয়।

এরপর তাদের এই ভালোবাসার সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দেওয়ার  সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঐ সময়ে মগ রিতির বাহিরে যেতে চায়নি না মাথিন। মাথিন তার পরিবারের  অনুমতি নিয়েই তাদের নিজস্ব রীতিতে বিবহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলেন মাতিন আর ধীরাজ। যখন সব কিছু ঠিক ঠাক তখন টেকনাফ থানা ওসির নজরে আসে বিষয়টি। আর থানার ওসি বিষয়টি খুব স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। ওসি নিজে গোপনে কলকাতায়  ধীরাজের বাবাকে তাদের প্রেমের কথা জানান।

এরপর ধীরাজের বাবার কাছ থেকে জরুরি চিঠি আসে। ঐ চিঠিতে তার বাবা লিখেছিলেন তার মা খুব অসুস্থ এজন্য খুব জরুরি তাকে কলকাতা যেতে হবে । আর মায়ের অসুস্ততার কথা ‍শুনে কলকতার উদ্দেশ্য রওনা দেয় যাবার আগে সে মাথিকে বলে যায় সে আবার ফিরে আসবে কিন্তু সে আর কখনো ফিরে আসেনি । কিন্তু এদিকে মাথীন ধীরাজের দিন থেকে সপ্তাহ,সপ্তাহ থেকে মাস আপেক্ষা কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। এ দিকে ধরাজের অপেক্ষায় অনাহার-অনিদ্রায় সে ঐকূপের ভিতর নিজের জীবন  বিসর্জন দিয়ে গেছেন। আর এজন্যই হয়তো মাথিনের কূপের প্রেমের কাহিনি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।

কীভাবে যাবেন টেকনাফের মাথিনের কূপ দেখতে

ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার বাস রয়েছে সড়ক পথে। এ বাস গুলো বিভিন্ন পরিবহনের এসি –ননএসি ইত্যাদি। ঢাকা টু টেকনাফ রোডে  চলাচলকারী এসি বাস হলো সেন্টমার্টিন সার্ভিস। তাছাড়া শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক সার্ভিস, হানিফ এন্টারপ্রাইজের নন-এসি বাস পরিবহনের বাস চলে এই রোডে। আর আপনি ইচ্ছা করলে কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ যেতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে বাস ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এর পর টেকনাফ পৌঁছে পায়ে হেঁটে বা রিকশায় করে  টেকনাফ থানায় যেতে হবে। আর থানার ভেতরেই রয়েছে ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। 

কোথায় থাকবেন

টেকনাফে থাকার জন্য পর্যটকদের জন্য অনেক হোটেল, মোটেল রয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে আপনাদের পছন্দমত কম দামি বেশি দামি হোটেলে থাকতে পারবেন।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *