গর্ভাবস্থায় কি কি এড়ানো উচিৎ

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। গর্ভাবস্থা যেমন আবেগ আর আনন্দ পুর্ণ ঠিক ততটাই শারীরিক ঝুকির এবং দায়িত্বের। একজন গর্ভবতী মা হিসাবে, নিজের এবং আপনার গর্ভে থাকা ক্রমবর্ধমান শিশুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার এবং আপনার আগত শিশু উভয়ের সুস্বাস্থ্য এবং ঝুকিমুক্ত জন্মদান নিশ্চিত করার জন্য গর্ভাবস্থায় কিছু জিনিস এড়ানো উচিত। চলুন দেখে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি করবেন না বা গর্ভাবস্থায় কি এড়ানো উচিৎ। 

ধূমপান এবং অ্যালকোহল

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গর্ভাবস্থায় ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ কঠোরভাবে এড়ানো উচিত। উভয় পদার্থই বাড়ন্ত ভ্রূণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং গুরুতর সাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি গর্ভের সন্তান অটিজম নিয়ে জন্মাতে পারে।

কিছু ওষুধ

গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে সর্বদা আপনার চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন। কিছু ওষুধ, এমনকি ওভার-দ্য-কাউন্টারও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি একান্তই কোনো রোগের জন্য আপনার ঔষধ খেতেই হয় আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রেগ্ন্যাসি সেইফ ড্রাগ ব্যবহার করুন।

কিছু খাবার

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার যেমন বাদাম, পেপে, আনারস, নারিকেল ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এই খাবার গুলো শিশুর ভ্রুণের বিকাশ ব্যহত করে এমন কি গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। 

আনপাস্তুরাইজড খাবার

পাস্তুরিত দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং জুস খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে লিস্টিরিয়ার মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা শিশুর জন্য সাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার

সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ সী ফুড, ভালো ভাবে সেদ্ধ না হওয়া মাংস  ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীকে আশ্রয় দিতে পারে যা ফুড পয়জনিং ঘটিয়ে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণরূপে ও সুসিদ্ধ  রান্না করা এবং ভালভাবে প্রস্তুত করা মাংস এবং সামুদ্রিক মাছ বা ক্রাস্টাশিয়ান জাতীয় খাবার খাওয়া উচিৎ । 

অত্যধিক ক্যাফেইন 

যদিও গর্ভাবস্থায় মাঝারি পরিমাণে ক্যাফেইন সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়, তবে আপনার প্রতিদিন 200mg-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন গর্ভপাত ঘটায় এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মের জন্য দায়ী।

ভারী বস্তু উত্তোলন এবং কঠোর ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় শারীরিক ভাবে একটিভ থাকা ভালো। এক্ষেত্রে কিছু প্রেগ্ন্যাসির ব্যায়াম করা উত্তম। কিন্তু ভারী বস্তু উত্তোলন এবং কঠোর ব্যায়ামগুলি এড়িয়ে চলা অপরিহার্য যা আপনার শরীরে অযথা চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শিশুর বিকাশে ক্ষতি করতে পারে। এমন কি গর্ভপাত ও ঘটাতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ভারী বস্তু উঠানো এবং কঠোর ব্যায়াম করা উচিৎ না।

স্ট্রেস এবং উদ্বেগ

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মা এবং গর্ভে বিকাশমান শিশু উভয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্রেস কমানোর  জন্য  মানসিক ভাবে সুখী থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, স্ট্রেস কমাতে  নিজের প্রিয় কাজ গুলো করা, পরিবারের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড  বা প্রিয়জনের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও একজন হবু মায়ের পরিবার কে মা টির প্রতি যত্নশীল হতে হবে তার ভালো মন্দ লাগা গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ একজন গর্ভবতী নারীদের হরমোন পরিবর্তন এর কারণে মুড সুইং এর মতো সমস্যা লেগেই থাকে। তাই তারা দ্রুতই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কিংবা স্ট্রেসড হয়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থা হল আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার এবং নিজের যত্ন নেওয়ার একটি সময়। এই সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি এড়ানোর মাধ্যমে এবং সচেতন থাকার  মাধ্যমে, আপনি একটি নিরাপদ এবং সুন্দর  গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে পারেন।  গর্ভাবস্থায় কি কি নিরাপদ এবং কি কি করা উচিৎ নয় এ সম্পর্কে আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে সর্বদা আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন।  মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন নেওয়াই আপনার শিশুর যত্ন নেওয়ার সর্বোত্তম উপায়।

বাংলা গাইড পড়তে Google News Follow করুন

গর্ভাবস্থা নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *