বাংলাদেশে ডলার সংকট এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুরই দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারমধ্যে প্রতিদিন রান্না করার চাল,ডাল,মসলা থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে মসলার পাইকারি বাজার লক্ষ্য করা যায়। তারমধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েকটি মসলার পাইকারি বাজার এবং মসলার দাম নিয়ে আলোচনা করব। 

বিভিন্ন মসলার পরিচিতি 

রান্না করার জন্য আমাদের অনেক ধরনের মসলার প্রয়োজন হয়।মসলা না হলে খাবারের কোন স্বাদই পাওয়া যায় না।সেগুলো আমাদের  বিভিন্ন বাজার থেকে কিনে আনতে হয়।প্রতিদিনের খাবারের তরকারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করার জন্য অনেক ধরনের মসলার প্রয়োজন হয়। যেমন-আদা,রসুন, পেঁয়াজ, জিরা,এলাচি,লবঙ্গ,জয়ফল,জয়ত্রী, গোলমরিচ,ধনে, গরম মসলা, আমচুর, আলুবোখার, হরিতকী, হলুদ, তেজপাতা ইত্যাদির সমন্বয়ে রান্নার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বড় কোন অনুষ্ঠান যেমন-বিয়ে, জন্মদিন বা যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য এই মসলাগুলো অনেক প্রয়োজনীয় উপকরণ। 

রাজধানীর পাইকারি মসলার বাজার

বাংলাদেশের রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবকিছুর পাইকারি ও খুচরা বাজার লক্ষ্য করা যায়।সেগুলো নিয়েই আজকে আলোচনা করা হলো-

চকবাজার

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মসলার বাজার হচ্ছে চকবাজার মৌলভীবাজার। চক বাজারে পাইকারি মসলা জিনিসপত্র থেকে শুরু করে এমন কোন জিনিস নেই যে পাওয়া যায় না। 

কিছু পাইকারি দোকানের নাম 

  • মেসার্স দিদার ট্রেডিং ৪১/১ মৌলভীবাজার,চকবাজার, ঢাকা-১২১১, মোবাইলঃ ০১৭৮৩৩৫৬৭৮৫
  • মের্সাস হাবিব এন্ড ব্রাদার্স ৬নং মৌলভীবাজার, ঢাকা-১১০০, মোবাইলঃ ০১৭১১১৮৫৫৩৬
  • ভাতিজা স্টোর ৪১ নং মৌলভীবাজার, চকবাজার, ঢাকা-১১০০,মোবাইলঃ ০১৭১৫৯৫৬৯১৮
  • মেসার্স এনায়েত এন্ড ব্রাদার্স ১নং, মৌলভীবাজার,চক বাজার, ঢাকা-১২১১,মোবাইলঃ০১৭১১৮৫৮৩৯৭
  • মেসার্স নদী এন্টারপ্রাইজ, ৪১নং, মসজিদ গলি, মোলভীবাজার, ঢাকা-১২১১,মোবাইলঃ ০১৭১৬৪৮৫৮৯২
  • মেসার্স নরসিংদী ষ্টোর ১০/১, আলী হোসেন খান রোড, মৌলভী বাজার, ঢাকা -১১০০,মোবাইলঃ ০১৯৪৯৯০১৮৩৩

কারওয়ান বাজার

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসলা বাজার হচ্ছে কারওয়ান বাজার।কারওয়ান বাজারে চকবাজারের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। কারওয়ান বাজারে যাবতীয় কাঁচামাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায় ।

বেগম বাজার

 রাজধানী চকবাজার এবং বেগম বাজার কাছাকাছি হওয়ায় বেগম বাজারে  মসলা পাইকারি কিনতে পাওয়া যায়। 

টঙ্গী বাজার

ঢাকার টঙ্গী বাজারে মসলা পাইকারিতে কিনতে পারেন। এ বাজারে নোয়াখালী পট্টিতে অনেকগুলো পাইকারি দোকানপাট পাবেন তার কিছু দোকানের নাম নিচে দেওয়া হলো-

  • নোয়াখালী পট্টি শাহাবুদ্দিন সরকার মার্কেট, টঙ্গী বাজার রোড,টঙ্গী মোবাইলঃ ০১৭১১৪৬০৪৬৫
  • মের্সাস তুহিন এন্টারপ্রাইজ শাহাবুদ্দিন সরকার মার্কেট, নোয়াখালী পট্টি,   টঙ্গী রোড, টঙ্গী-১২৩০,মোবাইলঃ ০১৭৫১৬৪৩৩৩৬
  • মের্সাস বাবুল এন্ড ব্রাদার্স দুলাল মিয়া বিপনী বিতান,নোয়াখালী পট্টি, টঙ্গী রোড, টঙ্গী-১২৩০,মোবাইলঃ০১৮৪৩৪৬৪৩৩১
  • মেসার্স ইকবাল এন্ড ব্রাদার্স শাহাবুদ্দিন সরকার মার্কেট নোয়াখালী পট্টি, টঙ্গী রোড, টঙ্গী, মোবাইলঃ০১৮১৪১৭৪৭৪১

ঠাটারি বাজার

পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে ঠাটারী বাজার অবস্থিত। এখানে পাইকারি দামে মসলা পাওয়া যায়।তবে মসলার চেয়ে পশুপাখি কেনাবেচা হয় অনেক।

চট্টগ্রামের মসলার পাইকারি বাজার 

রাজধানীর ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বড় পাইকারি মসলার বাজার দেখা যায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বাজারে ব্যাপক পরিমাণ এলাচের পাইকারি ব্যবসা করা হয়।এলাচের পাশাপাশি অন্যান্য মসলা গুলো পাইকারি দমে পাওয়া যায়। এছাড়াও বরিশালের চৌমুহনী বাজারে পাইকারি দামে মসলা পাওয়া যায়।চৌমুহনী বাজার বরিশাল জেলার মধ্যে বিখ্যাত একটি বাজার। 

পাইকারি বাজার থেকে কেন মসলা নেব?

যেহেতু আমাদের প্রতিদিনের রান্নার কাজে মসলা প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিদিন বাজারে থেকে মসলা না কিনে মাসে একবার মসলা কিনলে সুবিধা হয় এবং দাম কম পাওয়া যায়। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মসলার প্রয়োজন হয় আর মসলা সহজে নষ্ট না হওয়ায় এগুলো মজুদ করে রাখলেও সমস্যা নেই। এছাড়া যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে তাদের জন্য এইসব বড় পাইকারি বাজার থেকে একবারে কিনে নিলে তাদের সুবিধা হয়। একসাথে অনেকগুলো পন্য নিলে দাম কম পাওয়া যায়। তাই জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাইকারি বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতারা রাজধানীর এই সব বড় মার্কেট থেকে মসলা কিনে ব্যবসা করেন। 

মসলার দাম কেমন

বর্তমান সময়ে বাজারের অবস্থা অস্থিতিশীল। সব মসলার দাম ২০টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মসলার সব সময় পরিবর্তনশীল। সব সময় মসলার দাম ওঠানামা করবে। বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা ৫০০ থেকে ৫৭০ টাকা কিন্তু কয়েক মাস আগেও তা ৩৯০ টাকা ছিল, দারুচিনি ৪৩০ থেকে ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, ধনে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা ও তেজপাতা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।মেথি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।গোল মরিচ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।কালোজিরা ২৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।জয়ফল ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকা।জয়ত্রি ১৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা।পাঁচফোড়ণ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমানে মসলার চাহিদা 

বর্তমান সময়ে দেশের পরিস্থিতির সাথে সাথে মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রায় সব কিছুরই দাম উর্ধ্বমুখী।যার কারণে প্রতিদিনের বাজারের জন্য মানুষ খুব বেশি বাজার করতে পারতেছে না। যাদের সীমিত আয় তারা তো একদমই বেশি করে নিচ্ছে না। মানুষের চাহিদার নাগালে থাকলে খুচরা বিক্রেতা এবং সাধারণ মানুষ একটু বেশি করে হলেও কিনে নিয়ে যেত। দেশে করোনা প্রভাব থেকে শুরু করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের জন্য দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সবাই যার যার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতেছে।

শেষ কথা হচ্ছে, বাজার সব সময় ওঠানামা করবে। দেশের পরিস্থিতি ও একসময় ভালো হবে। আশা করা যায় দেশের সকল পণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে হবে। দেশের সরকার এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।কিন্তু দেশের কিছু শুধু ব্যবসায়ীগণ বাজার খারাপ করতেছে যার কারণে বাজারের পরিস্থিতি সবার সাধ্যের মধ্যে হচ্ছে না। আমরা সবাই যদি সবার জন্য চিন্তা করি হয়তো তাহলে দেশের মানুষ ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *