যাকাতের হিসাব

যাকাত কি বা কাকে বলে: যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা ,পরিশুদ্ধতা ও বৃদ্ধি পাওয়া। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছরান্তে  তার সম্পদের শতকরা ২. ৫০ হারে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।

নিসাব হলো ন্যূনতম সম্পদ, যা থাকলে যাকাত ফরজ  হয়। এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানে ধ্বনির সম্পদ পবিত্র পরিশুদ্ধ ও বৃদ্ধি পায়। তাই একে যাকাত বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত গরিবের প্রতি ধনীর দয়া নয় বরং এটা গরিবের অধিকার। তাই আল্লাহ যাকাত আদায় করাকে আবশ্যক করেছেন। যাকাত হল ইসলামের সেতুবন্ধ ।(বায়হাকী)

যাকাতের গুরুত্ব:

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অনেক স্থানে সালাতের সাথে যাকাতের কথাও বলেছেন। যাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। যাকাতের সামাজিক ,নৈতিক ,অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণেই মহান আল্লাহ মুসলমানদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন।

যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব:

যাকাত সমাজ থেকে ও স্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে পারস্পারিক  সৌহার্দ্য স্থাপন করে। সামাজিক নিরাপত্তা দানের পাশাপাশি সমাজের মানুষের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,

  ” যাতে সম্পদ শুধু তোমাদের অর্থশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়। “(সূরা আল- হাশর, আয়াত ৭)

সুতরাং সমাজে যাকাত ব্যবস্থা চালু করে বৈষম্য দূর করে সামনের ভিত্তিতে জীবন গড়ে  তোলাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থা উৎস গুলোর মধ্যে যাকাত হল অন্যতম। এর উপর ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও জনকল্যাণমুখী প্রকল্প সমূহের সাফল্য নির্ভরশীল। ধনী সম্পদ পুঞ্জিভূত না থেকে দরিদ্র লোকদের হাতেও যায়। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতির সচল হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্ব হ্রাস পায় মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভীত মজবুত ও শক্তিশালী হয় । আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকগুলো ধীরে ধীরে সচ্ছল হতে থাকে। তুই দিনে দিনে সম্পদশালী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- 

“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বাড়িয়ে দেন” ।(সূরা আল -, আয়াত ২৭৬)

নৈতিক গুরুত্ব:

যাকাত মানুষের মনে খোদাভীতি সৃষ্টি করে। পবিত্র ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। অপচয় রোধ করতে শেখায়। সর্বোপরি যাকাত মানুষের আত্মিক প্রশান্তি ,নৈতিক উন্নতি, সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। মহান আল্লাহ বলেন-

“আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে সাদাকা ( যাকাত) গ্রহণ করুন। এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র এবং পরিশোধিত করবেন।” (সূরা আত – তাওবা,আয়াত ১০৩) অতএব নৈতিকভাবে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা যাকাত আদায় করব।

ধর্মীয় গুরুত্ব:

কোন মুসলমান যাকাত না দিলে সে আর পরিপূর্ণ মুসলমান থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন- “যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালও অস্বীকারকারী”।(সূরা হামিম আজ- সাজদা ,আয়াত ৭)

যাকাত অস্বীকার করা আল্লাহ তার রাসূলকে অস্বীকার করার শামিল। ইসলামী আইনে যাকাত দানের উপযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। যাকাত হলো আর্থিক ইবাদত। ইসলামে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে যাকাত আদায় করা ঈমানী দায়িত্ব।

কাদের উপর যাকাত ফরজ

যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাদের ওপর যাকাত ফরজ। যেকোনো নর বা নারীর তার প্রয়োজনীয় সম্পদ পূরণের পর যদি কোন সম্পদ বাকি থাকে এবং কি চন্দ্র মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার চোর অতিবাহিত হয় তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হয়।

কাদের যাকাত দেওয়া উচিত: 

  • ফকির
  • নিঃস্ব ব্যক্তি
  • জিহাদ পালনকারী
  • মুসাফির ব্যক্তি
  • ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি
  • অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি

হযরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,

আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু সালামের এমনি কোড নামাজ কায়েম করা জাকাত প্রদান করা ও প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হিতাকাঙ্খী হওয়ার ব্যাপারে ভাইয়ার গ্রহণ করেছি । (বুখারী ১৩১৩)

যাকাত বিরোধীদের পাপ

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ যাকে ধনসম্পদ প্রদান করেছেন এবং সে তার যাকাত প্রদান করে না, কিয়ামতের দিন ওই ধন সম্পদ তার জন্য একটি মস্তক বিশিষ্ট সাপে পরিণত করা হবে। যার সুখের উপর দুটি কালো বিন্দু থাকবে এবং ওই সাপ তার গলায় পেঁচানো হবে। ওই সাপ ওই ব্যক্তির দু পাশে কামড় দিয়ে ধরে বলবে, আমি তোমার ধন-সম্পদ। আমি তোমার জমাকৃত মাল ভান্ডার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাদেরকে যা কিছু দান করেছেন, তা নিয়ে যারা বেখেয়ালি করে, তারা যেন মনে না করে যে, এটি তাদের জন্য কল্যাণকর হবে। বস্তুত এটি তাদের পক্ষে অকল্যাণকর হবে। যারা এ বিষয়ে বেখেয়ালি করেছে, রোজ কিয়ামতে তা তাদের গলায় শিকলের ন্যায় জড়ানো হবে ।(বুখারী ১৩১৫

যাকাত আদায়কৃত মাল সঞ্চিত মালের শামিল নয়:

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি স্বর্ণরুপ ও জমা করে রেখেছে এবং তার যাকাত দেয়নি। তারপর উন্নতি অত্যন্ত অশুভ। আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত টুকু আল্লাহর পথে খরচ করার নির্দেশ যাকাত সম্পর্কিত নির্দেশ নাযিল হওয়ার পূর্বেকার। যাকাতের আয়াত নাজিল করে আল্লাহ যাকাতকে মাল পবিত্র করার উপকরণ বানিয়েছেন ।(বুখারী ১৩১৬)

যাকাত বাবদ দোষযুক্ত পশু কিংবা পাঠা ছাগল গ্রহণ করা যাবে না:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, যাকাত বাবুর যেন বেশি বয়স্ক কিংবা দোষ যুক্ত পশু ও পাঠা ছাগল নেয়া না হয়। অবশ্য আদায়কারী প্রয়োজনবশত পাঠা পশু নিতে চাইলে সে কথা ভিন্ন। (বুখারী ১৩৬৫)

মুসলমানদের উপর তাদের দাস-দাসীর যাকাত নেই:

নবী করিম সাঃ বলেছেন, মুসলমানদের উপর তাদের দাসদাসীর কোন যাকাত নেই। মুসলমানদের দাস ও গোড়ায় কোন যাকাত নেই (বুখারী ১৩৭৩)

যাকাত দাতা নিজের যাকাতের মাল ক্রয় করতে পারে কিনা:

যাকাত দাতা নিজের যাকাতের মাল কখনোই ক্রয় করিতে পারিবে না। যদিও তা হয় কম মূল্যের। নবী করিম সাঃ বলেছেন, সদকার দ্রব্য পুনরায় গ্রহণকারী নিজ বমি  খাওয়ার অনুরূপ। (বুখারী ১৩৯৭)

আজকের আলোচনা থেকে আমরা এটা বলতে পারি যাকাত একটি ফরজ বিধান এবং এটি প্রদানের জন্য কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের যাকাত প্রদান করতে হবে এবং এমন ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করতে হবে যাতে সে সেই অর্থ ব্যবহার করে নিজে সচ্ছল হতে পারে।

আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *