দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ – কখন দোয়া কবুল হয় না
মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তায়ালা জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করছেন শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য। ইহকালের জীবনে আমাদের সুখ-শান্তি, ভালো-মন্দ বা কোন কিছু চাওয়ার জন্য আল্লাহ তা আলার কাছে দোয়া করতে হয়। দোয়া আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রার্থনা করা, ডাকা, আহ্বান করা বা কোন কিছু চাওয়া । আমরা প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়ার মাধ্যমে কিছু না কিছু চেয়ে থাকি।
মুমিন ব্যক্তির একমাত্র হাতিয়ার হল দোয়া। রাসূল (সা.) বলেন, “আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে দোয়া”। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা আমার কাছে কাকুতি মিনতি কর, দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো”। দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কারণ আছে। কি কাজ করলে বা কি কারনে দোয়া কবুল হয় না সে বিষয় সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করব।
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ সমূহ
১. হারাম পথে চলা
দোয়া কবুল না হওয়ার একটা প্রধান কারণ হলো হারাম পথে চলা বা হারাম খাওয়া। কোন ব্যক্তি যদি হারাম পথে টাকা ইনকাম করে তাহলে সেই টাকার মাধ্যমে তার পোশাক আশাক খাবার দাবার সবকিছুই হারাম হয়ে যায়।
হারাম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ বা বর্জনীয়। হারামের পথে চলল, হারাম খেলে আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের খাবার পবিত্র কর, তাহলে তোমাদের দোয়া কবুল হবে। ‘আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে মানব কুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুকরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ‘(বাক্বারাহ ২/১৬৮)
হারাম পথে চললে বান্দার উপর থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি উঠে যায়। আর যখন কোন ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ সন্তুষ্ট উঠে যায় তখন সে নানা রকম বিপদে পড়ে, নানা রকম ঝামেলায় পড়ে। হারাম ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহপাক কুরআনে কারীমে হারাম সম্পর্কে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। হারাম পথে চলা, হারাম খাওয়া ব্যক্তিদের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না।
২. শিরক করা
সবচেয়ে বড় পাপ বলা হয় শিরক করাকে। শিরক করা হলো কবিরা গুনাহ। শিরক দুই প্রকার:
শিরকে আকবার: শিরকে আকবার হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে তুলনা করা। আল্লাহ তাআলা শিরক কারীকে পছন্দ করেন না এবং শিরক কারীর দোয়া আল্লাহতালা কবুল করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করোনা। তাহলে নিন্দিত ও জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ‘(বনি ইসরাইল)
শিরকে আসগার: এই শির্ককে বলা হয় ছোট শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেছেন শুধুমাত্র আমাকে দেখানোর জন্য আমার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করো। কিন্তু আমরা আল্লাহ তাআলার কথা অমান্য করে লোক দেখানো ইবাদত করি। লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কোন আমল করাটা হচ্ছে একটা শিরক। আমাদের সবার উচিত শিরক করা ছেড়ে দেওয়া। আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়া কবুল করবেন।
৩. আল্লাহ তাআলা ইবাদত বন্ধ করা
নিয়মিত সালাত আদায় না করলে, রোজা না রাখলে, যাকাত আদায় না করলে আল্লাহ তায়ালা সেইসব ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না। সেসব ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতালার দরবারে কবুল হয় না। ইবাদত সম্পর্কে কুরআনে বলা আছে, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায় তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে। আমাদের সবাইকে নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়তে হবে। আল্লাহর নির্দেশ মানতে হবে। এতে আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে আমাদের দোয়া কবুল করবেন।
৪. আত্মীয়তা ছিন্ন করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের স্থান হাতে জাহান্নামে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্য রাখতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন তার ছিন্ন করে, এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং মন্দ ভাগ্য ‘
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কারী ব্যক্তি দোয়া করলে তার দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছায় না। দোয়া কবুল হওয়ার প্রধান উপায় হলো নিজেকে আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণ করা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রাখা।
৫. দোয়া করার সময় তাড়াহুড়া করা
কথায় আছে না- তাড়াহুড়া জীবনের ক্ষয়, আল্লাহতায়ালা দিলে অল্পতেই হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার সময় মন শান্ত রাখতে হবে। তাড়াহুড়া করা যাবে না।
৬. হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া
হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলে সে ব্যক্তি কোন উন্নতি করতে পারবে না। দোয়া করার সময় প্রয়োজন পূর্ণ মনোযোগ এবং পজিটিভ চিন্তা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা পরিপূর্ণ আস্তা নিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করো। এটা জেনে রেখো যে,অমনোযোগী ব্যক্তিদের আল্লাহতালা পছন্দ করেন না এবং তার দোয়া কবুল করেন না। দোয়া করার সময় পূর্ণ মনোযোগ থাকতে হবে।
আপনি কি বিষয়ে দোয়া করতেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে কি চাচ্ছেন, সে বিষয়ে আপনার মনোযোগ স্পষ্ট থাকতে হবে।নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিতে হবে। আল্লাহর কাছে আমি দোয়া করতেছি আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। এইরকম মনোভাব নিয়ে দোয়া করতেই হবে। আজ নয়তো কাল আল্লাহ তায়ালা ঠিকই আপনার দোয়া কবুল করবেন। হতাশ হওয়া যাবে না ও মনোযোগী হওয়া যাবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য চেষ্টা করতে হবে। মোটকথা দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না।
কিছু প্রশ্ন
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার উপায় আছে কি ?
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে কাকুতি মিনতি করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দোয়া পড়ে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহ নিয়ে দোয়া করতে হবে। নম্র ভদ্রতার সাথে দোয়া করতে হবে।
দোয়া কবুল হওয়ার লক্ষণ কি ?
দোয়া কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো দোয়া করার সময় আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা বেড়ে যাবে, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরবে। আল্লাহর ভয় গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহর ইবাদতে নিজের মন মগ্ন হয়ে যাবে। দোয়া করার সময় মনোযোগ বেড়ে যাবে। এমন যদি হয় তাহলে বুঝে নিবেন আল্লাহর দরবারে আপনার দোয়া কবুল হয়ে গেছে।
কোন সময় দোয়া কবুল হয়
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার কিছু সময় থাকে। রমজান মাসে ইফতারের আগে আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়। এছাড়া ফজরের নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। আজান ও ইকামতের মাঝখানে যে সময় সেই সময় দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে গোপনে কান্নাকাটি করলে, তার কাছে মন থেকে চাইলে আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করে দেন।
দোয়া কবুলের তাসবীহ
যে ব্যক্তি, প্রতিদিন চাশতের নামাজের পর ১০০ বার করে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম ‘আস- সামিয়ু’ পাঠ করবে। ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতালার দরবারে কবুল হয়।
মন্তব্য
এতক্ষণ আমরা দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করলাম। এছাড়া আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলাম। আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক। আমাদের সবার নেক দোয়া গুলো কবুল করুক। আমিন।
আরও পড়ুন