আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছু চাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দোয়া। বান্দা যদি সঠিক নিয়তে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা সেটা কবুল করেন। পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তা’আলা সবার মনের কথা  জানেন। তিনি বুঝতে পারেন বান্দা কি বলতে চায়। কিন্তু আমরা যদি সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে দোয়া করতে না পারি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কথা শুনবেন না। আমাদের দোয়া কবুল করবেন না। 

কোরআন ও হাদিসে দোয়া কবুল সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে। সেগুলো অবশ্যই আমাদের জানতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা আমরা জানি না কিভাবে দ্রুত দোয়া কবুল হয?  দোয়া কবুলের আমল সময় এবং স্থান কি? তো আজকে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং আপনাদের বোঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন। 

দোয়া কি? দোয়া সম্পর্কে কিছু কথা –

দোয়া শব্দের বহুবচন আদ ইয়াহ এবং  দোয়া শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো আল্লাহকে আহবান করা,  আল্লাহকে ডাকা, আল্লাহকে তলব করা। আমাদের পরকালের কান্ডারী,শত শত নবী-রাসূলের শিরোমনি, যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তায়ালা কিছুই সৃষ্টি করতেন না, আমাদের সেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দোয়াকে ইবাদতের অংশ বলেছেন। 

আল্লাহ পাক কোরআনুল কারীমে বলেছেন, “”তোমাদের পালনকর্তা বলেন তোমরা সব সময় আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব, আমার ইবাদত করতে যারা অহংকার করে তারা অতি সত্বর জাহান্নামে যাবে এবং লাঞ্ছিত হবে “”(সূরা আল মুমিন) মুসলমানদের জন্য দোয়া একমাত্র পন্থা যা অবলম্বন করে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহ তাআলা সর্বজান্তা তিনি সব কিছুই জানেন। বান্দা যখন তার কাছে আকুতি মিনতি করে দোয়া করে তখন তিনি বান্দার দোয়া সাথে সাথে কবুল করে নেন। আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। 

দ্রুত দোয়া কবুলের আমল কি কি? 

দোয়া সম্পর্কে তো আমরা জানলাম এখন আমাদের জানতে হবে দ্রুত দোয়া কবুলের আমল গুলো কি কি?? কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ তা’আলা তাড়াতাড়ি আমাদের দোয়া কবুল করেন – দ্রুত দোয়া কবুলের কিছু আমল আছে যেমন :

দোয়া করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে: এই মহাবিশ্বের পালনকর্তা, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিনি সমস্ত জাহানের মালিক এক ও অদ্বিতীয়, দোয়া করতে হবে শুধুমাত্র সেই মহান রাব্বুল আলামিনের জন্য। আমরা নিরীহ, আমরা অসহায়, আমরা সর্ব ক্ষমতার অধিকারী না। জীবনে চলার পথে আমরা বিপদ-আপদে পড়ি, বিভিন্ন অসুখে পরি, অভাব অনটনে দিন কাটাতে হয়। এরকম কষ্টের মুহূর্তে আমাদের একমাত্র সাহায্য দাতা আল্লাহ তাআলা। তিনি ব্যতীত অন্য কারো কাছে দোয়া চাওয়া যাবে না। নয়তো আমরা গুনাহগার হব। 

কান্নাকাটি ও মিনতি করে দোয়া করা: দ্রুত দোয়া কবুলের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে কান্নাকাটি করতে হবে মিনতি করতে হবে। প্রত্যেক নামাজের মোনাজাতে হাত তুলে মন খুলে আল্লাহ তাআলার কাছে নরম সুরে মিনতি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার জন্য চোখের জল ফেলতে হবে। কারণ এই পৃথিবীতে বাবা-মা, ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন কেউ আপনার আপন নয়। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর কেউ আপনার সঙ্গে যাবে না। আপনাকে কবরে রেখে আসার পর সবাই দুনিয়াবী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আপনি তখন একা হয়ে যাবেন এবং শুধুমাত্র আল্লাহকে ডাকতে পারবেন। সে সময় আপনার আর কিছুই করার থাকবে না। 

তাই ইহকালের জীবনে নিজের ভুল ত্রুটির জন্য, নিজের সুখ শান্তির জন্য, অভাব অনটন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, ইসলামের পথে অটল থাকার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে হাত তুলে মিনতি করে কান্নাকাটি করে দোয়া করতে হবে। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা আপনার কথা শুনবেন এবং দোয়া দ্রুত কবুল হবে। 

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে দোয়া করতে হবে: ইসলাম ধর্মের সর্বপ্রথম শর্ত হলো আল্লাহকে মনে প্রানে বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা। কেউ যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনে তাহলে তাকে আগে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরিক বা সমকক্ষ নেই। তিনি চিরকাল আছেন চিরকাল থাকবেন এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন সবাই তার মুখাপেক্ষী। 

আল্লাহ তাআলার প্রতি মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখতে হবে তারপর দোয়া করতে হবে তাহলে সেই দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হবে। মনের মধ্যে এরকম একটা বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে যে, আমি দোয়া করতেছি শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য, আর আমি এটা বিশ্বাস করি যে  আল্লাহ তায়ালা একদিন না একদিন আমার কথা শুনবেন এবং আমার দোয়া কবুল করবেন। আর যদি মনের মধ্যে সন্দেহ থাকে, তাহলে সেই দোয়া কখনই কবুল হবে না। 

হারামের পথ ত্যাগ করে দোয়া করা: ইসলাম হালাল হারামের বিষয়ে খুবই কঠিন। হারাম পথে এক টাকা ইনকাম করলে সেই ১ টাকায় সমস্ত ইনকাম কে ধ্বংস করে দেয়, সমস্ত ইনকামকে হারাম বানিয়ে ফেলে। হারামের পথ ত্যাগ করে সহি শুদ্ধ হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে ফিরিয়ে দেবেন না ইনশাআল্লাহ। আর যদি হারামের পথ ত্যাগ না করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাহলে যতই দোয়া করেন না কেন কোন লাভ হবে না। 

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করা: মহান আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম 99 টি। যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম নিয়ে তাকে ডাকেন তার কাছে দোয়া করেন, এখন আল্লাহ তাআলা খুব খুশি হন এবং সেই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেন না। আমাদের সবার উচিত সবসময় আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করা। 

দোয়া করার আগে দরুদ শরীফ ও তাজবীহ পাঠ করা: আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন যদি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনি সৃষ্টি না করতেন তাহলে পৃথিবীর কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আর সেই মহান একজন নবী ও রাসূলের উম্মত আমরা। আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে আমাদের নবীকে স্মরণ করা। নামাজের শেষ বৈঠকে মোনাজাতের আগে বিভিন্ন তাজবীহ পাঠ করে,  দরুদ শরীফ পড়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহতালার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়ে যায় 

দোয়া কবুলের সময় ও স্থান 

  • আল্লাহ তাআলা আযান ও ইকামতের মাঝখানের সময়ে কোন বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না এই সময় দোয়া কবুল হয়। অর্থাৎ আযান দেওয়ার পর থেকে নামাজের ইকামত দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কোন ব্যক্তি দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল। 
  • কোন বান্দা যদি সিজদারত অবস্থায় দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সেই দোয়া ফিরিয়ে দেননা সাথে সাথে কবুল করেন। 
  • রমজান মাসে ইফতারের আগ মুহূর্তে রোজাদারের দোয়া আল্লাহতালা ফিরিয়ে দেন না। রমজান মাসে ইফতারের আগ মুহূর্তে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়ে যায় 
  • মুসাফিরের ও মজলুমের দোয়া আল্লাহতালা কবুল করেন। যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সফর অবস্থায় থাকে তখন সেই ব্যক্তির দোয়া আল্লাহতালা কবুল করেন। 
  • ঝড় বৃষ্টি চলার সময় দোয়া করলে সে দোয়া আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন 
  • কোন মানুষ যখন দুঃখ দুর্দশা জর্জরিত হয়ে যায় এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাকে ফিরিয়ে দেন না। 

শুক্রবারে দোয়া কবুলের আমল গুলো কি 

সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন বেশি ফজিলতপূর্ণ কারণ এই দিনে মহান রাব্বুল আলামিন কিছু বিশেষ ফজিলত রেখেছেন। “”আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা ” জুমার দিন আসরের নামাজ আদায় করার পর বসা অবস্থায় এই দুরুদ শরীফ ৮০ বার পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তিনি ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব পাবেন । 

দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ গুলো কি? 

দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে 

  • হারাম পথে চলা
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা 
  • নামাজ কালাম না পড়া 
  • আল্লাহ ভীতি না থাকা 
  • দোয়ার সময় তাড়াহুড়ো করা
  • দোয়ার সময় সন্দেহ করা  
  • শিরক করা 
  • দোয়ার সময় মনোযোগ না থাকা 
  • আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস না থাকা
  • অল্পতেই নিরাশ হয়ে যাওয়া 

যাদের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না 

ইসলামী বর্ণিত আছে আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেন না তারা হলেন 

  • রোজাদার ব্যক্তি যখন ইফতার করে তখন তার দোয়া 
  • মজলুম, নিপীড়িত ব্যক্তির দোয়া। 
  • সুদক্ষ সুশীল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া 

মন্তব্য 

দ্রুত দোয়া কবুলের আমল সময় ও স্থান নিয়ে এতক্ষণ  আমরা আমাদের আর্টিকেল আলোচনা করলাম। আপনারা যারা আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন আশা করি তারা সবাই বুঝতে পেরেছেন কি কাজ করলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়। দোয়া সম্পর্কে বা অন্য যেকোনো বিষয় সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টে জানাবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *