কোরবানির অর্থ আত্মত্যাগ করা নিজের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করা। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহ তাআলা কোরবানি বিত্তবানদের জন্য ওয়াজিব করেছেন। কোরবানি নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কথা  বা কিছু বিষয় আছে। কোরবানি করার সময় ইমামকে দেখা যায় জোরে জোরে কোরবানি দাতার নাম উচ্চারণ করতে। অর্থাৎ কার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া হচ্ছে তার নাম আগে নির্দিষ্ট করে নেওয়া। এটা সমাজের প্রচলিত নিয়ম, সবার মনে হয় তবে একটা প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে, কারো নামে কি কোরবানি দেওয়া যায়?? নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে ইসলাম কি বলে??? এসব প্রশ্নের উত্তর যারা জানেন না তাদের জন্য আমাদের আজকের এই লেখাটি। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয় ইসলাম কি বলে। এবং কোরবানির সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি  বিষয়। 

ইসলামের শর্ত কি?

নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে ইসলামের মতামত কি? 

মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতে হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দিতে রাজি হয়েছিলেন। নিজের চোখ বেঁধে যখন ছেলের গলায় চুরি চালালেন পক্ষান্তরে দেখলেন ছেলের বদলে পশু কোরবানি হয়ে গেছে। সবই ছিল আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা। 

নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানিনা। আমাদের সবার জানা উচিত কারো নামে কোরবানি দেওয়া যায় কিনা বা এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? কোরবানি দেওয়ার সময় কুরবানী দাতার নাম উচ্চস্বরে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। আমরা অনেকেই কোরবানি দেওয়ার সময় ইমাম সাহেব কে বলি যেন কোরবানি দাতাদের নাম আগে প্রকাশ করে তারপর কুরবানী করে। কিন্তু এটার মোটেও প্রয়োজন নেই। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের মনের কথা সবই জানেন সবই বোঝেন। যখন একটা পশু কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় এবং সেই পশুতে যে কয়েকজনের অর্থ থাকে। সেই কয়েকজনের নামেই কোরবানি হয়ে যায়। জবাই করার আগ মুহূর্তে নাম প্রকাশের কোন দরকার নেই। ইমাম সাহেব এমন করতে পারেন যে, কোরবানির পশুর জবাই করার আগ মুহূর্তে কোরবানি দাতাদের নাম উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন। একটা পশু যখন কেনা হয় তখনই নির্ধারিত হয়ে যায় যে কার কার পক্ষ থেকে পশুটি কেনা হচ্ছে। কোরবানি করার সময় মুখে নাম উচ্চারণ করা সুন্নত বা ফরজ নয়। তাই পশু কোরবানি করার আগ মুহূর্তে নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন নেই। 

মৃত ব্যক্তির নামে কি কোরবানি দেওয়া যায়? 

মৃত ব্যক্তির নামে কি কুরবানী দেওয়া যায়?? এই প্রশ্নটা নিশ্চয়ই সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! এর উত্তর হলো হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সওয়াবের আশায় মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যদি কেউ কোরবানি দেয় তাহলে কোরবানি হবে। সেই সাথে কোরবানি দাতাও কোরবানির সওয়াব পেয়ে যাবেন। 

এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, যদি মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে থাকেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে যদি বলেন যে আমি মারা যাওয়ার পর আমার নামে কুরবানী দিতে হবে। তাহলে তার ওসিয়ত অনুযায়ী কোরবানি দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই কুরবানীর মাংস খাওয়া যাবেনা। এই কোরবানিতে গরিব মিসকিনদের হক। এই কোরবানির মাংস গরিব মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। 

আর যদি মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে না যান তবুও কোরবানি দেওয়া যাবে আর এই কোরবানির মাংস সবাই খেতে পারবে কোন সমস্যা হবে না। মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তার নামে কোরবানী দেওয়া যাবে কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে যিনি কোরবানি দিলেন তিনিও সওয়াব পাবেন। যার নামে কোরবানি দেওয়া হল তার আমলনামায় সওয়াব পৌঁছে যাবে। 

কয় ভাগে কুরবানী করা যায় 

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মানেই কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদে দেখা যায় অনেকে ভাগে কোরবানি করেন। আবার অনেকেই জানেন না যে কোরবানিতে কয় ভাগ দিতে হয়। কয় নাম দিয়ে কোরবানি করলে কোরবানি সহিহ হয়। আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট লাভের জন্য বা নৈকট্য লাভের জন্য মুসলমানগন কেউ একা কোরবানি দিয়ে থাকেন আবার কেউ ভাগে কোরবানি দেন। 

ভাবে কোরবানি দেওয়ার কিছু নিয়ম। উট কোরবানি দিতে ১০ নামে দেয়া যাবে। গরু ৭ নামে কোরবানি দেওয়া যাবে। ছাগল কোরবানি দিতে হলে একজনকেই দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা ভাগে কুরবানী দেওয়াকে জায়েজ করেছেন আল্লাহ তাআলা কোরবানির জন্য যেসব পশুকে  হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে থেকে কুরবানী করতে হবে। যেমন উট, দুম্বা, গরু, ছাগল, ভেড়া। এছাড়া কোরবানির পশুর গায়ে যতটি পশম থাকে ঠিক ততটি সব পাওয়া যায়। 

কিভাবে কুরবানী করলে কোরবানি কবুল হয় 

কোরবানি করতে হবে তাই করলাম এরকম মন মানসিকতা নিয়ে কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হয় না। কোরবানি করার জন্য কোরবানির বিভিন্ন শর্ত আছে সেগুলো  মানতে হবে। আর কোরবানি হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আমাদের সমাজে অনেকেই অজ্ঞতার কারণে বিভিন্ন মাজারে কোরবানি দিয়ে থাকি। এতে কোরবানির সহি হবে না। বরং এতে পাপের বোঝা মাথায় আসবে কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। 

কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত 

  • কোরবানি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। 
  • আল্লাহ ও নবী রাসূলের তরিকায় হওয়া 
  • নিজের মনকে ঠিক করা 
  • আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার মত  মন-মানসিকতা তৈরি করা। 
  • হালাল অর্থ ব্যবহার করা। 
  • নিয়ত সহিহ হওয়া 
  • কোরবানির মাংস সঠিকভাবে বন্টন 
  • সুন্দর সাবলীল প্রিয় পশুকে কুরবানী করা 
  • মোহাব্বতের সহিত কোরবানি করা 
  • ভাগে কোরবানি দেওয়ার খেতে প্রত্যেকের রোজগার হালাল হতে হবে। 

নবীর নামে কোরবানি দেয়া যায়? 

সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা  আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে পারবেন। সেটা হবে উত্তম এবং সৌভাগ্যের বিষয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওসিয়ত করেছিলেন যেন তার মৃত্যুর পর তার নামে কোরবানি দেওয়া হয়। সেই থেকে হযরত আলী (রা.) কারিম (সা.) এর নামে কোরবানি দিতেন। সেই সময় সাহাবীরাও মোহাম্মদ  (সা.) এর নামে কোরবানি দিতেন। আমরা যারা বিত্তবান আছি, আমাদের উচিত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া। 

কোরবানির পশুর বয়স কত হবে 

সহীহ ও সঠিকভাবে কোরবানি করার জন্য উপযুক্ত বয়সের পশু নির্বাচন করতে হবে। কোরবানি করার ক্ষেত্রে উঠের বয়স  হতে হবে ৫ বছর। এর চেয়ে কম বয়সের উট কোরবানি হবে না। 

  • গরু ও মহিষের বয়স হতে হবে ২ বছর। 
  • ছাগ,  ভেড়া, দুম্বা বয়স হতে হবে এক বছর। 

ছাগল ভেড়া দুম্বার বয়স যদি এক বছর না হয়, যদি দেখতে সুন্দর, নাদুসনুদুস হয়, যদি দেখে এক বছর বয়সের ছাগ,  ভেড়,  দুম্বা মনে হয় তাহলে সেই পশু কোরবানি করলে কোরবানি জায়েজ হবে। অন্যথায় কোরবানির জায়েজ হবে না। 

মন্তব্য

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম নামে কোরবানি দেওয়ার বিষয়ে ইসলামের শর্ত সমূহ। এছাড়াও কোরবানির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারছেন। 

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *