ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে একটি হল নামাজ বা সালাত।  প্রত্যেক মুসলমানের উপর নামাজ ফরজ। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা প্রত্যেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখ ” আল্লাহ তাআলা বলেছেন,” আমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, অতএব তোমরা আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত আদায় কর “মুসলমানদের জন্য সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের মধ্যে আমাদের অনেকেরই কিছু  ভুল ত্রুটি থাকে যেগুলো আমরা লক্ষ্য করি না। যার ফলে আমাদের নামাজ সঠিকভাবে আদায় হয় না। আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে হলে সঠিকভাবে সালাত আদায় করার কোন বিকল্প নেই। আজকে আমরা আলোচনা করব নামাজের ভুলত্রুটি নিয়ে এবং নামাজে ভুল হলে কি করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব..

1.নামাজের প্রচলিত ভুলগুলো কি কি ?

নামাজ এমন একটা জিনিস যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে আবেদন করা যায়। কোন কিছু চাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত প্রদান কর,  আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য স্বীকার কর।

মানুষ মাত্রই ভুল করে।  মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। ভুলের ঊর্ধ্বে শুধু একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলা। যিনি আমাদের পালনকর্তা, আমাদের রব। নামাজের মধ্যে আমরা মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে থাকি। কিন্তু ভুলের সমাধান হয়তো বা অনেকেই জানিনা। ফলে আমাদের নামাজ সঠিক হয় না। আমাদের এবাদত সঠিক হয় না। 

নামাজের প্রচলিত ভুল:

  • আমরা অনেকেই অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে ওযু করি। এতে করে দেখা যায় মাঝে মাঝে অজু করার নিয়ম ভঙ্গ হয়। হাত কোনই বা পায়ের কিছু কিছু জায়গা শুকনো থাকে। কিন্তু আমার সেদিকে লক্ষ্য না করেই নামাজ পড়তে চাই। এটা হচ্ছে নামাজের প্রচলিত একটা ভুল। 
  • অনেক সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আমরা এদিক সেদিকে তাকাই। কিন্তু নামাজে নামাজে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক না তাকিয়ে সিজদাহ দেওয়ার জায়গায় তাকাতে হবে। 
  • জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করার সময় অনেক সময় লাইন আঁকাবাঁকা হয়ে যাওয়া। 
  • জামাতে নামাজের সময় লাইনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা। 
  • নামাজের আদব সম্পর্কে অজানা 
  • নামাজের রাকাত পূর্ণ না করেই শেষ বৈঠকে বসা 
  • রাকাতের চেয়ে অতিরিক্ত নামাজ পড়া 
  • সূরা ফাতিহা পড়ার পরেই রুকুতে যাওয়া।

2.নামাজের ভুল সংশোধন করার উপায় বা করণীয় কি? 

নামাজ পড়ার সময় আমরা ভুল করে থাকি। কিন্তু যদি নামাজের আগে ভুল হয় তাহলে করণীয় আলাদা। আবার নামাজের মধ্যে ভুল হলে তার করণীয় আলাদা। নামাজের মধ্যে ভুল হলে তার সংশোধন করা দরকার। তা না হলে আমাদের নামাজ সঠিক হবে না। আল্লাহর নৈকট্য লাভের পরিবর্তে আমরা গুনাহগার হব। 

নামাজের মধ্যে ভুল হলে তার সংশোধন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সাহু সেজাদাহ দেওয়া। অনেক সময় দেখা যায় আমরা মনের ভুলে সুরা ফাতিহা পড়ার পরই রুকুতে চলে যাই। এক্ষেত্রে সাহু সেজদাহ দেওয়ার প্রয়োজন হবে। সাহু সিজদাহ দিয়ে নামাজকে সঠিক করে নিতে হবে। আবার দুই রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে এক রাকাত পড়ার পরেই বসে পড়ি। এক্ষেত্রেও সাহু সেজদাহ দেওয়ার দরকার হবে। 

জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার সময় যদি ইমামের কোন ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ ইমাম যদি রুকু দিতে ভুল করে বা সেজদাহে ভুল করে। তাহলে পিছনে থাকা মুসল্লিদের মধ্যে একজনকে আল্লাহু আকবার বলে ইমামকে সতর্ক করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শেষ বৈঠকে সাহু সিজদাহ দেওয়ার প্রয়োজন হবে।

3.সাহু সেজদাহ দেওয়ার নিয়ম 

একাকী নামাজ পড়লে বা জামাতের সহিত নামাজ পড়লে যখন ভুল হয়ে যায় তখন নামাজ সঠিক করার জন্য সাহু সেজদাহ দিতে হয়। যদি নামাজের মধ্যে সুরা পড়তে ভুল হয় বা রুকু ও সেজদাহ দিতে ভুল হয় তাহলে শেষ বৈঠকে  বসে আত্তাহিয়াতু পড়তে হবে। এরপর ডান পাশে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফেরাতে হবে। তারপর বাম পাশে সালাম না ফিরিয়ে আল্লাহু আকবার বলে দুইবার সিজদায় যেতে হবে। এরপর বসে আত্তাহিয়াতু পড়তে হবে। দুরুদ শরীফ পড়তে হবে। তারপর দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। এরপর আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে ডানপাশে একবার সালাম ফেরাতে হবে এবং বাম পাশে একবার সালাম ফেরাতে হবে।  এটি হলো সাহু সেজদাহের নিয়ম। 

সাহু সেজদাহ সাধারণত তিন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় —-

নামাজ অতিরিক্ত হয়ে গেলে: নামাজ যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় অর্থাৎ চার রাকাত নামাজ যদি পাঁচ রাকাত বা ছয় রাকাত হয়ে যায়, নামাজের রুকু সেজদাহ যদি বেশি দিয়ে ফেলেন তাহলে সাহু সেজদাহ দিতে হবে।

নামাজে কোন ওয়াজিব বাদ পড়লে: ওয়াজিব কাজ ভুলে গেলে অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের মধ্যে দুই রাকাত নামাজের বৈঠক করা ভুলে গেলে সাহু সেজদাহ দিতে হবে। অথবা দোয়া পড়তে ভুলে গেলে সাহু সেজদাহ দিতে হবে

মনের মধ্যে সন্দেহ জাগলে: নামাজে যদি আপনার মনে সন্দেহ জাগে যে হয়তোবা আপনি রুকু দিতে ভুলে গেছেন বা সূরা পড়তে ভুলে গেছেন বা সেজদা বেশি দিছেন। তাহলে সাহু সেজদাহ দিতে হবে।

4.জানাযার সালাতে ভুল হলে করণীয় কি? 

জানাযার সালাত পড়তে হয় চার তাকবীরের সহিত। জানাযার সালাতে কোন রুকু সেজদাহ নেই। যেহেতু জানাযার সালাতে চার তাকবীর, সেহেতু ইমাম সাহেব যদি তিন তাকবীর দিয়ে সালাত আদায় করেন তাহলে সালাত ভঙ্গ হবে। আবার যদি চার তাকবীরের বেশি তাকবীর দেন তাহলে সালাতের কোন সমস্যা হবে না সালাত আদায় হবে। এক্ষেত্রে পঞ্চম তাকবীরের সময় মুসল্লিদের চুপ থাকতে হবে। জানাযার সালাতে সাহু সেজদাহের প্রয়োজন নেই। 

5.ঈদের নামাজে ভুল হলে করণীয় কি? 

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমাদের মধ্যে অনেকেই সবচেয়ে বেশি ভুল করি ঈদের নামাজে। তবে যদি ঈদের নামাজে ছোটখাটো ভুল হয় তাহলে সাহু সেজদাহ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বিজ্ঞ আলেমগণ মনে করেন,,ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় কয়েকটি গ্রাম বা মহল্লা নিয়ে। এখানে অসংখ্য মানুষ সালাত আদায় করে। যদি কোন ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে এত বড় জামাতে সাহু সেজদাহ দেওয়াটা সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু যদি বিশেষ কোনো ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। তাহলে অবশ্যই সাহু সেজদাহ দিয়ে নামাজ সঠিক করে নিতে হবে। 

6.জুমার নামাজের ফজিলত কি? 

জুমার দিন হচ্ছে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক প্রিয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুমিনগণ, জুমার দিন যখন আজান দেওয়া হয়, নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা দুনিয়াবী কাজকর্ম ছেড়ে, আল্লাহর স্মরণে মসজিদে এগিয়ে যাও। নিশ্চয়ই এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। 

জুমার দিনে মসজিদে প্রবেশের জন্য আল্লাহ তাআলা সবাইকে উপহার দিয়ে থাকেন। যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, তার আমলনামায় একটা উট কোরবানির সওয়াব লেখা হয়। এরপর যে যাবে, সে একটা দুম্বা কোরবানির সব পাবে। এইভাবে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেকের আমলনামায় সাওয়াব লেখা হয়। 

7.কিভাবে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়? 

নামাজ পড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং সওয়াব অর্জন করা। একাকীত্ব নামাজ পড়ার চাইতে, জামাতের শহীদ নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের শহীদ নামাজ পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। একটানা 40 দিন জামাতের শহীদ নামাজ আদায় করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আমাদের পুরস্কার দিবেন। 

8.কোন অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না? 

কোন অবস্থাতেই নামাজ বাদ দেয়া যাবেনা। আপনি যদি দাঁড়াতে না পারেন তাহলে বসে নামাজ পড়ুন। যদি বসতে না পারেন তাহলে শুয়ে নামাজ পড়ুন। তারপরও নামাজ মিস করা যাবে না। পৃথিবীর সকল কাজকর্মের ঊর্ধ্বে নামাজ। আযান শুরু হয়েছে মানে আপনাকে নামাজের জন্য এখন প্রস্তুত হতে হবে। 

9.নামাজের আদব কি 

নামাজের আদব বলতে নামাজের নিয়ম, শৃঙ্খলা। নামাজে সঠিকভাবে দাঁড়ানোর পদ্ধতি, হাত বাধার পদ্ধতি, রুকু সেজদাহের নিয়ম, দোয়া কেরাত পাঠ করার নিয়ম। নামাজ যাতে  ভঙ্গ না হয় সেজন্য নামাজের আদব সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। সহীহ শুদ্ধ নামাজ ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। 

আমাদের কিছু কথা 

নামাজের প্রচলিত ভুল ত্রুটি ও সমাধান এবং নামাজ সম্পর্কে আরো কিছু বিষয় আমরা আমাদের আর্টিকেলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন। নামাজ সম্পর্কে আপনাদের মনে যদি আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। 

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *