আল্লাহ তাআলা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তার একত্ববাদ এবং তার এবাদত করার জন্য। আমাদেরকে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ দিয়েছেন। কালেমা, নামাজ,  রোজা, হজ, যাকাত। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য নামাজ ফরজ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি। নামাজ ব্যতীত  কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম তাঁর বান্দার নামাজের হিসাব নিবেন। 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ যখন কোন মুসলমান বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সালাত আদায় করে তখন তার উপর থেকে পাপ গুলো ঝরে পড়ে যায়’। যেমনটা গাছের শুকনো  পাতা ঝরে পড়ে। অনেকেই নিয়মিত সালাত আদায় করেন কিন্তু নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানেন না । নামাজ ভঙ্গের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন। অথচ প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ বিষয়ে জানা। তো আজকে আমরা জানবো, নামাজ কেন কবুল হয় না? কি কারনে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়? চলুন আলোচনা করা যাক –

১.কি কারনে নামাজ কবুল হয় না 

নামাজ কবুল না হওয়ার কিছু কারণ আছে সেগুলো হল —

সুদ ঘুষ খেলে 

আল্লাহতালা ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন। কিন্তু সুদ এবং ঘুষকে হারাম করে দিয়েছেন। সুদ নেওয়া এবং সুদ গ্রহণ করা দুজনে সমান অপরাধী।সুদখোর এবং ঘুষখোরের নামাজ আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। কোন ব্যক্তি যদি এক টাকা ঘুষ খায় আবার সেই টাকা যদি তার ব্যবসার মধ্যে লাগায়, তাহলে সেই ব্যবসার সমস্ত টাকাই হারাম হয়ে যাবে। 

সমাজে অনেক লোক আছেন যারা সুদ খান, ঘুষ খান এবং  নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। কিন্তু তারা জানে না যে তাদের এই নামাজ কবুল হবে না। হালাল পথে থাকতে হবে। হালাল রুজি ইনকাম করতে হবে। নামাজের প্রথম শর্তই হচ্ছে হালাল পথে চলা হালাল রুজি ভক্ষণ করা। তাই সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়,  ছেড়ে দিতে হব।  হারাম পথে থাকা ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই নামাজ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হলে 

আচ্ছা একটা চিন্তা করেন তো, নামাজ কেন পড়তেছেন? কার জন্য পড়তেছেন? হয়তো এটার উত্তর আমরা কম বেশি সবাই জানি। আবার অনেকেই জানিনা। অনেকেই মনে করেন যে এটা একটা দায়িত্ব। নামাজ পড়ার দরকার তাই পড়তেছি। কিন্তু আমাদের জানতে হবে যে নামাজ পড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহকে খুশি করা। নামাজ শুধু মাত্রই আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে নামাজ পড়লে সেই নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না বরং আপনি গুনাহগার হবেন। 

অনেকেই আছেন বিভিন্ন মাজারে গিয়ে মাজারে শুয়ে থাকা ব্যক্তির নামে নামাজ পড়েন, মানত করেন। তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই বিষয়টা পুরাটাই হলো শিরক। সাহায্য করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। যা কিছুই করতে হবে সব আল্লাহর উদ্দেশ্যে। নামাজ যাতে  কবুল হয় সেজন্য নামাজে মন প্রাণ স্থির রাখতে হবে। উদ্দেশ্য থাকবে একটাই যে আমি নামাজ পড়তেছি শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য। অন্য কারো জন্য নয়।

লোক দেখানো নামাজ

পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যাদেরকে নামাজ জান্নাতে নিয়ে যাবে। আবার কিছু মানুষ আছেন যাদেরকে নামাজ জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এর কারণ হলো সহিশুদ্ধ ভাবে নামাজ না পড়া। লোক দেখানো নামাজ পড়া। কিয়ামতের দিন নামাজ আপনার বিরুদ্ধে ভেটো দেবে। কারণ আপনি ইহকালের জীবনে আল্লাহকে ভয় না করে, সন্তুষ্টি অর্জন না করে,  লোক দেখানো নামাজ পড়েছিলেন। যারা লোক দেখানো নামাজ পড়েন তাদের নামাজ আল্লাহ কবুল করেন না। তাদের জন্য নেমে আসে ধ্বংস। তারা ইহকালের জীবন ও পরকালের জীবন দুটোতেই ব্যর্থ হবে।

মুনাফিকের নামাজ 

মুনাফিকের নামাজ আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। মুনাফিক মুসলমানের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মুনাফিক হলো সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি মুখে মুখে আল্লাহকে পছন্দ করে, আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু অন্তরে তার ভিন্ন রূপ। মুনাফিকের নামাজ খুবই পাতলা। তারা মনে নামাজে আল্লাহকে স্মরণ করে না। লোক দেখানো নামাজ পড়ে। মুনাফিকের একমাত্র কাজ হলো মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা ওপরে ওপরে তারা মুসলমানদের সাথে মিল দিয়ে চলে।  নিজেকে মুসলিম দাবি করে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সব সময় মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।  তাই মুনাফিকের নামাজ আল্লাহ পছন্দ করেন না।

নামাজের সুন্নত অনুযায়ী নামাজ না পড়লে 

নামাজের কিছু সুন্নত আছে যেগুলো না মানলে নামাজ হয়না। নামাজ পড়তে হবে সুন্নত তরিকায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত তরিকায় নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আমাদের সবাইকে নামাজের সুন্নত সম্পর্কে ভালো জানতে হবে এবং সুন্নত তরিকায় নামাজ আদায় করতে হবে। নতুবা নামাজ কবুল হবে না।

নামাজের মধ্যে আল্লাহর ভয় 

আল্লাহর ভয় মনকে শান্ত করে। মানুষকে বিনয়ী ও নম্র হতে সাহায্য করে। একজন মানুষ যখন নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে, আল্লাহর ভয় নিজের মধ্যে জাগ্রত করবে তখন সেই ব্যক্তির নামাজ আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য পাবে। যখন আল্লাহর ভয় মনের মধ্যে জাগ্রত হবে তখন পূর্ণ মনোযোগ নামাজের মধ্যেই থাকবে।

নামাজ ভঙ্গের কারণ কি কি?

আমাদের সবার উচিত নামাজ সহি শুদ্ধভাবে পড়া। নামাজ নিয়মিত পড়লেও অনেকেই জানিনা নামাজ ভঙ্গের কারণগুলো কি? কারণে নামাজ ভঙ্গ হচ্ছে?

  • নামাজের প্রথম শর্ত হলো শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের জায়গা পাক হতে হবে। যদি নাপাক অবস্থায়  তাহলে নামাজ পড়েন তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। 
  • নামাজের মধ্যে সালাম দিলে বা সালামের উত্তর দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। 
  • বিনা কারণে অতিরিক্ত নড়াচাড়া করলে। 
  • নামাজে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকালে। 
  • নামাজে অশুদ্ধ করে পড়লে বা কোরআন তেলোয়াত অশুদ্ধ করলে নামাজ হবে না। 
  • নামাজের মধ্যে অট্ট হাসি দিলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। 
  • দোয়া বা কোরআন তেলাওয়াত দেখে দেখে পড়লে।
  • নামাজের মধ্যে গোপন অঙ্গ দিয়ে কোন কিছু বের হলে শরীর নাপাক হয়ে যায়।  পুনরায় ওযু করতে হবে তারপর নামাজ পড়তে হবে। 
  • কেবলামুখী না হয়ে এদিক সেদিক নামাজ পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। 
  • মধ্যে দুনিয়ার কথা চিন্তা করা। 
  • নামাজের মধ্যে কোন কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ হবে না। 
  • আদবের সহিত নামাজ না পড়লে 
  • ইমামের আগেই রুকু সেজদা করলে 
  • নামাজের মধ্যে কথা বললে 
  • অজু না করে নামাজ পড়লে(গোসলের পরপরই অজু করার প্রয়োজন নেই যদি না গোপনাঙ্গ দিয়ে কোন কিছু বের না হয়)

নামাজের সুফল 

পৃথিবীটা একটা পরীক্ষার ক্ষেত্র। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এই পরীক্ষার উত্তর আল্লাহ তায়ালা আমাদের আগেই দিয়ে দিয়েছেন। কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে পরীক্ষার হিসাব নেওয়া হবে তা হলো নামাজ। নামাজ ব্যতীত কোন ব্যক্তি বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না।

নামাজী ব্যক্তির সুফল :

  • কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের তলে জায়গা পাওয়া যাবে। 
  • নামাজি ব্যক্তিদের আল্লাহ তায়ালা অধিক পছন্দ করেন। 
  • নামাজি ব্যক্তি বেহেস্তের পরম সুখ শান্তি উপভোগ করতে পারবেন। 
  • নামাজ পড়লে আল্লাহ তায়ালা সুস্থতা দান করেন। 
  • নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে মানুষের দেহ ও মন নির্মল থাকে। 
  • আল্লাহ তাআলা নামাজি ব্যক্তিদের হায়াত বৃদ্ধি করে দেন। রুজির বরকত দেন।
  • নামাজি ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন সেখানে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। 
  • কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নামাজি ব্যক্তিকে নুর দারা আলোকিত করে দিবেন। 
  • জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে নামাজী ব্যক্তির সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবেন। 

নামাজ না পড়ার পরিনাম 

নামাজ না পড়ার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না তার ওপর দুনিয়ায় যেমন গজব চলে আস,  তেমনি আখিরাতেও তার ওপর প্রচন্ড গজব আসবে। নামাজকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করে দিয়েছেন তাই মৃত্যুর পর আগে নামাজের হিসাব দিতে হবে। একজন বেনামাজী ব্যাক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। অনেক ধন সম্পদ থাকা সত্বেও বেনামাজি ব্যক্তি  কোন শান্তি পাবে না। 

মৃত্যুর পর কবর থেকেই শুরু হবে বেনামাজির কঠিন আজাব। যখন দুজন ফেরেশতা আসবে তার কাছে হিসাব নেওয়ার জন্য, প্রশ্নের উত্তর নেওয়ার জন্য, তখন সে কিছুই বলতে পারবে না। তখন সে বলতে থাকবে হায় আল্লাহ আমি কিছুই জানিনা। কেয়ামতের দিন বেনামাজি ব্যক্তির মাথার উপরে সূর্য চলে আসবে। প্রচন্ড গরমে ছোটাছুটি করবে কোথাও একটু ছায়া পাবে না। বেনামাজির জন্য পুলসিরাত হবে চুলের চাইতেও সূক্ষ্ম। তাকে জাহান্নামের কঠিন আগুনে পুড়তে হবে। জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থাকে ভোগ করতে হবে প্রতিনিয়ত। তাকে বারবার শাস্তি দিয়ে মেরে ফেলা হবে। আবার জীবিত করা হবে আবার মেরে ফেলা হবে। এইভাবে চলতে থাকবে অনন্তকাল।

মন্তব্য 

এতক্ষণ আমরা আমাদের আর্টিকেলে নামাজের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আপনারা হয়তোবা নামাজের বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ু।  সহীহ শুদ্ধভাবে নিয়ম জেনে নামাজ পড়ুন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *