সহজ পদ্ধতিতে টেইলারিং শিক্ষা

আমরা যে কাজই করি না কেন সে কাজ সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। কারণ আমি যে কাজ করব সে কাজ সম্পর্কে যদি আমাদের জানা না থাকে তাহলে সে কাজটাতে কখনোই সফল হওয়া যাবেনা। তাই টেইলারিং শেখার আগে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে

টেইলারিং কি?

টেইলারিং হল এক ধরনের কুটির শিল্প। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য তার শরীরের মাপ দিয়ে হ্যান্ড কাঁচি দিয়ে কাপড় কেটে সেলাই করে পোশাক বা জামা তৈরি করাকে টেইলারিং বলে। যার জন্য পোশাক তৈরি করা হবে তার দেহের মাপ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনের এবং বিভিন্ন সাইজের হাজার হাজার পিস গার্মেন্টস তৈরি করাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পদ্ধতির পোশাক তৈরি করা বা টেলারিং বলে।

এই পদ্ধতিতে প্রথমে পোশাকের কোন নির্দিষ্ট সাইজের মাপ নেওয়া হয়। তারপর ডিজাইন অনুযায়ী পোশাকের প্যাটার্ন তৈরি করে মার্কার দিয়ে প্যাটার্নটি একে কাটিং মেশিন দ্বারা কাপড় কেটে সেলাই মেশিন দ্বারা পর্যায়ক্রমে মার্ক করা কাপড়ের উপর দিয়ে সেলাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ পোশাক তৈরি করা হয়।

টেইলারিং এ পোশাক তৈরি করার পদ্ধতি

অনেকের মতে চারটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে সঠিকভাবে পোশাক তৈরি করা যায়। তবে আমি মনে করি তার সাথে আরও একটি পদ্ধতি রয়েছে যেটা করলে আমরা  পরিপূর্ণভাবে কোন পোশাক তৈরি করতে পারি।

পাঁচটি পদ্ধতিতে টেইলারিং পোশাক তৈরি করা হয়। যা নিম্নে দেওয়া হল:

১। শরীরের পরিমাপ(Body measurement)

২। কাপড় নির্বাচন এবং কাপড়ের পরিমান নির্ধারণ (Cloth choosing and measurement)

৩। সঠিক পদ্ধতিতে কাটিং(Cutting)

৪। সেলাই(Sewing)

৫। ফিনিশিং(Finishing)

শরীরের মাপ (Body Measurement)

টেইলারিং বা দর্জি পদ্ধতিতে পোশাক তৈরি করতে হলে প্রথমেই নির্দিষ্ট পুরুষ বা মহিলার বা বেবির শরীরের মাপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে যার জন্য পোশাক তৈরি করা হবে তার মাপ নিতে হবে। যে ব্যক্তির মাপ নিবে তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মাপ নিতে হয়। যেমন; ঝুল, পুট স্লিভ, হাতা ,মুহুরী ইত্যাদি।

কাপড়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা (Cloth Measurement)

কাপড়ের পরিমান নির্ধারণ করা হয় ব্যক্তির মাপের উপর। বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিমাণ কাপড় লাগে। পোশাক তৈরির জন্য কতটুকু কাপড় লাগবে তা হিসাব করতে হয় সঠিকভাবে নেওয়া শরীরের মাপের উপর। কাপড়ের মাপ ইঞ্চি বা গিরা বা গজে ধরা হয়।

কাপড়ের পরিমান কম বেশি হয় কাপড়ের বহরের উপর এবং শরীরের মাপের উপর। কাপড়ের বহর বেশি হলে কাপড়ের পরিমান কম লাগে আবার বহর কম হলে কাপড়ের পরিমান বেশি লাগে। সেক্ষেত্রে কাপড়ের পরিমান নির্ধারণের জন্য আমরা নিম্নে র সূত্রটি ব্যবহার করতে পারি।

সূত্র-১:  দুই হাত বহরের/ প্রস্থের কাপড়ের জন্য

ঝুল × ২+ হাতা×১+২

সূত্র-২: আড়াই হাত বহরের/ প্রস্থের কাপড়ের জন্য

ঝুল×২+২

কাপড়ের অপচয় রোধ করতে এবং সঠিকভাবে পোশাক তৈরির জন্য কাপড়ের পরিমান করা অত্যন্ত জরুরি।

কাটিং (Cutting)

নির্দিষ্ট পরিমাপ ও ডিজাইন অনুযায়ী কাপড় কাটার নাম হলো কাটিং। কাটিং এর জন্য যে সকল ধাপ অনুসরণ করতে হবে তা হল—–

১। প্রথমে কাপড়টি একটি টেবিলের উপর টানটান করে বিছিয়ে নিতে হবে।

২। এরপর ডিজাইন অনুযায়ী মার্কার বা রঙিন পেন্সিল দিয়ে কাপড়ের উপর চিহ্নিত করে নিতে হবে।

৩। তারপর হাত কাচি দ্বারা সুন্দর ভাবে দাগ অনুযায়ী কাপড় কেটে নিতে হবে।

৪। এরপর টুকরা কাপড়ের বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন প্রয়োগ করে সেলাইয়ের জন্য রেখে দিতে হয়।

সেলাই (Sewing)

কেটে রাখা কাপড়ের টুকরা বডি মেজারমেন্ট ও ডিজাইন অনুযায়ী সেলাই মেশিনের স্টিচিং এর মাধ্যমে জোড়া দেওয়া কে সেলাই বলে।

সেলাইয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পায়েচলিত বা হস্ত চালিত সেলাই মেশিন ব্যবহার করি। যেমন; সুইং মেশিন, বাটন মেশিন, ওভারলক মেশিন। কাপড়ের সুতা যাতে কাপড় থেকে বের হতে না পারে সেজন্য কাপড় অনুযায়ী কভার হেড সেলাই মেশিনের সাহায্যে সেলাই করে নিতে হয়।

ফিনিশিং (Finishing)

সম্পূর্ণরূপে পোশাক তৈরি করার পর কাপড়কে স্ত্রী করে ভাঁজ করে রাখা হয় যাকে টেইলারিং এ ফিনিশিং বলা যায়। উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করে আমরা খুব সহজেই টেইলারিং শিখতে পারি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *