স্যাটেলাইট

বর্তমানে আমরা স্যাটেলাইটের সাথে নানাভাবে জড়িত আছি যেমন: টেলিভিশন, ব্রডকাস্টিং, মোবাইল ফোনের জিপিএস, নেভিগেশন ইউজ করা, বিদেশের কাউকে কল করা বা কল রিসিভ করা এসব আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আলোচনা করব স্যাটেলাইট কি, স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে, স্যাটেলাইট সম্পর্কিত প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত। 

স্যাটেলাইট কি? 

স্যাটেলাইট এক প্রকার রিপিটার। যা আপলিঙ্ক ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে মডুলেটেড আর এফ সিগন্যাল কে গ্রহণ করে এবং তা পুনরায় ডাউনলিনক ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে পৃথিবীর আর্থ স্টেশন পাঠিয়ে দেয়। আর এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। এতে ব্যবহৃত আপলিঙ্ক ফ্রিকুয়েন্সির মান 7.725 GHz থেকে 7.07 GHz এবং ডাউনলিনক ফ্রিকুয়েন্সির মান 3.4 GHz থেকে 4.8 GHz হয়ে থাকে।

স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?

স্যাটেলাইটের আকার-আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে আর এর আকৃতি নির্ভর করে কোন কাজের উপর ডিপেন্ড করে স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে তার উপর। বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট আছে আপনারা হয়তো দেখছেন স্যাটেলাইটে দুইটি পাখার মতো বড়-বড় প্যানেল লাগানো থাকে এগুলো হচ্ছে সোলার প্যানেল। যা স্যাটেলাইটে পাওয়ার সরবরাহ করে থাকে এবং এর বডিতে লাগানো থাকে ট্রান্সপন্ডার এবং রিসিভার। যার সাহায্যে পৃথিবী হতে প্রেরিত ডাটা সিগন্যালকে রিসিভার এর সাহায্যে রিসিভ করে এবং ট্রান্সপন্ডার এর সাহায্যে সিগন্যালকে আবার পৃথিবীতে পুনরায় পাঠায়। এছাড়াও স্যাটেলাইট এর মধ্যে কিছু মোটর থাকে যার সাহায্যে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল এবং অবস্থান পরিবর্তন করা যায়।  

স্যাটেলাইট পৃথিবীর উপরে কিভাবে থাকে? 

স্যাটেলাইট পৃথিবীর উপরে কিভাবে থাকে এটা নির্ভর করে সাধারণত জোহানেস কেপলারের সূত্রের সাহায্যে। যদি কোন অবজেক্টকে পৃথিবীর উপরে রাখতে হয় তাহলে তার অরবিটের অনুসারে ঘূর্ণায়মান রাখতে হবে ফলে তার নিচে পড়ে যাবে না। সে অনুযায়ী যে স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে সেগুলো অধিক পরিমাণ ঘূর্ণায়মান হয়। এবং যে স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে একটু দূরবর্তী যেমন (36,000 km) অবস্থানে রয়েছে সেগুলো ঘূর্ণায়মান কম হয়। সেই সমস্ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আসলে স্যাটেলাইট কতটা কাছে এবং কতটা দূরে তার উপর নির্ভর করে স্যাটেলাইট গুলোকে তিনটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে যেমন:

  • Low Earth orbit: এ স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর খুব কাছাকাছি থাকে। আর এই স্যাটেলাইটটি খুব দ্রুত ঘুরে এবং পৃথিবী কে খুব তাড়াতাড়ি স্ক্যান করতে পারে। এগুলোকে ব্যবহার করা হয় ইমেজের জন্য, সেন্সিং এর জন্য,পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব 1000 কিলোমিটার।  
  • Medium Earth orbit: এই স্যাটেলাইটটি ঘূর্ণায়মান গতি মাঝারি অরবিট হয়ে থাকে ফলে এটি 12 ঘন্টায় পুরো পৃথিবী কে একবার স্ক্যান করতে পারে। এটি সাধারণত নেভিগেশনের জন্য, জিপিএস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে 20 হাজার কিলোমিটার।  
  • High Earth orbit: এই স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে একটু দূরে অবস্থান করে এবং নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থাকে এটি প্রায় পৃথিবী থেকে 36 হাজার কিলোমিটার উপরে অবস্থান করে।  

কি কাজে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়? 

যেসব ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় নিম্নে দেওয়া হলঃ 

  • যোগাযোগের ক্ষেত্রে
  • দূর অনুধাবন ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণে 
  • ভূমি জরিপ 
  • যুদ্ধক্ষেত্রে
  • বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে 

ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট কি?

ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইটগুলো কে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের স্যাটেলাইটগুলো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টিভি সিগন্যাল কে নিম্নের অধিকসংখ্যক গ্রাহক অ্যান্টেনার দিকে বিকিরণ করে।  

পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট কি? 

পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট গুলো হল: NASA এর অ্যাপ্লিকেশন টেকনোলজি স্যাটেলাইট, কমিউনিকেশন টেকনোলজি স্যাটেলাইট, অরবিটাল স্টেট স্যাটেলাইট। এসব পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট দ্বারা বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড, যোগাযোগ প্রযুক্তি, ও মহাশূন্য কৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষা চালানো হয়।

পৃথিবী পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট এর ব্যবহার 

ভূ-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইটের ব্যবহার সর্বাধিক। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি বনায়ন লুকায়িত খনিজ উৎস, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও জাতীয় পর্যবেক্ষণ তেলের খনি ও ভূমি জরিপ করা হয়। ফলে আমাদের পৃথিবীর সামগ্রিক  অবস্থা স্বল্প সময়ে জানা যায়। বর্তমানে এ কারণে বিশেষ প্রকার স্যাটেলাইট যেমন: LANDSAT, ERS – 1, IRS ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত নিম্নোক্ত কার্যাবলীর সম্পাদিত করে। 

  • মান চিত্রাঙ্কন বিদ্যা
  • কৃষি ও বনায়ন পর্যবেক্ষণে 
  • মহা সমুদ্র বিদ্যা
  • বরফ শনাক্তকরণ 
  • তৈল ও বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষনে 
  • বরফগলন 
  • খনিজ ও তেল অনুসন্ধান ব্যবহার করা হয় 

সমরবিদ্যা ও যুদ্ধক্ষেত্রে স্যাটেলাইট এর ব্যবহার

বর্তমানে বিশ্বের উন্নত সামরিক তথ্য সরবরাহে স্যাটেলাইটের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত যুদ্ধবিমান, জাহাজের সৈন্য ও গোলাবারুদের অবস্থান জানার জন্য স্যাটেলাইট খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে কিছু সংখ্যক মিলিটারি স্যাটেলাইটের নাম উল্লেখ করা হলো:

  •  কমান্ড এন্ড কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
  • নেভিগেশন স্যাটেলাইট
  •  Early warning স্যাটেলাইট
  • মেট্রোলজিক্যাল এবং নিউক্লিয়ার ডিটেকশন 

স্যাটেলাইটের পদচিহ্ন ( Foot Print) বলতে কি বুঝায়? 

পদচিহ্ন বলতে একটি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কতটুকু অঞ্চলের বার্তা গ্রহণ বা প্রেরণ করতে পারে তাকে বুঝায়। এটি উপগ্রহের কক্ষপথ উচ্চতা ব্যবহৃত এন্টেনার ধরন এবং স্যাটেলাইট ব্যবহৃত যৌগ কাজ। এর মানে হলো স্যাটেলাইট যত ঊর্ধ্বে ততবেশি পৃথিবী পৃষ্ঠের অঞ্চলকে সামাল দিতে পারে। স্যাটেলাইট আপলিংক এবং ডাউনলিংকের জন্য সবসময় প্রশস্ত বিম এর প্রয়োজন হয় না। এন্টেনার প্রশস্ত বিম দাঁড়া বাধাদানকারী  সিগন্যালকে স্যাটেলাইট রিসিভার কুড়িয়ে নেওয়া হয়।       

সেবা সরবরাহের ভিত্তিতে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট

সেবা ও সরবরাহের ভিত্তিতে যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় তার নিচে উল্লেখ করা হয়েছে

  • নির্ধারিত স্যাটেলাইট
  • মেরিটাইম স্যাটেলাইট
  • Point-to-point স্যাটেলাইট
  • বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট
  • বিনোদনমূলক স্যাটেলাইট
  • ভ্রাম্যমাণ মোবাইল স্যাটেলাইট 
  • সম্প্রচারিত স্যাটেলাইট 
  • সামরিক স্যাটেলাইট 
  • পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট 

স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর সুবিধা 

নিচে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর কিছু সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে

  • সহজ ও সুনিপুণ মাল্টিপ্লেক্সিং পদ্ধতি
  • ভুলত্রুটি ডিটেকশন ও সংশোধন ব্যবস্থা নগণ্য
  • যোগাযোগের গোপনীয়তা
  • ডিজিটাল হার্ডওয়ার কার্যকারিতায় নমনীয়তা
  • সিগন্যালকে সহজ উৎপাদন করা যায় 
  • ডিজিটাল সিগন্যাল কে কোডিং করার সহজ ফলে খুব বিশ্বস্ত ও গোপনীয়তা রক্ষা করা সহজ হয়
  • নয়েজ ডিসটরশন সীমার মধ্যে থাকে বলে ডিজিটাল যোগাযোগ বিশ্বস্ত

স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর কিছু অসুবিধা 

স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থার কিছু অসুবিধা রয়েছে স্যাটেলাইট হতে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার এর দূরত্ব 75000 km দীর্ঘ। যেহেতু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েবের বেগ 3*10 km sec ফলে সিগন্যাল সম্প্রচার এবং গ্রহণ ¼ সেকেন্ড দেরি হয় ফলে কথা বলতে ½ সেকেন্ড বিরতি দেয়া হয়। এবং গ্রাহক তার প্রতিধ্বনি শুনে প্রতিধ্বনি মূলত ইম্পিডেন্স ম্যাচিংয়ের সমস্যার জন্য সংগঠিত হয়। ফলে শ্রবণযোগ্য প্রতিধ্বনি এর মান প্রায় ½ সেকেন্ড এটি প্রায় ডিলে ডাটা সম্প্রচারের ও ফাইল স্থানান্তরের অসুবিধা সৃষ্টি করে। 

স্যাটেলাইটে কয় ধরনের ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করা হয়? 

উত্তর: স্যাটেলাইটের দুই ধরনের ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করা হয়

  • Uplink
  • Downlink

আপলিঙ্ক কি? 

উত্তর: ট্রান্সমিটার হতে উপগ্রহের দিকে সিগন্যাল পথকে আপলিঙ্ক বলে

ডাউনলিঙ্ক কি?

উত্তর: উপগ্রহ থেকে ভূপৃষ্ঠ ভিত্তিক গ্রাহক যন্তের দিকে সিগন্যাল পথকে ডাউনলিঙ্ক বলে

স্যাটেলাইট এর ব্যান্ডউইথ কত? 

উত্তর: স্যাটেলাইট এর ব্যান্ডউইথ 500 MHz

কি ব্যতীত স্যাটেলাইট অসম্পূর্ণ?

উত্তর: আর্থ স্টেশন 

কোন স্যাটেলাইট অন্ধকার ও আলোতে কাজ করে? 

উত্তর: অরবিট স্যাটেলাইট অন্ধকার আলোতে কাজ করে 

কোথায় থেকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়? 

উত্তর: স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ ভূমি থেকে করা হয় 

পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট কে স্থির মনে হয় কেন? 

উত্তর স্যাটেলাইট পৃথিবীর ঘর্ষণের একই গতিতে ঘুরে বলে পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটকে স্থির বলে মনে হয় 

পৃথিবী হতে ট্রান্সমিটার রিসিভার এর দূরত্ব কত?

উত্তর স্যাটেলাইট হতে ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের দূরত্ব প্রায় 75 হাজার কিলোমিটার

স্যাটেলাইটে কথা বলতে কত সময় বিরতি দেয়া হয়?

উত্তর স্যাটেলাইটে কথা বলতে ½  সেকেন্ড বিরতি দিতে হয়

স্যাটেলাইট অ্যান্টেনার ব্যাস সাধারণত কত?

উত্তর: প্রচলিত অ্যান্টেনার 2 থেকে 6 মিটার

স্যাটেলাইটে অ্যাঙ্গেল কয়টি?

স্যাটেলাইটের তিনটি অ্যাঙ্গেল রয়েছে

  • অ্যাজিমুথ অ্যাঙ্গেল: এটি ডিশের আনুভূমিক গতি উত্তর দিক হতে ক্লক-ওয়াইজ ঘূর্ণয়নে নির্দিষ্ট হেয়ারিং অ্যাঙ্গেল থাকতে হবে
  • এলিভেশন অ্যাঙ্গেল: এটি এন্টেনার উলম্ব গতি নিদিষ্ট স্যাটেলাইট কত ভার্টিক্যাল অ্যাঙ্গেল পরিমাপ করা হয়
  • পোলার অ্যাক্সেস অ্যাঙ্গেল: সাইট অ্যাটিচুয়েডের এর সমান করে পোলার অ্যাক্সেস সেট তৈরি  করা হয়

ট্রান্সপন্ডার বলতে কি বুঝায়? 

উত্তর: ট্রান্সপন্ডার একটি রেশিও যার মাধ্যমে অর্থ স্টেশনের রিসিভারের সকল রেশিওকে গণনা করা হয়

স্যাটেলাইটের জিওগ্রাফিক কয়টি ও কি কি? 

উত্তর: স্যাটেলাইটের জিওগ্রাফিক রিজন যথা:

Region- 1- ইউরোপ, আফ্রিকা, মঙ্গোলিয়া অন্তর্ভুক্ত

Region- 2- উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, এবং গ্রীনল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত

Region- 3- এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া. এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দেশসমূহ অন্তর্ভুক্ত

আজকের আলোচনা করেছি স্যাটেলাইট কি,স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে. এবং স্যাটেলাইট নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন আশা করি আপনারা স্যাটেলাইট সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে আর ও জানতে আমাদের সাথেই থাকুন

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *