রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা। দুর্দান্ত ১০টি উপকারিতা জেনে নিন

সুস্থ স্বাভাবিক থাকার জন্য আমাদের ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু ঘুমের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই অনিয়ম। অনেকেই আছি যারা কাজের চাপে বা বিভিন্ন চাপে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সময় পাইনা। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর বিভিন্ন উপকারিতা আছে। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানেন না আজকের লেখাটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং উপকারিতা গুলো জেনে নিন। 

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা কি ?

মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়: রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর প্রধান সুফল হল মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলে মানুষের ব্রেনের নার্ভগুলো বিশ্রাম নেওয়ার সময় পায়। এর ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া ঠিক থাকে এবং মানসিক ভারসাম্য ঠিক থাকে। আর মানসিক ভারসাম্য যখন ঠিক থাকে তখন শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের স্বাভাবিক ক্রিয়া সকল রাখে। 

দুশ্চিন্তা কমে যায়: দুশ্চিন্তা মানুষের নিত্য দিনের একটা ক্ষতিকর সঙ্গী। দুশ্চিন্তা করলে শারীরিক, মানসিক, দৈহিক সব দিক দিয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। গবেষকদের মতে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে দুশ্চিন্তা কমে যায়। আর যারা দেরিতে ঘুমান তারা বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ও কুচিন্তায় ভোগেন। 

আরও পড়ুন: যে কারণে আয়েশ করা জরুরী – আয়েশ করার উপকারিতা

মেজাজ ভালো থাকে: তাড়াতাড়ি ঘুমানো ব্যক্তির মেজাজ সবসময় ফুরফুরা থাকে। সময়মতো ঘুমালে মানুষের ব্রেন ঠিকমতো বিশ্রাম নিতে পারে। এর ফলে মেজাজ ভালো থাকে এবং সেই সাথে ভালো ব্যবহারের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দেরিতে ঘুমানোর ফলে মেজাজ থাকে খিটখিটে। তখন কারো কথা ভালো লাগে না সব সময় একটা মনে রাগান্বিত ভাব থাকে। 

হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়: হজম শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সময়মতো ঘুমানোর কোন বিকল্প নেই। প্রত্যেক মানুষের খাবারের পর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম দরকার। যখন নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমানো হয় তখন শরীরের বিপাকক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে সচল থাকে। ফলে আমরা যে কোন ধরনের খাবার খাই না কেনো তা সঠিকভাবে হজম হয়। হজম শক্তি শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। 

কর্মদক্ষতা বেড়ে যায়: একটি দেহের কর্মদক্ষতা মূলত নির্ভর করে মস্তিষ্কের দক্ষতার উপর। আর মস্তিষ্কের দক্ষতার জন্য প্রয়োজন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব পূরণ করা। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের স্মৃতিশক্তিকে উন্নত রাখে। এর ফলে  কাজের দক্ষতা বেড়ে যায়। 

স্থুলতা কমে যায়: আমাদের দিন দিন স্থূলতার সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যায় রাতে ৯-১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে যান এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। এতে মেটাবলিজম  ভালো থাকার পাশাপাশি ক্যালরি  তাড়াতাড়ি বার্ন হয় এবং অতিরিক্ত চর্বি শরীর থেকে সরে যায়। এর ফলশ্রুতিতে ওজন হ্রাস এবং স্থূলতা কমে যায়। 

ত্বক ভালো থাকে: ভালো ঘুম ত্বক ভালো রাখার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বাড়ায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমালে ত্বক সুস্থ থাকে। আর দেরিতে ঘুমালে ত্বকের  উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। মুখের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ব্রণ, কালো দাগ দেখা দেয়। 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি  কমায়: রাতে পর্যাপ্ত ঘুমালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। তাড়াতাড়ি ঘুমালে এবং ভালো ঘুম হলে  দেহে ইনসুলিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে শর্করা প্রভাবিত হয় না। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি  কমে যায়। গবেষকদের মতে কেউ যদি ৬ রাত ৪ ঘন্টা করে ঘুমায় তাহলে তার মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী, এর মানে আপনি শারীরিক, মানসিক, দৈহিকভাবে সুস্থ ও সবল একজন মানুষ। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যদি রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে পর্যাপ্ত  ঘুম না হয়, তাহলে সে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং  বিভিন্ন রোগ জীবাণুর ভাইরাস তার শরীরকে আক্রমণ করতে পারে সহজেই। তাই ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধিতে রাতে দেরিতে ঘুমানোর কোন বিকল্প নেই। 

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে: দেরিতে ঘুমালে শরীরের ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন ভয়াবহ হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়। 

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় কি?

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য যা করতে হবে, সাতটা থেকে আটটার মধ্যেই রাতের কাজ শেষ করতে হবে। এরপর রাতের খাবার গ্রহণ করে হালকা হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। ঘুমানোর অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সমস্ত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ( মোবাইল ফোন,  ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, টেলিভিশন ইত্যাদি ) থেকে দূরে থাকবেন। ঘুমানোর আগে অবশ্যই যার যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা উচিত। 

দিনে ঘুমালে কি হয়? 

দিনে ঘুমানো ঠিক নয় কারণ দিনে ঘুমালে শরীরে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। গবেষণায় প্রমাণিত কোন ব্যক্তি যদি দিনে ৩০ মিনিটের অধিক ঘুমায় তাহলে ব্লাড প্রেসার,  ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পর দিনে অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

আরও পড়ুন: দিনের বেলা ঘুম তাড়ানোর উপায়, ঘুম তাড়াতে যা করবেন

রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন? 

সুস্বাস্থ্যই সম্পদ। তাই সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করা একান্ত প্রয়োজনীয়। ৭-৮ ঘন্টা ঘুম একজন মানুষকে স্বাভাবিক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে, রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় হল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যেই। এতে করে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে না।

ঘুম থেকে উঠার সময় কখন? 

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস শরীরের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনি যদি রাত ৯ টায় ঘুমান তাহলে সকাল ৪/৫ টায় ঘুম থেকে উঠুন, ১০টায় ঘুমালে ৫/৬ টায় উঠুন। কারণ এতে করে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম হবে।

মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এছাড়া রাতে দেরিতে ঘুমানোর অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের পেজটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ। 

স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *