প্রত্যেক মানুষের দৈহিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য আয়েশের প্রয়োজন। বর্তমান এই প্রতিযোগিতার সময়ে মানুষের জীবন যাপনের গতি অনেক বেড়ে গেছে। পরিবারের দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রের চাপে একটু আয়েশের সময় পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছে। বর্তমান আমাদের নিত্যদিনের কাজ হল এটা করতে হবে, ওইটা করতে হবে, তারপরে ওইটা। তো এইভাবে চাপে থাকার কারণে মানুষের মধ্যে বাড়ছে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, দুশ্চিন্তা ও নানা রকম অসুস্থতা। আজকে আমাদের  আলোচনার বিষয় হলো আয়েশ করা জরুরী কেন? যে কারণে আয়েশ করা প্রয়োজন।  চলুন তাহলে আলোচনা করা যাক –

মানসিক শান্তির জন্য

নিত্যদিনের কাজের চাপে মানুষ যখন একটু আয়েশ করার সময় পায় না তখন বিভিন্ন মানসিক চাপ ও মানসিক ডিপ্রেশনে ভোগে। মানুষ যখন তার ক্ষমতার বাহিরে কোন কিছু করে বা করার চেষ্টা করে বা তার উপর চাপ দেওয়া হয় তখন সে মানসিক ডিপ্রেশন পরে যায়।

এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই আয়েশ করার প্রয়োজন আছে। একজন ব্যক্তি যখন মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না  তখন তার কোন কিছুই আর ঠিকভাবে চলে না। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। মানসিক শান্তি না থাকলে ওই ব্যক্তিরে চিন্তাশক্তি কমে যায়, বিচার বুদ্ধি কমে যায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য আয়েশীজীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কাজের ফাঁকে নিয়মিত আয়েশ করলে মানসিকভাবে যেমন সুস্থতা থাকা যায় তেমনি শারীরিকভাবেও সুস্থতা থাকা যায়। 

কাজের ফোকাস বৃদ্ধি করার জন্য 

যে কোন কাজের ক্ষেত্রে কাজের ফোকাস যদি ঠিক না থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কাজের ফোকাস ঠিক রাখতে হলে নিয়মিত আয়েশ করা প্রয়োজন। প্রাত্যহিক  জীবনের কর্ম ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি।একটা কাজ শেষ না হতেই আরেকটা কাজ করতে হয়। আর কাজগুলো করতে হয় অনেক চাপের মধ্য দিয়ে মাথায় চাপ নিয়ে। এর জন্য আমাদের শরীরের আয়েশের প্রয়োজন আছে। আয়েশ করার ফলে পরবর্তীতে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করা যাবে। 

দেহে শর্করা পরিমান নিয়ন্ত্রনে

অতিরিক্ত মানসিক ও দৈহিক চাপে কাজকর্ম করলে বা চাপে থাকলে দেহের ভেতরে শর্করার পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে  পরিমাণ বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। যাদের বহুমূত্র রোগ আছে তাদের তো শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে পাশাপাশি অন্যান্য ব্যক্তিদেরও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের রাখার কোন বিকল্প নেই। চাপ বা স্ট্রেস যত পরিমাণে কমে যাবে কোলেস্টেরল বা শর্করার পরিমাণ তত নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তো এর জন্য আয়েশী জীবনযাপন করতে হবে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে 

অতিরিক্ত শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক চাপের কারণে শরীরের নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়, নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে মানব  জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা, স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করা সম্ভব হয় না। চাপমুক্ত থাকলে, আয়েশী জীবনযাপন করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। 

পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে 

একটি দেহের পরিপাকতন্ত্রের উপর নির্ভর করে দেহের সুস্থতা, দেহের গঠন, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া যদি ঠিক থাকে তাহলে খাবার হজমে কোন সমস্যা হয় না বা পেটের সমস্যা হয় না। মানুষ যখন আয়েশি সময় কাটায় তখন তার পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া একদম ঠিক থাকে। 

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে 

ফুসফুস দেহের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যখন আমরা অতিরিক্ত কাজ করি বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করি তখন ফুসফুসে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আমাদের ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয় এবং ক্ষতিকর কার্বনডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বের হতে পারে না। কার্বন ডাই-অক্সাইড জমতে জমতে একসময় দেহে শুরু হয় ক্লান্তি, এলোমেলো চিন্তাশক্তি ও মাথা ব্যথার কারণও হতে পারে। তো চাপমুক্ত থাকে,  আয়েশী জীবন যাপন করেন তাহলে ফুসফুস তার নিজস্ব কর্মদক্ষতা ফিরে পাবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে 

“উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ ” এই রোগটা যেনো মানুষের  স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছে। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তখন, যখন মানুষ বিভিন্ন ডিপ্রেশনে ভোগে, বিভিন্ন চাপের মধ্যে বসবাস করে, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করে এবং আয়েশি জীবন যাপন থেকে অনেক দূরে সরে যায়। নিয়মিত শরীরকে রেস্ট দিতে হবে, চাপমুক্ত থাকতে হবে, আরাম-আয়েশ করতে হবে। 

হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক গতি নিয়ন্ত্রণ 

হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক গতির নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্যে আয়েশ করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অতিরিক্ত স্ট্রেসের মধ্যে হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক গতি নিয়ন্ত্রিত হারিয়ে ফেলে এবং গতি অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে বুক ধরফর করে এবং শরীরে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। চাপমুক্ত ও আয়েশী জীবনযাপন হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

শারীরিকভাবে সুস্থতার জন্য 

একজন মানুষ যখন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে তখন তার শরীরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে। আর শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন শরীরের বিশ্রাম। প্রত্যেক জিনিসের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। তেমনি প্রত্যেক শরীরের জন্য কাজ করার বা পরিশ্রম করার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এইমাত্র যখন অতিক্রম হয়ে যায় তখন শরীরের স্বাভাবিক ক্রীড়া বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তো এইসব সমস্যার সমাধানের জন্য আয়েশী জীবন যাপনের পাশাপাশি চাপমুক্ত থাকতে হবে, কাজের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নিতে হবে। তাহলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যাবে। 

মন্তব্য

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম শরীরের আয়েশ করার কারন সম্পর্কে। আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আয়েশী জীবনযাপন ও চাপ মুক্ত থাকার প্রয়োজনীতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমাদেরকে যদি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ। 

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *