কালোজিরার আরবি নাম : হাব্বাতুস সওদা, এবং ইংরেজি নাম: (blackseed) তবে বাংলার মানুষেরা একে কালোজিরা নামেই চেনে। কালোজিরা আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি খাদ্য কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানি। আপনি কি জানেন কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। কালোজিরা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন করে শরীরকে সতেজ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন তোমরা কালোজিরার ব্যবহার করো এটি মৃত্যু ব্যতীত সকল ধরনের রোগের জন্য মহাঔষধ গুণসম্পন্ন। কেবল স্বাস্থ্যের জন্যই এটি কার্যকারী না দেহের বাহ্যিক অংশ যেমন চর্মরোগ, চুল পড়া বন্ধ ও ত্বকের জন্য ও শারীরিক নানা সমস্যার জন্য এটি বেশ কার্যকারী। বাংলা গাইডস আপনাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য টিপস সম্পর্কে গাইডলাইন দিয়ে আসছে তো চলুন আজকে জেনে নেই কালোজিরা ও এর তেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।

কালোজিরার পুষ্টিগুণ

কালোজিরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান উপাদান হলো: আমিষ 21 শতাংশ, শর্করা রয়েছে 38 শতাংশ, ভেজশ ও তেল-চর্বি হয়েছে 35 শতাংশ, এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পরিমাণমতো বিদ্যমান। কালোজিরার মধ্যে আরও বিভিন্ন ধরনের উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যেমন : প্রোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন,ফসফরাস, কপার, জিংক বিভিন্ন ধরনের এসিড বিদ্যমান রয়েছে

কালোজিরার উপকারিতা

সঠিক নিয়মে কালোজিরা ও তেল সেবন করলে বিভিন্ন রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগ নিরাময় কালোজিরার উপকারিতা ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল:

স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে: আজকাল একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই স্মরণশক্তি সমস্যায় ভোগে ছোট থেকে বড়। যেমন, ছোটদের পড়াশোনা অমনোযোগিতা এবং বড়দের স্মরণশক্তিতে চাপ বেড়ে গেছে যে অনেক সময় অনেক কিছু ভুলে যায়। এই জন্য আপনি যদি এই তেল নিয়মিত সেবন করেন এটি স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী।স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা তেল সেবন করার নিয়ম:  মধু অথবা পুদিনা পাতার রস, কমলালেবুর রস, এই তেলের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে 1 চা চামচ সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে: ডায়াবেটিস মারাত্মক রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কালোজিরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকাল বেলায় 1 কাপ চা, গরম জল, অথবা দুধের সাথে এক চামচ পরিমাণ তেল মিশিয়ে সেবন করুন।

রক্ত সঞ্চালন এর ক্ষেত্রে: প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা সেবনে করলে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় ফলে মস্তিষ্ক রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে।

স্তনের দুধ বাড়ায়: যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই তাদের জন্য কালোজিরা বেশ কার্যকরী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ থাকে না সন্তান প্রসবের পর। তারা যদি প্রতিদিন শোয়ার আগে পরিমাণমতো কালোজিরা বাটা ভাতের সাথে মিশিয়ে খান তাহলে 10 থেকে 15 দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। 

প্রচন্ড মাথা ব্যথা : মাথা ব্যাথা দূর করতে কালোজিরার ভূমিকা অপরিসীম। অনেক সময় যাদের হঠাৎ মাথা ব্যাথা করে তারা কালোজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে প্রলেপ দিলে মাথা ব্যাথা থাকে পরিত্রান পাওয়া যায়। এছাড়াও তারা যদি প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবন করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ফলে মাথাব্যথা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। 

বাত ব্যথায়: বাত ব্যথা আজকাল বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোট থেকে বড় সব ধরনের মানুষেরই হয়ে থাকে । তবে যারা বাতব্যথায় সমস্যায় আছেন তারা ব্যথার স্থানে নিয়মিত এই তেল মালিশ করলে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। 

যৌন সমস্যা: কালোজিরা নারী ও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নিয়মিত কালোজিরা ও মধু একসাথে সেবন করলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

চর্মরোগ সারাতে: যাদের চর্ম রোগের সমস্যা ও শরীর চুলকায় তারা যদি নিয়মিত কালো জিরার তেল মালিশ করেন তাহলে চর্মরোগ চুলকানির সমস্যা দূর হয়।

প্রস্রাবের সমস্যা: যাদের প্রস্রাবের সমস্যা রয়েছে প্রস্রাব পরিষ্কার হয় না তারা যদি নিয়মিত কালিজিরা খান তাহলে প্রস্রাব পরিষ্কার হবে।

পেট খারাপের সমস্যা: যারা পেট খারাপের সমস্যায় ভুগতেছেন তারা 500 গ্রাম কালিজিরা শুখিয়ে গুরু করে 5 থেকে 7 চামচ দুধের সাথে 2 চামচ কালো জিরে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে এক টানা সাতদিন খেলে পেট খারাপের সমস্যা দূর হয়।

হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা: যারা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সমস্যার ভুগতেছেন তারা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে এক কাপ গরম জল অথবা চায়ের সাথে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

ঠান্ডা ও সর্দি সমস্যা: নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে ঠান্ডা সর্দি শুষ্ক কাশি ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়। এক্ষেত্রে আপনি মধু, লেবুর রস, কমলালেবুর রস, অথবা গরম পানির সাথে কালোজিরা তেল মিশিয়ে ছেলে ঠান্ডা সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এছাড়াও কালোজিরার 6 টি মহা ঔষধি গুন রয়েছে:

  • বায়ু নিশারোক: এটা পেটে জমা বায়ু নির্গত করে দেয়।  
  • খাদ্য হজমকারী: খাদ্য হজম করতে বেশ কার্যকারী। 
  • পাকাশয় শক্তি বর্ধনকারী: এটি পাকস্থলীর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং নিশ্চিত এবং দুর্বল দেহকে শক্তিশালী করে তোলে। 
  • কফ জনিত যাবতীয় রোগনাশক: কফ শ্লেসা বা রস শোষণ করে নেয়। 
  • পিত্তদোষ নাশক। 
  • মাসিক স্রাব স্বাভাবিকারক। 
  • জন্ডিস লিভারে বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য নিয়মিত কালোজিরা খান।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

মধু ও কালোজিরা

মধু ও কালোজিরা: মধু ও কালোজিরা নিয়ে অনেক গাইডলাইন আছে অনলাইনে ইউটিউবে অনেকেই অনেকের মত বক্তব্য দিয়েছেন। মধু কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে এই না যে আপনি প্রতিদিন পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে যে কোন জিনিসের একটি মাত্র আছে।

পরিমাণমতো মধু ও কালোজিরা প্রতিদিন সকাল বেলায় এক চামচ মধু ও চার পাঁচটা কালোজিরার দানা মিশিয়ে সকালে ও রাতে খাওয়ার পর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে যৌন রোগ থেকে অনেকটাই  সুস্থ হওয়া যায়।

আরও পড়ুন: মধু খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা

পান ও কালোজিরা: পান ও কালোজিরা একসাথে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এটি যাদের যৌন সমস্যায় ভুগতেছেন তারা পান কালোজিরা একসাথে খেলে যৌন সমস্যা মুক্তি ও কাম শক্তি বৃদ্ধি পায়। 

রসুন ও কালোজিরা: আপনি যদি নিয়মিত রসুন কালোজিরা খান তাহলে এটি পুরুষের বীর্যে শুক্রাণু বৃদ্ধি করে বীর্য গাঢ় করে। এছাড়াও রসুন কালোজিরা একসাথে খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।

কালোজিরার অপকারিতা

আমরা সকলেই জানি যে কালোজিরা খাওয়া ভালো স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। কিন্তু আমার জানামতে কালোজিরা তাই বলে বেশি খাবেন না কোন কিছুই বেশি খাওয়া ভালো না। নিম্নে কিছু টিপস শেয়ার করা হয়েছে:

  • গর্ভ অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে কালোজিরা সেবন করা উচিত নয়। তবে বাচ্চা প্রসবের পর স্তনের দুধ বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা খেতে পারেন।
  • দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কালোজিরা না খাওয়াটাই ভালো। তবে কালোজিরা তেল বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।
  • যাদের আলসার আছে তারা কালোজিরা না খাওয়াটাই ভালো।
  • যাদের বুক জ্বালাপোড়া করে গ্যাসের সমস্যা হয় তারা ভাতের সাথে কালোজিরা খাওয়া টা ভালো।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে কালোজিরা

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছে যে, কালোজিরার মধ্যে এমন কার্যকরী উপাদান আছে যা ক্যান্সারের কোষ তৈরি টক্সিন উপাদান এর বিরুদ্ধে কার্যকরী। এবং ক্যান্সারের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। এছাড়াও গর্ভবর্তী মহিলারা যদি বাচ্চা প্রসবের পর কালোজিরা চিবিয়ে খায় তাহলে তার পেশাবের বেগ বাড়বে ফলে তার গর্ভথলি দ্রুত পরিষ্কার হবে।  এবং এই পেশাবের সাথে দেহে নানারকম দূষিত পদার্থ বের হয়ে যাবে। এছাড়াও, প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে কালোজিরা সেবন করলে মাথা সকল প্রকার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

চোখের পাপড়ির ঘনত্ব বাড়াতে: অনেকেই চান ঘন কালো চোখের পাপড়ি বিশেষ করে মেয়েরা চান চোখের পাপড়ির ঘনত্ব বাড়াতে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা তেল চোখের পাপড়িতে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন এই তেল চোখের ভিতর না যায়।

ব্রণের সমস্যায়: আজকাল ছেলে ও মেয়েদের ব্রণের সমস্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই এই ব্যস্ত জীবনে ব্রণের সমস্যা দূর করতে এই তেল এ থাকা এন্টিমাইক্রোবিয়াল ত্বকের ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে। 1 গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে  এই তেল 58% জীবাণু ধ্বংস করে প্রথম সপ্তাহে আর নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে পুরোপুরি কমে যায়। 

একজিমা দূর করতে: একজিমা ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর কালোজিরা তেলে থাকা এন্টি-বায়টেরিয়াল কমপ্লেক্স ত্বকের ভিতর থেকে একজিমার সেলগুলোকে ধ্বংস করে।

সোরিয়াসিস: ত্বকের সোরিয়াসিস রোগটি হলে চুলকানি সহ দাগ পড়ে যায় ফলে  এই তেল রোগটি নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরে ছুলি দূর করতে: আজকাল শরীরে ছুলির সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে এই সমস্যা দূর করতে এক টুকরো আপেল আক্রান্ত স্থানে ঘষে নিতে হবে। তারপর সেই স্থানে কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে নিয়মিত মালিশ করা ছুলি দূর হবে।

দাড়ি গজাতে: আমরা অনেকেই চাই সুন্দর দাঁড়ি সুন্দর ঘন কালো কুচকুচে দাড়ির জন্য এই তেল বিশেষ উপকারী।

কালোজিরা সম্পর্কে প্রশ্ন

অনেক লোকজন আছে যারা কালোজিরা সম্পর্কে প্রশ্ন করে নিচে কিছু প্রশ্ন উত্তর যোগ করা হয়েছে যা পড়ে আপনারা কালোজিরা সম্পর্কে ভালো ধারণা পান।

কালোজিরা প্রতিদিন খেলে কী উপকার?

কালোজিরা প্রতিদিন খেলে কী উপকার হবে কিভাবে খাবেন নিচে তার একটি গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি এই নিয়মটি ফলো করেন তাহলে কালোজিরার অনেক উপকার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

শেষ কথা

আশা করি আপনারা কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন। কালোজিরা মধ্যে থাকা এমন ঔষধি গুণ রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাই কালোজিরা নিয়মিত খান। আর বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য টিপস সম্পর্কে বাংলা গাইডস ডটকম আপনাদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পাবলিশ করবে। তাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইল।

খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আরও পড়ুন

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *