রাতকানা রোগ কেন হয়: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের সহজ উপায়

রাতকানা রোগ কেন হয়

আমাদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে রাতকানা রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? এই রোগটি মূলত  ভিটামিন এ এর অভাবে হয়। এছাড়াও আমাদের অনিয়ন্ত্রিত লাইফ স্টাইল, খাদ্য অভ্যাস এবং আগে থেকে আপনার চোখের ছোট কোন সমস্যা চিকিৎসা না করলে একটা সময় আপনি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকেই এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি হতে পারে বড় কোনো সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ।

আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন যে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই আপনার চারপাশটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে? কিংবা অল্প আলোতে অন্যদের তুলনায় আপনার দেখতে একটু বেশিই কষ্ট হয়? যদি আপনার চোখের এই সমস্যা হয় যে রাত হলেই চোখে ঝাপসা দেখা বা একদমই না দেখা। তাহলে আপনি শিওর থাকেন যে আপনি রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যই  সকল সুখের মূল যদি আপনার স্বাস্থ্য ভালো না থাকে অসুস্থ থাকেন তাহলে আপনার কোন কাজে মন বসবে না। তো আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে।

রাতকানা রোগ আসলে কী? (What is Night Blindness?)

প্রথমেই একটি ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া যাক। রাতকানা রোগ মানে কিন্তু পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাওয়া নয়। এর আসল অর্থ হলো কম আলোতে বা অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে নিক্টালোপিয়া (Nyctalopia) বলা হয়।

যাদের এই সমস্যা থাকে তারা দিনের উজ্জ্বল আলোতে স্বাভাবিকভাবেই দেখতে পান। কিন্তু আলো কমে এলেই তাদের দেখতে অসুবিধা হয় যেমন – কম আলোর রেস্টুরেন্টে বা সন্ধ্যার সময় রাস্তায় বের হলে আপনার চোখ কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসে।

রাতকানা রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

রাতকানা রোগের লক্ষণগুলো চিনে রাখা খুব জরুরি। এতে আপনি সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  • সন্ধ্যার পর বা আবছা আলোতে দেখতে সমস্যা হওয়া।
  • রাতের বেলায় গাড়ি চালাতে অসুবিধা বোধ করা।
  • উজ্জ্বল জায়গা থেকে হঠাৎ অন্ধকার ঘরে ঢুকলে চোখকে মানিয়ে নিতে অনেক বেশি সময় লাগা।
  • কম আলোতে কোনো জিনিস বা মানুষের মুখ চিনতে না পারা।
  • রাতের আকাশে তারা দেখতে অসুবিধা হওয়া।
রাতকানা রোগের লক্ষণ

রাতকানা রোগ কেন হয়? প্রধান কারণসমূহ

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটা যে, রাতকানা রোগ কেন হয়? এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। আসুন রাতকানা রোগের প্রধান কারণগুলো জেনে নিই।

রাতকানা রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়

আমাদের দেশে রাতকানা রোগের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রধান কারণ হলো শরীরে ভিটামিন এ – এর অভাব। রাতকানা রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো ভিটামিন এ।

ভিটামিন এ আমাদের চোখের রেটিনায় “রোডোপসিন” নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা আমাদের কম আলোতে দেখতে সক্ষম করে তোলে। শরীরে ভিটামিন এ – এর ঘাটতি হলে রোডোপসিন ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না ফলে রাতকানা রোগ দেখা দেয়।

আরও পড়তে পারেন: ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয় জেনে নিন

চোখের অন্যান্য রোগ

ভিটামিন এ-এর অভাব ছাড়াও আরও কিছু কারণে এই সমস্যা হতে পারে। যেমন:

  • ছানি পড়া (Cataracts): চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে গেলে আলো ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে না, ফলে রাতে দেখতে সমস্যা হয়।
  • গ্লুকোমা (Glaucoma): এই রোগে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গিয়ে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা দৃষ্টিশক্তি কমাতে পারে।
  • রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (Retinitis Pigmentosa): এটি একটি বংশগত রোগ যেখানে চোখের রেটিনা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং রাতকানা রোগের সৃষ্টি করে।
  • কেরাটোকোনাস (Keratoconus): এতে চোখের কর্নিয়া পাতলা হয়ে শঙ্কু আকৃতির হয়ে যায় যা দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দেয়।

রাতকানা রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা

আপনি যদি সচেতন থাকেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতকানা রোগের প্রতিকার সম্ভব। এর চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণের ওপর। তাহলে আমরা জেনে নেই রাতকানা রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা।

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার

যদি ভিটামিন এ-এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে, তবে এর সমাধান খুবই সহজ। আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন। যেমন:

  • রঙিন শাকসবজি: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু।
  • সবুজ শাক: পালং শাক, পুঁই শাক, কচু শাক, লাল শাক, সজনে পাতা।
  • ফল: পাকা আম, পাকা পেঁপে, তরমুজ।
  • প্রাণিজ উৎস: ছোট মাছ (মলা, ঢেলা), কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।

প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা রাতকানা রোগের ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

অন্যান্য রোগের চিকিৎসা

  • ছানি: যদি ছানির কারণে রাতকানা রোগ হয়, তবে অপারেশনের মাধ্যমে ঘোলা লেন্স সরিয়ে নতুন লেন্স প্রতিস্থাপন করলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে।
  • গ্লুকোমা: নিয়মিত ড্রপ ব্যবহার ও চিকিৎসার মাধ্যমে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রাতকানা সমস্যাও কমে আসে।
  • বংশগত রোগ: রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার মতো রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় কঠিন হলেও, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর গতি কমানো সম্ভব।

রাতকানা রোগ কি ভালো হয়?

হ্যাঁ সঠিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতকানা রোগ ভালো হয়। বিশেষ করে, যদি এর কারণ হয় ভিটামিন এ-এর অভাব বা ছানি, তবে সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে বংশগত কারণে হলে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নাও হতে পারে কিন্তু জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।

রাতকানা রোগ নিয়ে (FAQ)

রাতকানা কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?

রাতকানা রোগ মূলত ভিটামিন এ-এর অভাবে হয়। আপনি ভিটামিনের এ  জন্য কচু শাক খেতে পারেন। 

রাতকানা রোগের আরেক নাম কী?

এ প্রশ্নের উত্তরটা আমরা জেনে রাখি, রাতকানা রোগের ডাক্তারি বা বৈজ্ঞানিক নাম হলো নিক্টালোপিয়া (Nyctalopia)।

রাতকানা রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

প্রধান লক্ষণগুলো হলো কম আলোতে বা রাতে দেখতে অসুবিধা, আবছা দেখা এবং উজ্জ্বল আলো থেকে অন্ধকারে এলে চোখকে মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগা।

রাতকানা রোগ হলে কী খাওয়া উচিত?

রাতকানা রোগ হলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, কচু শাক, ছোট মাছ, ডিমের কুসুম, কলিজা, এবং পাকা আম ও পেঁপের মতো ফল খাওয়া উচিত।

শেষ কথা

চোখ আমাদের অমূল্য সম্পদ। রাতকানা রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা সহজেই এই সমস্যা থেকে নিজেদের এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। অল্প আলোতে দেখতে সামান্যতম সমস্যা হলেও অবহেলা করবেন না। দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই পারে আপনার দৃষ্টিশক্তিকে সুরক্ষিত রাখতে।

রোগ ও সমস্যা নিয়ে আরও পড়ুন

আরও পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *