খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। খেজুর খাওয়ার নিয়ম

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। কীটনাশক ফরমালিনের যুগে ভালো খাবার পাওয়াটা দুষ্কর। দেহের পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণে খেজুর হতে পারে একটি উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য। বাংলাদেশে খেজুরের উৎপাদন বেশি না হলেও মধ্যপ্রাচ্যে খেজুরের উৎপাদন ব্যাপক। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি খেজুরের রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুন। খেজুরের অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত আমাদের খেজুর খাওয়া হয় না। কারন আমরা অনেকেই জানিনা যে খেজুরের উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম কি? তো আজকে আমরা এসব বিষয়ে আলোচনা করব। আপনারা মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন –
খেজুরের পুষ্টি উপাদান কি কি
খেজুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান নিহিত থাকে। ৩০ গ্রাম খেজুরের পুষ্টি উপাদান –
এছাড়া আরো আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই ভিটামিন এ ম্যাঙ্গানিজ আয়রন ইত্যাদি।
খেজুরের উপকারিতা কি
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খেজুরের মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো থাকার কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে রোগ জীবাণুর ভাইরাস শরীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে খেজুর বেশ উপকারি ফল। ইনসুলিন সিক্রেট এর সাহায্যে খেজুর প্যানক্রিয়াস এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর শর্করার মাত্রা পরিমিত রাখে, কারণ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। খেজুরে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো বিদ্যমান থাকার কারণে খেজুর খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের কোন সমস্যা হয় না। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের শুকনো খেজুর খাওয়া ভালো।
শারীরিক সক্ষমতা ও বীর্য বৃদ্ধি করে:খেজুরের একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো খেজুর পুরুষের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বীর্য বৃদ্ধি করে। খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান থাকে স্ট্রাডিওল ও ফ্লাভোনয়েডস উপাদান। স্ট্রাডিওল হরমোনের মাধ্যমে নারী-পুরুষের বীর্যের গুণগত মান ঠিক থাকে। সন্তান উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো ও পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এইজন্য প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টা শুকনো খেজুর খাওয়া উচিত।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: খাবার হজমের সমস্যা ও রুচি বৃদ্ধিতে খেজুরের উপকারিতা অপরিসীম। হজমের সমস্যায় ছোট বড় অনেকেই ভোগেন। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মুখে রুচি ফিরে আসবে। শিশুদের একটা নিত্যদিনের সমস্যা হলে তারা খেতে চায় না। এই সমস্যায় তাদেরকে প্রতিদিন খেজুর খেতে দিন। হলে রুচি বেড়ে যাবে এবং হজম শক্তি বেড়ে পাবে। খেজুরে স্যলুবল, ইনস্যলুবল ও বিভিন্ন অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতির কারণে সহজে খাবার হজম হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি: কোষ্ঠকাঠিন্যের অসহ্য সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে খেজুর। এর জন্য শুকনো খেজুরকে রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকাল বেলা সেই পানি ও খেজুর খালি পেটে খেতে হবে।এভাবে নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হার্টের সমস্যা খেজুর: হার্টের সমস্যায় খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা যায় খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালে পিষে খেলে হার্টের সমস্যার সমাধান হয়। খেজুর হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ রাখে। ফলে বিভিন্ন ধরনের হাটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: খেজুর খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে। খেজুরের লিউটেন ও জিক্সাথিন চোখের রেটিনার জন্য বেশ উপকারী। খেজুর চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে: উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের নিয়মিত খেজুর খাওয়া প্রয়োজন। কারণ খেজুরে বিদ্যমান সোডিয়াম ও পটাশিয়াম ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এজন্য দেহে কোলেস্টেরলের সমতা রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
বন্ধ্যাত্ব দূর করে: বন্ধ্যাত্বের সমস্যার সমাধান হিসেবে খেজুরের তুলনা হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে খেজুরের পরাগরেনু বন্ধ্যাক্ত দূর করার পাশাপাশি শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ডিএনএর গুণগতমান বজায় রাখে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়: খেজুর রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। কারণ খেজুরের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তশূন্যতা, রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।এর ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য খেজুর ও দুধ একসঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে অতিরিক্ত পরিমাণে আয়রন পাওয়া যাবে। নিয়মিত খেজুর ও দুধ একসঙ্গে খেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে রক্তশূন্যতার সমস্যা সমাধান হবে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
- খেজুর খাওয়ার জন্য সর্বোত্তম নিয়ম হলো সকালবেলা। রাতে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পানিরসহ খেয়ে ফেলি। শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি পাবেন
- পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার কিছুক্ষণ আগে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিন। তাহলে সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না
- দুধের সাথে খেজুর খান। প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাবেন।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
প্রতিদিন নিয়ম করে ৪/৫ টি করে খেজুর খাবেন। অথবা ১০০ গ্রাম সমপরিমাণ খেজুর। কারণ এই ১০০ গ্রাম খেজুরেই পাওয়া যাবে ২৭৭ ক্যালরি। অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী ফল। খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েকটা খেজুর খেলে দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়। প্রতিদিন সকালবেলা খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ হার্টের সমস্যার সমাধান হয়।
খেজুর ও কিসমিস একসঙ্গে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর ও কিসমিস একসঙ্গে খেলে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়। কিসমিসে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিন খেজুর ও কিসমিস একসাথে খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ঘাটতি দূর হয়, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, স্নায়ুতন্ত্রে কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি?
খেজুরের উপকারিতা বহুগুণ। খাবারের টেবিলে যে কোন সময় খেজুর খাওয়া যায়। প্রতিদিন খেজুর ভিজিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া খেজুর ভিজিয়ে খেলে হার্টের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খেজুর খেলে কি ক্ষতি হয়?
প্রত্যেক খাবারের কিছু সাইট ইফেক্ট থাকে। তেমনি খেজুরের কিছু ক্ষতিকর দিক আছে –
- অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে খেজুরের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরের ব্লাড প্রেসার কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দেবে।
- খেজুর উচ্চ ক্যালোরির খাবার হাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেলে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। যদি ওজন কমানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে খেজুর থেকে বিরত থাকুন।
- খেজুরের মধ্যে পটাশিয়াম থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
- বদ হজম ও পেটের পীড়ার সমস্যা হতে পারে।
মন্তব্য:
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা আমাদের আর্টিকেলে খেজুরের উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আশা করি আপনারা সবাই ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। খেজুর একটি বহুগুন সমৃদ্ধ ফল। নিয়মিত খেজুর খান সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আরও পড়ুন
- পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
- আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
- যবের ছাতুর উপকারিতা এবং যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম
- গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
- রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিৎ?
- শসার উপকারিতা ও অপকারিতা
- খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান, ভালো নাকি খারাপ
- কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, যে বিষয়গুলো না জানলে বিপদ