যবের ছাতুর উপকারিতা

যব ও যবের ছাতু কি?

যব সাধারণত একটি শস্য জাতীয় খাদ্য। যব মুলত গমের মতো দেখতে একটা বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি দেখতে গমের মতো হলেও গমের থেকে এর আকার ছোট। গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যব কে বলে পায়রা। গমের বিকল্প শস্য হিসেবে পুর্বে গ্রামাঞ্চলে যব চাষ করা হত। এটি অনেক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ  প্রাচীন একটি শস্য যা মধ্য প্রাচ্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচুর আবাদ করা হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি এখন বিলুপ্ত প্রায় এবং যবের চাষ ও হয় অনেক কম। যব কে ইংরেজিতে বলা হয় বার্লি। যব মুলত আটা বা যবের ছাতু বানিয়ে তারপর খাওয়া হয়। যবের ছাতু বা বার্লি পাউডার তৈরি করা হয় যব শুকিয়ে বা ভেজে তারপর সেই যব গুলোকে পিষে বা মিহি গুড়া করে নিয়ে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব যবের ছাতুর উপকারিতা, পুষ্টিউপাদান এবং যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম। 

যবের ছাতুর পুষ্টিমান: 

যবের ছাতুর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুন ও সাস্থ্য উপকারীতা। যবের ছাতু হলো যবের মিহি গুড়া। কিন্তু এই খাবার অত্যন্ত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। চলুন দেখে নেই প্রতি ১০০ গ্রাম যবের ছাতু তে কি পরিমাণ পুষ্টিমান রয়েছে:

  1. ২০.৬% প্রোটিন
  2. ৭.২% ফ্যাট
  3. ১.৩৫% ফাইবার
  4. ৬৫.২% কার্বোহাইড্রেট
  5. ২.৭% ভুসি
  6. ২.৯৫% ময়েশ্চার
  7. ৪০৬ ক্যালোরি
  8. সোডিয়াম- ২ মিলিগ্রাম 
  9. ম্যাংগানিজ- ১ মিলিগ্রাম

এছাড়া যবের ছাতুতে আছে মালটোজ, গ্লুকোজ, স্যাকারিন, লেসিথিন, এল্যানটয়েন, এমাইলেস এবং ভিটামিন-বি৩ যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ।

যবের ছাতুর উপকারিতা গুলি:

যবের ছাতু যেহেতু অত্যন্ত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার তাই এর উপকারীতার জুড়ি নেই। চলুন দেখে নেয়া যাক যবের ছাতু আমাদের কি কি উপকার করে…

শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে: 

যব যদিওবা ফাইবার যুক্ত খাবার কিন্তু এতে ফাইবার এর পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ পানি, খনিজ লবণ ও ভিটামিন গুলো থাকে যা পেট ঠান্ডা রাখে এবং শরীর ও ঠান্ডা রাখে। তাই পেট ঠান্ডা রাখতে নিয়মিত খান যবের ছাতু।

ক্ষুধা কমায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: 

যবের ছাতু একটি হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় রকমের ফাইবার থাকে। অদ্রবনীয় ফাইবার খুব ধীরে ধীরে হজম হয় ও দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে। অন্যদিকে দ্রবণীয় ফাইবার দ্রুত পাকস্থলীতে হজম হয়ে শরীরে ক্যালরি তে রুপান্তরিত হয়। যার ফলে দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ হয় এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে ওজন ও কমে। তাই যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন তারা নির্দিধায় যবের ছাতু খেতে পারেন। এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপাদেয় : 

যব ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। যব একটি লো গ্লাইসিমিক ইন্ডেক্স ফুড। যা রক্তে শর্করা জমতে দেয়না। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিবারণ এর মতো কাজও করে। এছাড়াও এটি ডায়াবেটিস নিরোধক প্রাকৃতিক খাবার গুলোর মধ্যে একটি। তাই যবের ছাতু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে কি খাবেন?

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্তের কোলেস্টেরল কমায়: 

মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হলো লো ডেনসিটি লিপিড কোলেস্টেরল অর্থাৎ এল ডি এল। যা রক্তে মিশে হার্টের বিভিন্ন অসুখ সৃষ্টি করে। যবের ছাতু শরীরের এই এল ডি এল এর পরিমান কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল অর্থাৎ হাই ডেনসিটি লিপিড বাড়ায়। যা হার্ট সুস্থ রাখে। সুতরাং যবের ছাতু শরীরের রক্তে থাকা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও হার্ট সুস্থ রাখে: 

যবে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেলস এবং এন্টি অক্সিডেন্ট  যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এ শরাখে ফলে হার্ট ও ব্রেইন সুস্থ থাকে। এছাড়াও যবের ছাতুতে প্রচুর পানি থাকে যা দেহের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে ফলে উচ্চ রক্তচাপ হয়না। অন্যদিকে যব যেহেতু ব্লাড কোলেস্টেরল এল ডি এল নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই হার্টের ভাল্ব, পেশি, ধমনী, শিরা সব ভালো থাকে। তাই হার্ট সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে।

লিভার সুস্থ রাখে ও মুত্রনালীর প্রদাহ কমায়: 

যবে থাকা খাদ্য উৎপাদন গুলো লিভার ভালো রাখে। এটি লিভারের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করে,জ্বালাপোড়া দূর করে। এমন কি যবের ছাতু মুত্রনালীর প্রদাহও দূর করে ফলে কিডনি ভালো থাকে।

ব্রেন ভালো রাখে: 

কোন প্রকার মিষ্টি ছাড়া প্রতিদিন সকালে  যবের ছাতু খেলে ব্রেইন ভালো থাকে। যবের ছাতু তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণ, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও যবের ছাতু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ফলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও সচল রাখার জন্য সঠিক রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন পায়। তাই যবের ছাতু ব্রেন ভালো রাখে। 

শরীরে পুষ্টি যোগায়:

যবের ছাতু অত্যন্ত হাই ক্যালরী, ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন,ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা শরীরে পুষ্টি যোগায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হাড় ও পেশি মজবুত করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো মানসিক অবসাদ দূর করে। প্রতিদিন সকাল বেলা যবের ছাতু পানিতে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর তাই ক্যান্সার প্রতিরোধী: 

যবের ছাতু তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমার ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এছাড়াও এটি হজমে সহায়ক বলে পাচন ক্রিয়া তরান্বিত করে, ফলে শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বেড়িয়ে যায় এবং পাচন তন্ত্র ভালো থাকে। এতে প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুকি কমে।

হজম শক্তি বাড়ায়: 

যবের ছাতু তে দুই রকমের ফাইবার ই বিদ্যমান যা পেটে থাকা হজমে সহায়ক এনজাইম গুলোকে সক্রিয় করে  তোলে ফলে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং মানুষের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে যবের ছাতু ভিজিয়ে খাওয়া উত্তম নয়তো তা পেট ব্যাথার কারণ হতে পারে।

যবের ছাতু তৈরি করার পদ্ধতি

প্রথমে যব মাড়াই করে শস্যদানা গুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর যবের দানা গুলোকে ভালো ভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর যব গুলোকে সামান্য ভেজে নিয়ে মেশিনে কিংবা যাতায় পিষে মিহি পাউডার তৈরি করে নিতে হবে। এভাবেই তৈরি হবে যবের ছাতু।

যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম:

যবের ছাতু সাধারণত পানি মিশিয়ে সামান্য লবণ চিনি যোগ করে খাওয়া হয়। চিনি ছাড়াও খেতে পারেন। এছাড়াও এক গ্লাস পানি তে দুই চামচ ছাতু, সামান্য লবণ ও কিছুটা মধু মিশিয়ে ছাতুর শরবত করে খাওয়া যেতে পারে।এছাড়াও যবের আটার রুটি বানিয়ে খাওয়া হয়।যায় ডায়াবেটিস রোগীদের এবং যারা ডায়েটে আছেন তাদের জন্য ভীষণ উপকারী।

যবের ছাতু কোথায় পাওয়া যায়

বাজারে যবের ছাতু এখন অতটা সহজলভ্য নয়। তবে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কিছু ব্যাবসায়ীক পেজ আছে যারা এধরণের খাবার নিয়ে কাজ করে এবং এসমস্ত পেজে যবের ছাতু সহজেই পাওয়া যায়। আপনি অর্ডার দিলে তারা কুরিয়ার এর মাধ্যমে হোম ডেলিভারি দিয়ে দিবে আপনার কাঙ্খিত যবের ছাতু। 

এই লেখায় আমি যবের ছাতুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি যা আপনাদের কাজে লাগবে। আশাকরি যারা সাস্থ্য সচেতন মানুষ তারা অবশ্যই নিজের খাদ্য তালিকায় যব এর ছাতু রাখবেন এবং নিজেই পরখ করে দেখবেন এর উপকারীতা।

খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *