আমলকি একটি টক স্বাদের ছোট ফল যা পুষ্টি উপাদান এ ভরপুর। এছাড়াও এটি একটি ভেষজ ঔষধি হিসেবে অনেক প্রশংসিত একটা ফল। আমলকির উপকারীতা বলে শেষ করার মতো নয়। যদিওবা সামান্য পাশ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তবুও আমলকি তে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট গুলো হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব আমলকির খাওয়ার উপকারীতা ও অপকারীতা গুলো কি কি। 

আমলকির পুষ্টিগুন ও আমলকিতে কি কি ভিটামিন রয়েছে

আমলকি তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন-এ,ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এছাড়াও রয়েছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ক্যারোটিন সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান। এছাড়াও আমলকি এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং বিভিন্ন বড় বড় রোগ প্রতিরোধী। তাই সুস্থ থাকতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে রোজ আমলকি খাওয়া উচিৎ । 

আমলকি খাওয়ার উপকারীতা

আমলকি তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট যার ফলে সাস্থ্যের উপর আমলকির ইতিবাচক প্রভাব বলে শেষ করা সম্ভব নয়। চলুন দেখে নেই আমলকির সাস্থ্য উপকারীতা: 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও সংক্রমণ থেকে বাঁচায় : আমলকিতে থাকা ভিটামিন ও এন্টি অক্সিডেন্ট গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। যা শরীর কে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এটি শরীর কে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়।

হৃদরোগের ঝুকি কমায় ও হার্ট সুস্থ রাখে: আমলকি তে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট গুলো শরীরে এল ডি এল নিয়ন্ত্রণে এনে এইচ ডি এইল বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে কোলেস্টেরল জমতে দেয়না। এতে হার্টের ধমনী ও রক্তনালির পর্দায় চর্বি জমতে দেয়না। ফলে হার্টের পেশি গুলো ভালো থাকে ও কর্মক্ষম হয়। এছাড়াও আমলকিতে ক্রোমিয়াম থাকে যা এথেরোক্লোরেসিস এর ঝুকি কমিয়ে দেয়। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : আমলকি লো গ্লাইসিমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট রক্তের গ্লুকোজ কমায়, কোষ থেকে ইনসুলিন বেড়িয়ে যেতে দেয়না।এতে শরীর সুস্থ্য থাকে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে।

বিপাক ক্রিয়া উন্নত করেঃ আমলকি তে প্রচুর ফাইবার ও রয়েছে যা হজমে সহায়তা করে ফলে বিপাক ক্রিয়া তরান্বিত হয়। বিপাক তন্ত্র ভালো থাকে, এছাড়াও আমলকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এমন কি ডায়রিয়াও কমাতে সাহায্য করে। 

মুত্রনালীর সংক্রমনের দূর করে ও রজচক্রের সমস্যা দূর করেঃ আমলকি তে থাকা উপাদান গুলো কিডনী রোগ প্রতিরোধ করে,মুত্রের পরিমাণ  বাড়ায়,ফলে মুত্রনালীর সংক্রমনের হার কমে।এটি গর্ভবতী নারীদের জন্য ভীষণ কার্যকরী। তাই গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া উত্তম।এছাড়াও নারীদের মাসিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে আমলকি।

মেটাবলিক সিস্টেম উন্নত করেঃ আমলকিতে থাকা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মেটাবলিক সিস্টেম ভালো রাখে।এতে পেশি সুগঠিত হয় এবং প্রোটিন সেলুলার ডেভেলপমেন্ট এও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না: আমলকি তে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।ফলে রিংকেলস কম পড়ে। ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধি পায়।  আমলকি তে থাকা ভিটামিন তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে আমলকি: চুলের যত্নে আমলকির জবাব নেই। আমলকি খাওয়ার পাশাপাশি আমলকি চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুল হয় ঘন, কালোও মসৃণ।  আমলকির তেল বা আমলা তেল চুলে ব্যবহার করা যায়। আমলকি শুকিয়ে গুড়ো করে তা দিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার কর‍তে পারেন। এছাড়াও আমলকির গুড়া, শিকাকাই, রিঠা একসাথে মিশিয়ে ভেষজ শ্যাম্পু তৈরি করা যায় যা চুল পড়া রোধ করে,এছাড়াও তাজা আমলকি পেস্ট করেও দেওয়া যায় এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়।

 চোখের যত্নে আমলকি: চোখের যত্নেও আমলকি ব্যবহার করা হয়।আমলকি তে ভিটামিন এ রয়েছে যা অন্ধত্ব, চোখে ছানি পড়া,রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।যারা দুরের জিনিস কম দেখে তাদের জন্য এটি উপকারী। এছাড়াও আমলকি খেলে চোখের উপর চাপ কমে।যা দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।

ত্বকের যত্নে আমলকি: আমলকির যেমন সাস্থ্য উপকারীতা এবং চুল ও চোখের যত্নে কার্যকারিতা রয়েছে তেমনি ত্বকের যত্নেও আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।রুপচর্চায় আমলকির বিশেষ সুনাম রয়েছে।রোদের ট্যান,মুখের পিগমেন্টেশন কিংবা এক্সফোলিয়েশন করতে আমলকির জুড়ি নেই। ত্বকের সমস্যা দূর করতে আমলকির রস চেহারায় লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার পর ধুয়ে ফেললে অনেক টা উপকার পাওয়া যায়।

এছাড়াও আমলকির গুড়ো দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়েও ব্যবহার করা যায়।আমলকির গুড়া, টকদই, মধু ও হলুদ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে তা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হবে টানটান ও সান ট্যান সম্পুর্ন দূর হয়ে যাবে। এই ফেসপ্যাক ঘাড় ও গলায় ও ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও আমলকির রস ও কাঁচা পেপের পেস্ট একসাথে দারুন এক্সফোলিয়েটার হিসেবে কাজ করে। 

কাচা আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

আমলকি সারাদিন ই খাওয়া যায়।যাদের ঠান্ডা বা কফ এর সমস্যা আছে তারা কাচা আমলকি চিবিয়ে খাবেন।পেটের সমস্যা হলে আমলকির রস খাবেন। কিংবা আমলকি সেদ্ধ করে অথবা আচার বানিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকির রস খাওয়া উচিৎ। 

সারাদিনে কয়টা আমলকি খাবেন

ত্বক কিংবা সাস্থ্য ভালো রাখতে সারাদিন একটা আমলকি খাওয়াই যথেষ্ট। এখন শীতকাল তাই আমলকি প্রচুর সহজলভ্য। এসময় আমলকি কিনে প্রতিদিন একটা বা দুইটা করে খেতে পারেন। এতে ত্বক থাকবে প্রানবন্ত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে প্রতিনিয়ত। 

আমলকি খাবার পরে পানি খেলে মিষ্টি লাগে কেন

আমলকি একটু টক স্বাদের ফল এটি খেলে প্রথমে টক স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু আমলকি খাওয়ার পর পানি পান করলে তা মিষ্টি লাগে এর কারণ হলো আমলকি ভিটামিন সি যুক্ত ফল এবং এতে এসকরবিক এসিড ও রয়েছে। অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির পিএইচ (pH)মান  ৭ এবং এটা অ্যাসিড ও ক্ষার–এর মাঝামাঝি। পিএইচ (pH)–এর মান ৭–এর বেশি হলে সেটা ক্ষারধর্মী হয়। তাই আমলকী খাওয়ার পর পানি পান করলে এর অ্যাসিডধর্মী টক স্বাদ অনেকটা হালকা হয়ে যায় এবং মিষ্টি স্বাদের অনুভূতি পাওয়া যায়।

আমলকির অপকারীতা

আমলকি অত্যন্ত উপকারী ফল হলেও অতিরিক্ত আমলকি খাওয়া হিতে বিপরীত ফলাফল দিতে পারে৷ তাই কিছু আমলকির ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো কি? 

১। আমলকি তে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই দিনে দুই একটার বেশি আমলকি খাওয়া উচিৎ নয় এতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং অতিরিক্ত ভিটামিন স্থুলতার জন্যও দায়ী।

২। আমলকি শরীরের তাপমাত্রা কমায় তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই ঠান্ডা লেগে আছে তাদের আরও অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে।

৩। যাদের আমলকিতে এলার্জি আছে তারা আমলকি এড়িয়ে চলুন। নয়ত এলার্জি বাড়তে পারে। 

৪। সার্জারির পরে আমলকি খাওয়া উচিৎ নয়।অনেকেই সার্জারীর পরে ব্লাড থিনিং এর জন্য মেডিসিন নিয়ে থাকেন। আমলকি তে থাকা উপাদান গুলো এর সাথে বিক্রিয়া করে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া আমলকি খাবেন না।দুগ্ধদান রত মায়েরাও এটি এড়িয়ে চলুন।

৫। বড় ধরনের হৃদরোগীরা আমলকি এড়িয়ে চলুন। আমলকি কার্ডিওভাস্কুলার উদ্দিপক হিসেবে কাজ করে, যদিও এটি হার্টের রোগীদের জন্য উপকারী কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি হার্টের রোগীদের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফল খাওয়ার পুর্বে ডাক্তারি পরামর্শ নেয়া জরুরি। 

৬। হাইপার এসিডিটির সমস্যা যাদের আছে তারা আমলকি খাবেন না।আমলকিতে এসকরবিক এসিড থাকে। এটি এসিডিটির সমস্যা বাড়িয়ে দেবে। তাই এমন রোগীরা আমলকি খাবেন না।

৭। হাইপার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত মানুষ বীজ যুক্ত আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

আমলকি একটি অত্যন্ত উপকারী এবং ভেষজ ঔষধি গুন সম্পন্ন ঔষধী ফল।এর উপকারী বলে শেষ করার মতো নয়। কিন্তু এর কিছু অপকারী দিক ও রয়েছে।তাই নিয়ম মেনে রোজ আমলকি খান নিজের ত্বকের জেল্লা, চোখের জ্যোতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।

খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *