প্রযুক্তির এই যুগে বর্তমানে অসম্ভব অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ। বর্তমানে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত একটা টেকনোলজি হচ্ছে মোবাইল ফোন। যা দিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেকোনো সময় আমরা যোগাযোগ করতে পারি। অনেক সময় আমাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল আস, মেসেজ আসে, কিন্তু আমরা অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি না। এতে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়ে যাই।

এমন অবস্থায় সবারই একটা কমন প্রশ্ন থাকে যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে কি পরিচয় বের করা যায়? তাদের জন্য আমাদের আজকের এই লেখাটি। তো আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে মোবাইল থেকে আপনি কোন ব্যক্তির লোকেশন বা পরিচয় জানতে পারবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক –

মোবাইল নাম্বার দিয়ে পরিচয় বের করার উপায়

  • অ্যাপস এর ব্যবহার।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার।
  • পুলিশের সহায়তা।

১.অ্যাপস এর ব্যবহার

মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসায় অনেকেই বিব্রত অবস্থায় পড়ে যান। নাম্বারে ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। অনলাইনে মোবাইল নাম্বার দিয়ে পরিচয় বের করার বিভিন্ন অ্যাপস আছে। তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হচ্ছে ট্রু কলার (Truecaller) অ্যাপস। এই অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইলে কল লিস্টের সকল তথ্য পাওয়া যায়। ইনকামিং ও আউটগোয়িং কলের সকল তথ্য স্টোর করা হয়।

ট্রু কলার ( True caller) যেভাবে কাজ করে : বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে ট্রুকলার অ্যাপস। truecaller অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে সহজেই ডাউনলোড করা যায়। ফোনে ইন্সটল করার পর অ্যাপস এর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে এবং আপনার ফোন নাম্বার এবং জিমেইল আইডি দিয়ে লগইন করতে হবে।
ট্রুকলার আপনার ফোনে যত সেভ নাম্বার, নাম আছে সবগুলোর তথ্য স্টোর করে রাখে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলে স্কিনে ব্যবহারকারীর নাম প্রকাশ করে। ট্রুকলার ব্যবহারে অনেক সুবিধা আছে ট্রুকলার ব্যবহার করে পরিচয় বের করা ছাড়াও আপনি স্বাভাবিকভাবে ফোন কল করতে পারবেন কোন নাম্বার ব্লক করার সুবিধা পাবেন।

২.সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য আমাদের একটা একাউন্ট খুলতে হয়। সেখানে নাম ও নাম্বারের প্রয়োজন হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায় এবং বিভিন্ন তথ্য বা  ইনফরমেশন কালেক্ট করা যায়।

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন : ফেসবুক, মেসেঞ্জার, whatsapp, টুইটার, ইমো। এগুলো বাংলাদেশের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির পরিচয় জানার জন্য যা করতে হবে তা হল – ফেসবুকের সার্চ বারে  গিয়ে অপরিচিত নাম্বারটি দিয়ে সার্চ করতে হবে। যদি অপরিচিত নাম্বারের ব্যক্তিটি সেই নাম্বার দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে এবং প্রাইভেসিতে ফোন নাম্বার পাবলিক করে রাখে তাহলে সার্চ করার সাথে সাথেই সেই ব্যক্তির নাম এবং ছবি চলে আসবে।

এছাড়া ইমো ব্যবহার করেও জানা যায়। এর জন্য  নাম্বারটি নিজের ফোনে সেভ করতে হবে। যদি নাম্বারটি দিয়ে কোন ইমো একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে আপনার ফোনে ডাটা চালু করার সাথে সাথে সেই নাম্বারের ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট আপনার ইমু একাউন্টে চলে আসবে। তো এভাবে মোবাইল দিয়ে পরিচয় বের করা যায়। 

৩.পুলিশের সহায়তা

কোন ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, লোকেশন জানার জন্য আইনগতভাবে পুলিশের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। কারণ যখন একটা সিম কেনা হয়, তখন সেটা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এর ফলে ব্যক্তির নাম, ছবি, গ্রামের নাম, মোবাইল নাম্বার, বাবা মায়ের নাম ইত্যাদি তথ্য সরকারিভাবে জমা রাখা হয়। 

পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় যে কোন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে সেই ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তার বর্তমান লোকেশন জানতে পারে। এর জন্য সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা থেকে একদিন বা দুই দিন। তো অপরিচিত নাম্বার নিয়ে যদি আপনি পেরেশানিতে পড়েন তাহলে পুলিশের সাহায্য নিন। এর জন্য আপনাকে কিছু কাজ করতে হবে কিছু নিয়ম ভালো করতে হবে। প্রথমে আপনাকে আপনার নিকটস্থ থানায় একটা সাধারন জিডি করতে হবে। যদি মোবাইল নাম্বারটি সচল থাকে তাহলে পুলিশ অতি সহজেই সেই ব্যক্তির লোকেশন জানতে পারবে। 

জিজ্ঞাসিত আরো কিছু প্রশ্ন

নাম্বার গোপন রেখে কল করা যায় কিনা?

হ্যাঁ ভা, নাম্বার গোপন রেখে কল করা যায়। এর জন্য অ্যাপস এর প্রয়োজন। গুগল প্লে স্টোরে নাম্বার গোপন রেখে কল করার বিভিন্ন অ্যাপস আছে। অ্যাপসগুলো ফোনে ইন্সটল করে অ্যাপসের নির্দেশনা মেনে সবকিছু এলাও করতে হবে। তাহলে নাম্বার হাইড করে আপনি কথা বলতে পারবেন এই অ্যাপসগুলো ব্যবহার করা কিছুটা বিপদজনক। কারণ এই অ্যাপসগুলো ফোনে ইন্সটল করলে ফোনের সকল তথ্য স্টোর করে নেয়। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতছানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে করণীয় কি?

এর জন্য আপনাকে থানায় যেতে হবে মোবাইল ফোনের সকল কাগজ পত্র থানায় জমা দিতে হবে। কখন কিভাবে হারিয়ে গেছে সবকিছু ডিটেইলস বলতে হবে। প্রত্যেক মোবাইলে দুটি করে IMEI থাকে। আপনি যদি মোবাইল ফোনের IMEI নাম্বার মনে রাখতে পারেন বা কোথাও লিখে রাখেন, তাহলে সেই IMEI নাম্বার পুলিশের কাছে দিন তাহলে অতি দ্রুত আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোন ফেরত পাবেন। IMEI চেক করার কোড *#০৬#।

মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি বা এনআইডি বের করা যায়?

 হ্যাঁ মোবাইল নাম্বার দিয়ে এনআইডি বের করা যায়। কিছু স্টেপ ফলো করুন – মেসেজ অপশন থেকে টাইপ করতে হবে  SC(স্পেস)F(স্পেস)স্লিপের ৮ ডিজিট নাম্বার (স্পেস)D(স্পেস)আট সংখ্যার জন্ম সাল ড্যাস(-)দুই সংখ্যার জন্ম তারিখ। লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১০৫ নাম্বারে।

মোবাইল নাম্বার বের করার উপায়

মোবাইলের নাম্বার যদি না জানা থাকে তাহলে এটা বের করা খুবই সহজ। এজন্য বিভিন্ন অপারেটরের বিভিন্ন কোড থাকে যেমন 

  • গ্রামীন সিম – *২#
  • এয়ারটেল – *১২১*৬*৩#
  • বাংলালিংক – *৫১১#
  • টেলিটক  – *৫৫১#
  • রবি  – *১২৪*২*৪#

পরিশেষ

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম মোবাইল নাম্বার দিয়ে পরিচয় বের করার উপায় কি কি । আপনারা যদি আমাদের স্টেপ গুলো ফলো করেন তাহলে সহজেই মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করতে পারবেন। 

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *