ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে কি খাবেন?

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়ে অসুস্থতা সৃষ্টি করে।এইরোগ নিরাময় যোগ্য নয়।আর শুধুমাত্র ঔষধ বা ইনসুলিন নিয়েও এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত রাখতে হলে একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, নিয়মিত ব্যায়াম ও নিয়মিত ঔষধ এই চারটি বিষয় মানতেই হবে।আর ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের বিষয় টি খুব ভালো ভাবে মেনে চলতে হয় নাহলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিন ভিটামিন ও ফাইবার এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রাতের খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিস হলে রাতে একদম কম খাওয়া উচিৎ কিংবা না খাওয়াই উত্তম। অনেকে ভাবেন ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে শুধু রুটি খাবেন।কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মুলত রাতের খাবার ক্যালরি মেপে খাওয়া উচিৎ । আর শর্করা যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। চলুন দেখে নেয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে কি খাবেন তার একটি তালিকা…….

ডায়াবেটিস রোগীরা কি কি খাবার খাবেন? 

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে শর্করার মাত্রা যত কম হবে ততই ভালো আর ফাইবার পরিমাণ যত বেশি হবে তত ভালো। তাই খাবার নির্বাচনে একটু সচেতন থাকা জরুরি। চলুন দেখে নেয়া যাক এমন কিছু খাবার। 

ওটস:

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওটস অত্যন্ত উপকারী। ওটস হাই ফাইবার ও হাই নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ খাবার। এতে শর্করার পরিমাণ ও অনেক কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের খাবারে ওটস খেতে পারেন। ওটস, তরল দুধ, চিয়াসীড ও আপেল কুচি মিশিয়ে উপাদেয় রাতের খাবার বানানো যায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।

মোটা লাল চাল ও লাল গমের আটা: 

মোটা লাল চাল ও লাল গমের আটাও ডায়াবেটিস রোগীদের রাতের খাবারের জন্য উপযোগী। এসবে হাই ফাইবার থাকে এবং চালের ও আটার লাল আবরণে থাকে ভিটামিন ও মাল্টি নিউট্রিয়েন্টস । তাই ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের খাবারে এককাপ লাল চালের ভাত অথবা দুইটা লাল আটার রুটির সাথে এক কাপ ঘন ডাল,এক কাপ মিক্সড সবজি এবং ৬০ গ্রাম প্রোটিন মাছ অথবা মাংশ রাখতে পারেন । 

বিভিন্ন প্রকারের সবজি :

সবজির পুষ্টিগুন সমন্ধে সবাই ভালো করেই জানে আর বেশিরভাগ সবজি শর্করা ফ্রী তাই ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের খাবারে বিভিন্ন রকমের সেদ্ধ সবজির সাথে খানিকটা ডিম মিশিয়ে সবজির সালাদ কিংবা বিভিন্ন সবজি মিশিয়ে সবজির স্যুপ কিংবা স্টু বানিয়ে খেতে পারেন।সব ধরনের শাক,পেপে,লাউ,মিষ্টি কুমড়া,মিষ্টি আলু,গাজর ইত্যাদি সবজির গ্লাইসিমিক ইনডেক্স ও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। সেক্ষেত্রে এসব সবজি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপাদেয়। 

চিবিয়ে খাওয়া যায় এমন সব ফল: 

ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী খাবার। ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের খাবারে ফল রাখতে পারেন যেমন আম, কালোজাম,কলা, ব্লুবেরি,স্ট্রবেরি,আম,  আপেল, তরমুজ,পেয়ারা, ডালিম এধরনের ফল রাখতে পারেন। বিভিন্ন ফলের সাথে টকদই মিশিয়ে ফ্রুট স্যালেড বানিয়ে খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা । 

দুধ ও টকদই:

দুধ কে আমরা সুপার ফুড বা সুষম খাদ্য বলে থাকি। দুধে সব রকমের পুষ্টি উপাদান রয়েছে আর অন্যদিকে টকদইয়ে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা হজমে সহায়তা করে। তাই দুধ আর টকদই ডায়াবেটিস রোগীদের রাতের খাবারের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীরা খাবার কখন খাবেন? 

ডায়াবেটিস রোগীদের উচিৎ রাত ৮ টা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া।কারণ খাবার খেয়ে খাবার যদি শরীর হজম করে ক্যালরি বার্ণ করতে না পারে তাহলে সেই খাবার থেকে আসা গ্লুকোজ রক্তে জমা হয়ে ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেবে। অনেকে রাতের খাবার দেরিতে খায় এবং খাওয়ার পর পর ই ঘুমিয়ে পড়ে এতে শরীর খাবার হজম করে ক্যালরি বার্ণ করতে পারেনা আর শরীরে শর্করা বাড়তেই থাকে।

তাই ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের খাবার দ্রুতই সেরে নিন আর খাবার খাওয়ার অন্তত তিন ঘন্টা পরে ঘুমাতে যান। এতে খাবার থেকে উৎপন্ন ক্যালরির ৬০/৭০% বার্ন হয়ে যাবে এবং বাকিটা ঘুমানোর সময় ধীরে ধীরে বার্ণ হয়ে যাবে। যাদের শেষ রাতে হঠাৎ ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমে যাওয়ার সমস্যা অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সমস্যা আছে এবং যারা ইনসুলিন নেন ও সালফানিল ইউরিয়া যুক্ত ঔষধ খান  তারা ঘুমানোর আগে হালকা নাস্তা করতে পারেন যেমন একগ্লাস দুধ কিংবা সুগার ফ্রী বিস্কিট। 

ডায়াবেটিস রোগীরা কতটুকু খাবার খাবেন?

ডায়াবেটিস রোগীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ মেনে রাতের খাবার খাওয়া উচিৎ। একজন ডায়াবেটিস রোগী সারাদিন যত ক্যলরির  খাবার খাবে তার ২০% রাতের খাবার হিসেবে খাবে। সারাদিনে যদি ১৬০০- ১৮০০ ক্যালরির খাবার খায় তবে রাতে ৩০০-৩৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে।

এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে যথা সম্ভব কম তেল মসলা যুক্ত খাবার খাবার খেতে হবে। পোলাও, খিচুড়ি,বিরিয়ানি, তেহারি,মাংসের তৈরি খাবার  এড়িয়ে চলতে হবে। নাহলে এসব খাবারের থাকা তেল মসলা চর্বি ব্লাড কোলেস্টেরল, প্রেশার, ডায়াবেটিস  বাড়িয়ে দেবে। সাথে দেখা দেবে এসিডিটির সমস্যা।

রোগ ও সমস্যা নিয়ে আরও পড়ুন

আরও পড়তে পারেন

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *