কেন পুরুষদের গড় আয়ু নারীদের চেয়ে কম?

কেন পুরুষদের গড় আয়ু নারীদের চেয়ে কম

পুরুষদের গড় আয়ু মহিলাদের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে কম, এবং এই বৈপরীত্য বহু বছর ধরে গবেষক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের গড় আয়ু কম হওয়ার প্রধান তিন টি কারণ হলো: জৈবিক, আচরণগত এবং সামাজিক প্রভাব। এই কারণ গুলো প্রত্যক্ষ ভাবে পুরুষদের গড় আয়ু কমিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।

পুরুষদের আয়ু কম হওয়ার একটি প্রাথমিক কারণ হল জৈবিক কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘায়ু হওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের একটি প্রাকৃতিক সুবিধা রয়েছে, কারণ তাদের শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম থাকে এবং কিছু জেনেটিক রোগের ঝুঁকি কম থাকে। উপরন্তু, হরমোন ইস্ট্রোজেন, যা মহিলাদের মধ্যে বেশি প্রচলিত, হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুকি অনেক অংশে কমিয়ে দেয়। তাই নারীরা পুরুষদের তুলনায় দীর্ঘজীবি হয়।

আচরণগত পার্থক্যগুলিও নারী পুরুষের  আয়ুষ্কালের ব্যবধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমন ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা না চাওয়া ইত্যাদি তাদের সাস্থ্য ঝুকি বড়িয়ে দেয়। এই আচরণগুলি তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে এবং জীবন ঝুকিতে ফেলতে পারে।

পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে আয়ুষ্কালের ব্যবধানেও সামাজিক প্রভাব একটি ভূমিকা পালন করে। পুরুষরা তাদের আবেগকে দমন করার জন্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির জন্য সাহায্য চায় না। তারা নিজেদের মানসিক যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখে, যা বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার উচ্চ হারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উপরন্তু, পুরুষদের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করার এবং বিপজ্জনক কার্যকলাপে জড়িত থাকে বেশি। যা তাদের আঘাত পাওয়া এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তাই পুরুষদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করার জন্য এই কারণগুলির সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিতে উৎসাহিত করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গ্রহণে উৎসাহিত করা। এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নশীল হতে উৎসাহিত করলে তাদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 

পুরুষদের গড় আয়ু কম হবার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ

পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে আয়ুষ্কালের পার্থক্য সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যে দেয়া হলো, যা আপনাদের সামগ্রিক বিষয় টি বুঝতে সাহায্য করবে।

কার্ডিওভাসকুলার রোগ: মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের কম বয়সে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সে তুলনায় নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকার কারোনে তাদের হৃদরোগের ঝুকি অনেকটাই কম। 

2. ক্যান্সারের ঝুঁকি: 

পুরুষদের নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যেমন ফুসফুস এবং লিভার ক্যান্সার, যা তাদের কম আয়ু হওয়ার অন্যতম কারণ। জৈবিক কারণ, যেমন হরমোনের পার্থক্য, সেইসাথে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবনের মতো আচরণগত কারণগুলি কম আয়ু হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।

3. জেনেটিক্স: 

জেনেটিক কারণগুলিও পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে আয়ুষ্কালের পার্থক্যের জন্য অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জেনেটিক মিউটেশন পুরুষদের কিছু রোগ বিকাশের উচ্চ ঝুঁকির দিকে প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে যা তাদের দীর্ঘায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে।

4. ইমিউন সিস্টেম ফাংশন: 

মহিলাদের সাধারণত পুরুষদের তুলনায় শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম থাকে, যা তাদের সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে লড়াই করার ক্ষমতায় অবদান রাখে। এই জৈবিক পার্থক্য নারীদের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু দান করে।

5. হরমোনের প্রভাব

পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে হরমোনের পার্থক্য, যেমন মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতি, হাড়ের ঘনত্ব, পেশী ভর এবং নির্দিষ্ট রোগের প্রতি সংবেদনশীলতার ফলে নারীরা দীর্ঘায়ু পুরুষ দের তুলনায়।

উপসংহারে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের কম আয়ু একাধিক কারণের সাথে সম্পর্কিত একটি জটিল সমস্যা। জৈবিক, আচরণগত এবং সামাজিক প্রভাব মোকাবেলা করে, আমরা নারী পুরুষের আয়ুষ্কাল এর ব্যবধান কম করার এবং পুরুষদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং আয়ু বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি। সাধারণ ব্যক্তি, চিকিৎসক  এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এই পুরুষদের কম আয়ুষ্কাল রোধ করতে এবং পুরুষের শারীরিক ও মানসিক সাস্থ্যের উন্নতির লক্ষে একসাথে কাজ করা  অত্যন্ত জরুরি । এতে নারী এবং পুরুষের আয়ুষ্কাল এর যা পার্থক্য রয়েছে তার ব্যবধান দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব।

জীবনযাপন নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *