মানব জীবনের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য, সামাজিক জীবনে পারিপার্শ্বিক চাহিদা, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনায় পাশে থাকার জন্য আমাদের একজন সঙ্গী প্রয়োজন হয়। অথচ সেই সঙ্গীর সাথে প্রথমদিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও একসময় দুজনের মধ্যে শুরু হয় মনোমালিন্য, বেড়ে যায় দূরত্ব, সম্পর্কে ওঠে ভাঙ্গনের সুর। কিন্তু সেই সময় আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কেন এমন হচ্ছে? কেন সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? চলুন তাহলে আলোচনা করি যে কারণে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় –

দুজন দুজনের প্রতি ঘৃণা

বেশিরভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় শুধুমাত্র ঘৃণার কারণে। প্রত্যেক মানুষের পছন্দ অপছন্দ আলাদা। একটি সম্পর্কে যখন দুজন ব্যক্তি আবদ্ধ হয় তখন তাদের একে অপরের পছন্দ অপছন্দকে সম্মান করা উচিত। কিন্তু আপনি যদি আপনার সঙ্গীর পছন্দকে ঘৃণা করেন, অবজ্ঞা করেন বা উপহাস করেন, তখন একে অপরের  প্রতি আত্মবিশ্বাস,  মর্যাদা, শেষ হয়ে যায়। কারণ যখন সঙ্গীর পছন্দ অপছন্দকে ঘৃণা করা হয়, তিরস্কার করা হয় তখন  সেই বিষয়টা সঙ্গীর সম্মানে লাগে। এর কারণে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুজন দুজনের প্রতি ঘৃণা করা যাবে না। 

সঙ্গীকে গুরুত্ব না দেওয়া 

সম্পর্ক মজবুত হয় তখন যখন একজন আরেক জনের প্রতি গুরুত্ববোধ করে। সম্পর্কে একে অপরের প্রতি  গুরুত্ববোধ থাকাটা ভীষণ জরুরী। একটা সম্পর্কের আগে দুজন  আলাদা,  কিন্তু যখন একটা সম্পর্ক যখন হয়ে যায় তখন দুজন মানুষ এক হয়ে যায়। বর্তমানে দেখা যায় কোন একটা কাজ করতে গেলে সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেই না। তার মতামতকে উপেক্ষা করি। এতে করে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়ে সম্পর্ক অবনতি হয়।

আবার অনেক সময় এমনও হয় যে সঙ্গীকে খুশি রাখতে গিয়ে, সঙ্গীর সবকিছু গুরুত্ব দিতে গিয়ে, আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এইরকম পরিস্থিতিতে সঙ্গীর সঙ্গে কখনো রাগ না করে তার সঙ্গে কথা বলুন তাকে বুঝিয়ে বলুন।যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাকে এবং তার মতামতের গুরুত্ব দিন। নয়তো সম্পর্কের অবনতি আস্তে আস্তে বেড়ে যাবে একসময় এবং একসময় সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। 

সমস্যা সমাধানে চেষ্টা না করা 

দুজন মানুষ যখন একই ছাদের নিচে বসবাস করে তখন তাদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা হতেই পারে। বিভিন্ন বিষয়ে একজন আরেকজনের প্রতি বিরক্ত হতেই পারেন। তাই বলে কি এর সমাধান হবে না? অনেকেই আবার মনে করেন যে, এই সব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কথা না বলে নীরব থাকাই ভালো। কিন্তু এর ফলে প্রতিদিন এর একটু একটু সমস্যা ভবিষ্যতে অনেক বড় সমস্যায় পরিণত হবে। দুজনের মাঝে তৈরি হয়ে যাবে বড় একটা দেয়াল। 

যখন এ-ই সমস্যার বিষয়ে চুপ থাকা হয়,  সঙ্গীর সাথে কোন আলোচনা হয় না তখন সম্পর্ক আস্তে আস্তে ফাটল ধরে এবং সম্পর্ক নিরবে শেষ হয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলুন তাকে বোঝান, তার সঙ্গে আলোচনা করুন। এরপর দুজনের মতামত অনুযায়ী সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন এবং সামনে এগিয়ে যান। 

একে অপরের প্রতি তিরস্কার 

ভুল ভ্রান্তি সমস্যা মানুষের মধ্যে থাকবেই তবে এই জন্য সঙ্গীকে তিরস্কার করা উচিত নয়। সঙ্গীর ব্যবহার গত, আচরণগত সমস্যা নিয়ে ডিরেক্ট কথা না বলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। সমস্যার সমাধানের জন্য কখনোই তাকে আঘাত মূলক কথা বলা যাবে না। এতে করে সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা আরো বেড়ে যাবে।

আপনার সঙ্গীর আচরণে বা ব্যবহারে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সঙ্গীর এই ভুলগুলো তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন। তাহলে সঙ্গী অবশ্যই তার ভুলগুলো বুঝতে পারবে এবং নিজেকে ঠিক করে নেবে। অন্যথায় যদি আপনি সঙ্গির ভুলগুলো তাকে ধরিয়ে না দেন তাহলে সঙ্গে ভেবে নেবে তার কোন সমস্যা নেই। ফলে ভুলগুলো অনবরত চলতেই থাকবে। তবে আপনি যদি ভুলগুলো নিয়ে তিরস্কার করেন তাহলে ভুলগুলো সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। 

সঙ্গী কে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় না দেওয়া 

সঙ্গীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় না দিলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। আর এই দূরত্বই এক সময় সম্পর্ককে দূরে নিয়ে যায়। আপনি যখন আপনার সঙ্গীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিতে পারবেন না বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকবেন তখন সব সময় আপনার সঙ্গী একাকীত্ব অনুভব করবে। এর কারণে আপনার প্রতি তার একটা রাগান্বিত ভাব তৈরি হবে এবং বেশিদিন এরকম চলতে থাকলে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। শারীরিকভাবে আপনার সঙ্গীর কাছাকাছি থাকুন, তাকে ভালবাসুন, তাকে স্পর্শ করুন, জড়িয়ে ধরুন। আপনার সঙ্গী আপনার কাছে মূল্যবান এটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এতে করে সম্পর্ক হবে মজবুত হবে।

সঙ্গীর প্রশংসা না করা 

সম্পর্ককে সুন্দর ও সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর জন্য সব সময় সঙ্গীর প্রশংসা করুন। প্রশংসা না করলে আপনার উপর থেকে সঙ্গীর সহানুভূতি কমে যাবে। সব সময় মনোমালিন্য হবে। ধরুন আপনার সঙ্গী অনেক সুন্দর করে খাবার দাবার তৈরি করে তাহলে তার প্রশংসা করুন তাকে বলুন যে খাবার অনেক সুস্বাদু হয়েছে। দেখবেন আপনার সঙ্গী অনেক খুশি হয়েছে। আপনার সঙ্গী যখন সাজগোজ করে তখন বেশি বেশি তার প্রশংসা করুন কারণ প্রত্যেকেই চায় তার সঙ্গী যেন তার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশংসা করে। তো বেশি বেশি সঙ্গীর প্রশংসা করার করুন। তাহলে সম্পর্ক অনেক ভালো থাকবে 

অযৌক্তিক তুলনা করা 

প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। একজন আরেকজনের থেকে আলাদা হয়। একেক জনের সৌন্দর্য একেক রকম। সঙ্গীকে  কখনোই অন্যের সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করা যাবে না। তাহলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে নায়িকাদের মত হতে বলেন,  নায়িকাদের মত চলাফেরা করতে বলেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ নাটক সিনেমার জীবন আর বাস্তবের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সৌন্দর্যের মোহে পড়ে সুন্দর একটা সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। 

অতিরিক্ত সন্দেহ করা 

সন্দেহের  বসে একটা সুন্দর সম্পর্ক নিমিষেই দুই ভাগ হয়ে যায়। আপনি যদি আপনার প্রিয় মানুষকে সবসময় সন্দেহের চোখে দেখেন তাহলে আপনার প্রতি আপনার প্রিয় মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। আপনার সঙ্গী বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলতে পারে, তার ফ্রেন্ড সার্কেল থাকতে পারে। এতে করে কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে তাকে আগেই সন্দেহ না করে তাকে ভালোবাসা দিন, তাকে বুঝিয়ে বলুন।

সবসময় তার কাছাকাছি থাকুন, পাশাপাশি থাকুন, ভালোবাসায় সিক্ত রাখুন। তাহলে আপনার সঙ্গীর ধ্যান-ধারণা সবসময় আপনার মধ্যেই থাকবে এবং সম্পর্ক হবে গভীর ও মজবুত। 

সম্পর্ক নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *