আমরা কম বেশি সবাই আগের দিনের বাংলা সিনেমা দেখেছি। নায়ক যখন বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে এবং পরিবারের বিরুদ্ধে যায় তখন নায়কের বাবা তাকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে বাস্তব জীবনেও এরকম দুষ্কর বিষয় দেখা যায়। একটি সন্তান একটি পরিবারের বিরাট অংশ। কিন্তু সেই সন্তান যখন বাবা মায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, বিভিন্ন ধরনের নেশা পানিতে ব্যস্ত থাকে, বাবা মায়ের কথা মতো চলে না, তখন সেই পরিবারের পিতা-মাতা বাধ্য হয়ে সন্তানকে ত্যাজ্য পুত্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

সন্তানকে কি ত্যাজ্য করা যায়? 

সন্তানকে কি ত্যাজ্য করা যায়- এর উত্তর হলো “না”। সন্তানকে  ত্যাজ্য করার বিষয়ে বাংলাদেশে কোন আইন নেই। তাই অযথা কেউ সন্তানকে ত্যাজ্য করা বা কাগজে কলমের ত্যাজ্য করা বা উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করবেন না। ইসলামে এই বিষয়টা হারাম। বাংলাদেশের আইন এটাকে সমর্থন করে না। একটা সময় মুখে অথবা কাগজে কলমের ত্যাজ্যপুত্র করা দেখা যায়। এবং ত্যাজ্যপুত্র করার কারণে যত সম্পত্তি আছে সব সম্পত্তি থেকে তাকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে  ত্যাজ্যপত্র করার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। 

আসলে মুখে অথবা কাগজে-কলমে ত্যাজ্য পুত্র বললেই ত্যাজ্যপুত্র হয়ে যায় না। এ বিষয়ে বাংলাদেশে কোন আইন নেই।  ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্ম এই বিষয়টিকে সমর্থন করে না। গ্রামে, গঞ্জে, এলাকায় দেখা যায় অনেক পিতা-মাতা গ্রামের মুরুব্বি ব্যক্তিদের নিয়ে একটা বৈঠক করে এবং সেই বৈঠকে তার সন্তানকে ত্যাজ্যপত্র অথবা ত্যাজ্যকন্যা করে। অথবা কাগজে-কলমে একটা নথি প্রকাশ করে। 

এতে করে যখন ওই পিতা-মাতা মারা যায় তখন তাদের যে সম্পত্তি আছে সেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে একটা ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। তারা সেই ত্যাজ্য পুত্র বা ত্যাজ্য কন্যাকে সম্পত্তির ভাগ দিতে চায় না।  গ্রামের মুরুব্বি এবং স্বার্থলোভী কিছু ব্যক্তিরা এটাকে প্রশ্রয় দেয়। কিন্তু ত্যাজ্য পুত্র বা ত্যাজ্য কন্যা করার বিষয়ে বাংলাদেশের কোন প্রচলিত আইন নেই বা ইসলামেও এটাকে সমর্থন করে না। 

সন্তানকে কি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায়? 

“হ্যা”। যদি পিতা-মাতা তার সন্তানের ওপর অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে অবশ্যই তাকে তাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন। কিন্তু এটা মুখে বঞ্চিত করলেই হবে না বা মুখে উত্তরাধিকারী থেকে বের করে দিলেই হবে না এর জন্য পিতা-মাতার দান, উইল বা বিক্রয়ের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন।

যদি জীবিত অবস্থায় পিতা-মাতা কোন সন্তানকে ত্যাজ্য পুত্র করে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত করে কিন্তু কাগজে কলমে কোন উইল বা বিক্রি বা দান না করে থাকে তাহলে তাদের মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে সেই ত্যাজ্যপুত্র সম্পত্তির ভাগ পাবে। সেই সম্পত্তি থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করার অধিকার রাখে না। কেউ যদি ত্যাজ্যপত্রের সূচনা ধরে তাকে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চায় তাহলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এটা অপরাধ। এটার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা হবে। 

এছাড়া বাবা-মা জীবিত অবস্থায় তার সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে যদি কাউকে জমি দান করে বা উইল করে জান বা দলিল করে দেন। তাহলে চাইলে সঠিক উত্তরাধিকারীগণ সেই দলটি বাতিল চেয়ে দেওয়ানি মামলা করতে পারবেন।পিতা-মাতা মৃত্যুর আগে কোন পুত্রকে বা কন্যাকে তার সম্পত্তির ভাগ না দেওয়ার জন্য ওসিয়ত করে গেলেও মৃত্যুর পর সেই পুত্র বা কন্যা যথাযথ উত্তরাধিকারী সূত্রে সম্পত্তির ভাগ পাবেন। 

সন্তানকে ত্যাজ্য করার বিষয়ে বাংলাদেশে কোন আইন নেই কেনো?

সন্তানকে ত্যাজ্য করার বিষয়ে কোনো আইন নেই। মুখে অথবা কাগজে-কলমে ত্যাজ্য করলেই ত্যাজ্য হয়ে যায় না। এর কারণ হচ্ছে একটি সন্তানের সাথে বাবা মায়ের সম্পর্কটা কখনোই চুক্তিভিত্তিক নয় যে চাইলেই শেষ হয়ে গেল। চাইলেই সম্পর্কটা নষ্ট করা যায় না বা অস্বীকার করা যায় না। রাষ্ট্রের কোথাও তেজ্যপত্র করার আদেশ নেই। 

তবে কোন সন্তান যদি পিতা-মাতার অবাধ্য থাকে, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়, পিতা মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে না চায়, পিতা মাতাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তাহলে সেই পিতা-মাতা আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। আইন তাদের সাহায্য করবে। কারণ পিতামাতার দায়িত্ব,  পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিষয়ে বাংলাদেশে আইন আছে। 

একটি পরিবারের সুখ শান্তি আশার আলো হচ্ছে সন্তান। একটি সন্তানকে লালন পালন করতে, তার পারিপার্শ্বিক খরচ যোগাতে পিতা মাতার অনেক কষ্ট করতে হয়। কিন্তু সেই সন্তান বড় হয়ে যখন পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে যায় তখন পিতা-মাতা অনেক কষ্ট নিয়ে তাকে ত্যাজ্যপুত্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

আমাদের কিছু কথা 

সন্তানকে ত্যাজ্য  করার বিষয় নিয়ে এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ভালো করে বুঝতে পেরেছেন। আমরা আরো আশা করি আপনারা কেউ পিতামাতার অবাধ্য হবেন না।  পিতা-মাতাকে যথাযথ সম্মান এবং তাদের ভরণপোষণ করবেন। ধন্যবাদ। 

সম্পর্ক নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *