বর্তমান সময়ে রাত জাগা বা রাত জেগে কাজ করাটা একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে গেছে। প্রাত্যহিক জীবনের কাজের চাপের জন্য প্রতিদিন  আমাদের রাত জাগতে হয়। বর্তমান সময়ে দেখা যায় বিভিন্ন অফিসগুলো তাড়াতাড়ি সাকসেস পাওয়ার জন্য, কোম্পানির ডেভেলপ করার জন্য ডে শিফট এবং নাইট শিফট দুই শিফটেই কর্মীদের দিয়ে কাজ করায়। অনেক সময় আবার বাহিরের দেশের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে গেলে দেখা যায় আমাদের এখানে যখন দিন, তাদের ওখানে তখন রাত। আবার তাদের ওখানে যখন দিন আমাদের এখানে তখন রাত। এর ফলে রুটিন করে কর্মীদের দিয়ে ২৪ ঘন্টা কাজ করানো হয়।

রাত জেগে কাজ করলে শরীরে ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে। শরীরে নানাবিদ সমস্যার পাশাপাশি বিভিন্ন জটিল রোগের উদ্ভব হতে পারে। যারা রাত জেগে কাজ করেন তাদের খাবার এবং ঘুম দুটো দিকেই খেয়াল রাখতে হয়। এজন্য রাত জাগলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হবে। যা খেলে শরীরে এনার্জি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কাজের দক্ষতা ঠিক থাকবে। আমরা অনেকেই রাত জাগি, রাতে কাজ করি কিন্তু আমরা  অনেকেই জানিনা রাত জাগলে কি ধরনের খাবার খেতে হবে? কি ধরনের খাবার শরীরের জন্য বেশি উপযোগী? তো আজকে আমরা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক –

রাত জাগলে যা খাবেন-

১। পানি

শরীরের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পানি। শরীরের সজিবতা ফিরিয়ে আনতে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি খেতে হবে। কাজের সময় আমাদের শরীর থেকে পর্যাপ্ত ঘাম ঝরে যায় এবং ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানিসহ বিভিন্ন উপাদান বের হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই কাজের ফাঁকে   নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। 

২। ঘি 

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, আমরা যখন রাত জেগে কাজ করি তখন শরীরে শুষ্ক ভাব আসে। শরীর শুষ্কতার কারণে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে যায় এবং এতে শারীরিকভাবে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন এক চামচ করে ঘি খাবেন। দেখবেন শরীরের শুষ্কতার ভাব চলে যাবে এবং শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া সঠিক থাকবে। তবে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে এটা এড়িয়ে  দিয়ে চালা উচিত। 

৩। ভাজাপোড়া খাবার পরিহার

রাত জাগলে ভাজাপোড়া খাবার একদম পরিহার করতে হবে। কারণ ভাজাপোড়া খাবার খেলে শরীরে গ্যাসের সমস্যা ছাড়াও বদ হজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া তেল জাতীয় বা ভাজাপোড়া খাবার খেলে দেহের ওজন বেড়ে যেতে পারে। 

৪। ফল ও সবজি খেতে হবে 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়মিত ফল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। গবেষণায় প্রমাণিত, রাত জাগলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, শরীরের সতেজতা  নষ্ট হয়ে যায়। রাত জেগে কাজ করলে বা রাত জাগলে নিয়মিত ফল খান। নিয়মিত ফল খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে, মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যায়। এছাড়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফল খাওয়া যেতে পারে। 

৫। খেজুর 

কাজের ফাঁকে নিয়মিত খেজুর খান কারণ খেজুর দেহের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, খনিজের চাহিদা পুরন করে। লিউটেন ও জিক্সাথিন নামক পদার্থ খেজুরে থাকায় চোখের রেটিনা ভালো থাকে। রাত জেগে থাকলে প্রতিদিন ২/৩ করে খেজুর খাওয়ার অভ্যাশ করুন। এছাড়া নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন। 

৬। বাদাম 

রাত জাগলে নিয়মিত বাদাম খান। কারণ বাদামের মধ্যে আছে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, প্রোটিন। রাত জেগে চাপের মধ্যে কাজ করলে প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে চিনা বাদাম খান। কারণ চিনা বাদাম মানসিক চাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর বাদাম খেলে পেট ভরা থাকে। 

মনে রাখবেন রাতের খাবারে ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয়। সব সময় হালকা খাবার খেতে হবে। এছাড়া রাত জাগলে সামুদ্রিক মাছ, মাশরুমের সালাদ, ফলের সালাদ, ব্রকলি, আদা হলুদ। কলা, কমলা,  হলুদ দুধ, চিনি ছাড়া মসলা চা খেতে পারেন। এতে মেজাজ খিটখিটে ভাব দূর হবে। 

মন্তব্য

রাত জাগলে বিভিন্ন ধরনের খাবারের গুরুত্ব নিয়ে এতক্ষন আমরা আলোচনা করলাম। আশা করি আপনারা সবাই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয় বা যদি আরো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। ধন্যবাদ। 

খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *