“আদা” নিত্যদিনের তরকারির স্বাদ পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীনকালে মানুষ আদাকে তরকারির পরিবর্তে ভেষজ হিসেবে বেশি ব্যবহার করেছিল। কারণ আদার মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক গুনসম্পন্ন ভেষজ উপাদান। বর্তমানে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, আদাকে মসলা এবং ভেষজ দুই অবস্থাতেই ব্যবহার করি। আমাদের প্রিয় পাঠকক্ষণ আপনাদের মধ্যে হয়তোবা অনেকেই জানেন না আদা খাওয়ার উপকারিতা কি? আমাদের জীবনে আদার গুরুত্ব কতটুকু? আদা খেলে কি ক্ষতি হয়? তো আপনারা মনোযোগ সহকারে একটু সময় নিয়ে আমাদের লেখাটি পড়ুন। তাহলে আদা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানা হবে। 

আদা সম্পর্কে আলোচনা

রাইজোম জাতীয় ঝাঝালো স্বাদ ও সুগন্ধিযুক্ত এবং ভিতরে হালকা হলুদ রং  বীরুৎ উদ্ভিদ হলো আদা। আদার বৈজ্ঞানিক নাম হল Zingiber officinale. আদা ফল বা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয় না বরং এর ব্যবহার হয় ভেষজ ওষুধ ও মসলা হিসেবে। প্রাচীনকালে আদার ব্যবহার হতো ভেষজ ঔষধ হিসেবে কারণ আদার মধ্যে বিভিন্ন অবদান আছে। যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন স,  ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,। এছাড়া আরো আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সিলিকন, বিটা ক্যারোটিন। 

আদা খাওয়ার উপকারিতা 

  • পেটের পীড়ায়:

পেটের পীড়ায় আদা বেশ উপকারী। দূষিত খাবার বা অনিয়মিত খাবারের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত পেট খারাপ হয়। পেট খারাপ হওয়ার সমস্যার সমাধানের একটা ঘরোয়া পদ্ধতি হলো আদা খাওয়া। আদার মধ্যে নিহিত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল পেটের পেশির শিথিলতা  বাড়িয়ে এসিডিটি সমস্যার সমাধান করে। 

  • কাশি জনিত সমস্যার সমাধান:

অতিরিক্ত কাশি বিপদের লক্ষণ। বিপদের আগেই করতে হবে তার সমাধান। খুসখুসে কাশি বা ঠান্ডা জনিত কাশি বা অন্য যেকোনো কারণে কাশি হলে এর সমাধান হতে পারে আদা খাওয়া। আদা খেলে কাশি কমে যায় এবং সেই সাথে গলা পরিষ্কার হয়। আবার যদি কোন কারনে গলায় ব্যথা থাকে তাহলে সে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।কারণ আদার মধ্যে রয়েছে ভেষজীগুন।  নিয়মিত আধা চা খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। 

  • পিরিয়ডের ব্যথা কমায়:

পিরিয়ডের সময় প্রচন্ড ব্যাথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চায়ের সঙ্গে আদা খাবেন। কারণ আদার মধ্যে রয়েছে ব্যাথা নিরাময়ক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা মেয়েদের মাসিকের সময় তীব্র  ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়। 

  • মাইগ্রেন উপশম:

প্রতিটি মানুষেরই প্রায় কম বেশি মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বিভিন্ন কাজ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্ট্রেসের মুখোমুখি হতে হয়। আর এর ফলে দেখা দেয় মাইগ্রেনের সমস্যা। মাইগ্রেনের সমস্যা হলে আদা দিয়ে চা খান মাইগ্রেনের ব্যথা কিছুটা কমে যাবে। 

  • দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধে:

মরণব্যাধি ক্যান্সার বা দুরারোগ্যের প্রতিকারক হিসেবে আদা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অপারিসীম। আদা এমন একটি উপাদান যা ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে পারে। এটা আধার একটা বিশেষ গুণ। এছাড়া আদার মধ্যে এন্টিভাইরাল ও এন্টিফাঙ্গাল থাকার কারণে দেহ গরম থাকে যা শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে । শীতকালে ছোট বাচ্চাদের শরীর গরম রাখতে আদা খাওয়ানো যায়। 

  • বাতের ব্যথা রোধ করে:

হাড়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হলো ক্যালসিয়াম। আদার মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় এবং এই গুণাগুনের জন্য আদা বাতের ব্যথা রোধ করে। বাতের ব্যথা হলে নিয়মিত আদা খান এতে করে শরীরের হাড় শক্ত এবং মজবুত হবে। 

  • মলমূত্র জনিত সমস্যার সমাধান:

মলমূত্রজনিত সমস্যার সমাধান হিসেবে আদা খাওয়া যেতে পারে। আদায় থাকে ভিটামিন বি ৬। মলমূত্র জনিত সমস্যা যদি দীর্ঘদিন থেকে থাকে তাহলে ব্লাডার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মুত্রের সমস্যা হলে আদা খান। এছাড়া আমাশয় রোগীদের জন্য আদা বেশ উপকারী। 

  • কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:

বর্তমানে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত একটা কমন সমস্যা। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, প্যারালাইজড  এর মতো মারাত্মক রোগ গুলো দেখা দেয়। হার্ট ও হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্যের জন্য আদার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ভালো কাজ করে। পাশাপাশি দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখে। 

  • রোগ প্রতিরোধে:

দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত আদা খেতে হবে। আদার মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

  • ক্ষত নিরাময়ে:

আদাতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান উপস্থিতি কারণে দেহের কোন স্থানে ক্ষত  থাকলে তা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পরে বা বিভিন্ন কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে যায় বা কেটে যায়। তখন নিয়মিত আদা খান ভালো ফলাফল পাবেন। 

  • জ্বর ও বমি সমস্যায়:

আপনার কি জ্বর জ্বর ভাব হয় বা মাঝে মাঝে কি বমি বমি ভাব হয়? এই সমস্যার সমাধান হিসেবে আদা খান বা আদা মিশ্রিত লিকার চা খান। 

আদা খাওয়ার অপকারিতা 

আদা যেমন পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ তেমনি আদার কিছু অপকারিতাও আছে 

  • বেশি পরিমাণে খেলে এলার্জি রোগীদের এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। 
  • গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমানে আদা খাওয়া পরিহার করুন। কারণ আদা খাওয়ার ফলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং অনাগত বাচ্চার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • আদা বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে পেটের সমস্যার সমাধান হওয়ার পরিবর্তে ডায়রিয়া হতে পারে। 
  • অনিদ্রা ও মাথা ব্যথার সমস্যা হতে পারে। 

কাঁচা আদা খেলে কি হয়? 

আদা সাধারণত রান্নায়, চায়ের সাথে, এবং বিভিন্ন ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু  আদা কাঁচা অবস্থাতেও খাওয়া যায়। 

  • সর্দি কাশির সমস্যায় কাঁচা আদা উপশম হিসেবে কাজ করে । 
  • কাঁচা আদা নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 
  • কাঁচা আদার সঙ্গে এক চিমটি লবন মিশিয়ে খেয়ে নিলে বমি বমি ভাব দূর হয়। 
  • কাঁচা আদার রস দাঁতের ভিতরে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে, দাঁত পরিষ্কার করে। 

সহবাসের আগে আদা খেলে কি হয়?

বর্তমানে যৌন সমস্যা নতুন কিছু নয়। যৌন সমস্যার কারণে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং অনেকেই যৌন সমস্যার কারণে বিয়ে করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে আদা ও মধু একসঙ্গে খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শুক্রাণুর সংখা এবং শুক্রাণুর গুণগত মানব বৃদ্ধি পায়। সহবাসের আগে আদা না খেয়ে নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস করুন তাহলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পারফরম্যান্স ভালো হবে। 

রাতে আদা খেলে কি হয়?

আমাশয,  পেট ফাপা, পেটে ব্যথা, অনেকের নিত্যদিনের সমস্যা এবং এই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এক কাপ কুসুম কুসুম গরম পানি নিন এরপর এক চামচ আদার রস +লেবুর রস + মধু মিশ্রিত  করুন। এইভাবে প্রতিদিন নিয়ম করে দিনে ও রাতে খাবেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন। 

আদা খাওয়ার নিয়ম কি? 

প্রতিনিয়ত তরকারিতে আমরা আদা খাই তবে মাংস রান্নার সময় আদা বেশি খাওয়া হয়। এছাড়াও আদা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন আদা কুচি কুচি করে অথবা ছেচে চায়ের সঙ্গে খাওয়া যায়। এছাড়া টুকরো টুকরো  করে কেটে লবণ মিশ্রিত করে খাওয়া যায়। এছাড়া আদার রস করে খেলে দাঁতের ভিতরে থাকা জীবানু ধ্বংস হয়ে যায়। আদা বেটে বা ছেচে অনেকদিন পর্যন্ত রেখে দিলে তার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। 

খালি পেটে আদা খেলে কি হয়? 

সকালে খালি পেটে এক খন্ড আদার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে চিবিয়ে অথবা রস করে খেলে দেহের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। পেট ফাপা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান হয়। 

আমাদের কিছু কথা 

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এবং প্রাসঙ্গিক আরও কিছু  বিষয় নিয়ে। তো আশা করছি আপনারা আমাদের লেখাগুলো পড়ার মাধ্যমে আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং প্রাসঙ্গিক আরো অনেক কিছু বিষয় জানতে পেরেছেন। বাস্তব জীবনে এই টিপস গুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। ধন্যবাদ। 

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *