পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
একজন মানুষ স্বাস্থ্যবান এবং সুস্থ থাকার জন্য সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা অপরিহার্য। তাই একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করা জরুরি। পানি শারীরাবৃত্তিয় কার্যাবলী ঠিক রাখতে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে, বিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আপনাকে হাইড্রেটেড এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করার জন্য এখানে পানি খাওয়ার নিয়ম গুলো বলা হলো।
পানি খাওয়ার নিয়ম গুলো
১. প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন:
ডাক্তার এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করার জন্য বলা হয় , তবে ব্যক্তির বয়স, ওজন এবং পানি পান করার ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে৷ তবে আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং পিপাসা পেলে অবশ্যই তৎক্ষনাৎ পানি পান করুন।
২. সকাল শুরু করুন খালি পেটে একগ্লাস পানি পান করে:
আপনার মেটাবলিজম কে বুস্ট করতে এবং বিপাক ক্রিয়া কে ঠিক রাখতে সকালে উঠে খালি পেটে একগ্লাস পানি পান করুন। এটি রাতের ডিহাইড্রেটিং অবস্থা কাটাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন বা ডায়েটে আছেন তারা সকালে খালি পেটে একগ্লাস উষ্ণ গরম পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি দ্রুত চর্বি কাটতে সাহায্য করে এতে ওজন ও দ্রুত কমে যায়।
৩. সারাদিন হাইড্রেটেড থাকুন:
হাইড্রেশনের ঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সারা দিন ধরে নিয়মিত ভাবে অল্প অল্প করে পানি পান করুন। একসাথে একেবারে অনেক পানি খাবেন না এতে হিতে বিপরীত হবে। রাস্তায় আপনার কর্মস্থলে যেতে যেতে পানি পান করা সহজ করতে আপনার সাথে একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল বহন করুন। এতে করে আপনি সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে পানি পান করে প্রতিদিনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে পারবেন।
৪. আপনার প্রস্রাবের রঙের দিকে মনোযোগ দিন:
আপনার হাইড্রেশন মাত্রা পরিমাপ করার একটি সহজ উপায় হল আপনার প্রস্রাবের রঙ পরীক্ষা করা। পরিষ্কার বা ফ্যাকাশে হলুদ প্রস্রাব ইঙ্গিত দেয় যে আপনি ভাল হাইড্রেটেড, যখন গাঢ় হলুদ প্রস্রাব ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে পানি পান করার মাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে দিন, পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করুন। ডাবের পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ ড্রিংক্স ও পান করতে পারেন। এতে ডিহাইড্রেশন ঠিক হয়ে যাবে।
৫. ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন এবং পরে পানি পান করুন:
সাধারণত ব্যায়াম কিংবা ওয়ার্ক আউট করলে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর তরল বেড়িয়ে যায়। তাই শরীর কে হাইড্রেট করা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই ব্যায়ামের আগে কমপক্ষে 8 আউন্স পানি পান করুন এবং আপনার পুরো ওয়ার্কআউট জুড়ে অল্প অল্প পানি পান করে শরীর কে হাইড্রেট করা চালিয়ে যান।
৬. চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন:
আপনার শরীর কে হাইড্রেট করার প্রাথমিক উৎস হিসাবে পানি বেছে নিন এবং সোডা এবং ফলের রসের মতো চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন, যা অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং ডিহাইড্রেশনের কারণ।
৭. পানি ছাড়াও পানির অন্যান্য উৎস গুলোর দিকে লক্ষ্য করুন:
পানি ছাড়াও, ফল এবং শাকসবজির মতো খাবারগুলিতেও প্রচুর পরিমানে পানি থাকে এবং এই খাবার গুলো আপনার প্রতিদিনের হাইড্রেশনের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পারে। পানি পাওয়া যায় এমন ফল ও সবজি গুলো হলো: স্ট্রবেরি, তরমুজ, আপেল, বাঙি, শশা, টমেটো, লাউ, কুমড়া, বিটরুট ইত্যাদি তে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে।
৮.খাবারের আগে না পড়ে পানি খাবেন?
অনেকের প্রশ্ন থাকে খাবার খাওয়ার আগে পানি খাবেন নাকি পড়ে খাবেন! মুলত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে পানি পান করা উচিৎ। আর খাবার খাওয়ার মাঝেমধ্যে পানি খাওয়া ঠিক নয়। এতে পাকস্থলীর বিপাকীয় কার্যকলাপ ব্যহত হয়। এছাড়াও যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা খাবার খাওয়ার আগে বেশ খানিক টা পানি পান করতে পারেন। এতে ক্ষুধা কমবে খাওয়ার চাহিদাও কমে যাবে। ফলে কম ক্যালরি গ্রহন করবে শরীর। ওজন ও কমবে।
মনে রাখবেন, ঠিকমতো হাইড্রেটেড থাকা সর্বোত্তম স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার চাবিকাঠি। পানি পান করার এই সহজ নিয়মগুলি অনুসরণ করে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনি আপনার শরীরের হাইড্রেশন চাহিদা পূরণ করছেন এবং প্রতিদিন আপনার সেরা সুসাস্থ্য অনুভব করছেন।
খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আরও পড়ুন
- পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
- আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
- যবের ছাতুর উপকারিতা এবং যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম
- গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
- রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিৎ?
- শসার উপকারিতা ও অপকারিতা
- খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান, ভালো নাকি খারাপ
- কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, যে বিষয়গুলো না জানলে বিপদ