পেটের মেদ অস্বস্তিকর একটা অবস্থা। অতিরিক্ত মেদ বা স্থূলতার কারণে শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। পেটে মেদ জমার কারণ হচ্ছে, আমাদের বিভিন্ন অভ্যাস ও খাবার। অভ্যাস ও খাবারের কারণে আস্তে আস্তে পেটে মেদ জমতে জমতে স্থুলতা অনেক বেশি হয়ে যায়। আপনি কি আপনার মেদ নিয়ে চিন্তিত?? কোনভাবেই মেদ কমাতে পারছেন না?? আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং মুহূর্তেই জেনে নিন পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় –

পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় 

পেটের মেদ যেমন শরীরের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে তেমনি মানুষের কাছে হতে হয় হাসাহাসির পাত্র। মেদ বেশি হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। পেটের এই মেদ কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না। মেদ বা স্থূলতা তৈরি হয় অনেকদিনের অভ্যাস ও কিছু খাবারের কারনে। নিত্য দিনের আমাদের কিছু বদভ্যাসের কারণে এবং অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস ও স্থুলতা  যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে আমাদের পেটে কিন্তু চর্বি জমতে শুরু হয়। 

মেদ হওয়ার আগে যদি আমরা কিছু টিপস ফলো করি বা কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করি তাহলে কিন্তু শরীরে মেদ হবে না।সচরাচর যখন আমাদের পেটের চর্বি বেশি হয়ে যায় বা মেদ বেশি হয়ে যায় তখন  আমরা অনেক টেনশনে পড়ে যাই কিভাবে মেদ কমানো যায়। আসলে এই অবস্থায় আমরা যদি কিছু নিয়ম, কিছু খাবার পরিবর্তন করি তাহলে খুব সহজেই পেটের মেদ কমানো যায়। মাত্র ৭ দিনেই পেটের মেদ অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারবেন। 

পেটের মেদ কমানোর অভ্যাস

প্রতিটি মানুষ অভ্যাসের দাস। প্রত্যেকটা মানুষেরই কিছু ভালো অভ্যাস,  কিছু খারাপ অভ্যাস থাকে। একজন মানুষের মেদ বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে তার বদ অভ্যাস। আবার মেদ কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে কিছু ভালো অভ্যাস। 

১. অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করতে হবে 

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার খেলে পেটে মেদ জমে যায়। খাবার খেতে হবে পরিমাণ মতো এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে অতিরিক্ত ভাত খেলে পেটে চর্বি জমে যায়।ভাতের মধ্যে শুধু শর্করা পাওয়া যায়। ভাত খেতে হবে অল্প পরিমাণে। ভাত একটু অল্প পরিমাণে খেয়ে তার বদলে তরকারি বেশি খেলেন,  ফলমূল খেতে পারেন। আমিষ, প্রোটিন, ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে পারেন। এতে করে এবডোমিনালে চর্বি কম জমে। 

২. একটানা খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন

একটা বিষয় মনে রাখবেন, যখন আপনি একটানা শুধু খেয়েই যাচ্ছেন এর ফলে কিন্তু সহজেই আপনার এবডোমিনালে সহজেই চর্বি জমে যায়। যদি অনেকদিন পর্যন্ত আপনার এই অভ্যাসটা থাকে তাহলে একসময় পেটে অতিরিক্ত মেদ জমে যাবে। এইজন্য একটানা খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে অল্প অল্প করে নির্দিষ্ট সময় পরপর খান। এতে করে কিন্তু আপনার হজম শক্তি ভালো হবে। পেটে মেদ বাড়ার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। চিকিৎসকদের মতে,একটানা না খেয়ে অল্প অল্প করে নির্দিষ্ট সময় পর পর খেলে সেই খাবারটা শরীরে তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং খাবারের পুষ্টির উপাদান গুলো শরীর ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারে। 

৩. নিয়ম অনুযায়ী খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন

যতটা সম্ভব প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। অনিয়মিত জীবন যাপন কখনো স্বাস্থ্যকর হয় না। এক বেলার খাবার অন্য বেলায় খেলে এতে করে কিন্তু দেহে একটা প্রভাব ফেলতেছে। দেহে চর্বি জমার আশংকা থাকে।অনেকেই আছেন, অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য সকালে কোন কিছু না খেয়ে একবারে দুপুরের খাবার খান। এতে করে অতিরিক্ত ক্ষুধার কারনে দুপুরে খাওয়া বেশি হয়ে যায়। ফলে এবডোমিনালে মেদ কমে যাওয়ার পরিবর্তে বেশি হয়ে যায়। অর্থাৎ ১ টাকা বাঁচাতে গিয়ে ৫ টাকা লস হয়ে যায়। এজন্য প্রতিদিনের খাবার নিয়ম অনুযায়ী একই সময়ে খেলে পেটে চর্বি জমে না। ফলে অতিরিক্ত মেদ আস্তে আস্তে কমে যায়। 

৪. ছোট প্লেটে খাবার খান 

ছোট প্লেটে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। ছোট প্লেটে খাবার খেলেই যে মেদ কমে যাবে, বা মেদ হবে না এমনটা নয়। ছোট প্লেটে খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য হল ছোট প্লেটে খাবার কম ধরে এবং খাবার খাওয়া কম হয়। এতে করে মেদ বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। বড় প্লেটে খাবার খেলে দেখা যায় যে,  বড় প্লেটের খাবার বেশি পরিমাণে থাকে ফলে নিজের অজান্তেই শরীরে বেশি পরিমাণে শর্করা প্রবেশ করে। এতে করে পেটে  মেদ জমে যায়। 

৫. মানসিক চাপ পরিহার করতে হবে 

দীর্ঘদিন মানসিক চাপে থাকলে বা স্ট্রেসে থাকলে শরীরে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি পেটে মেদ জমে যায়। দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই কিন্তু স্ট্রেসের মধ্যে কাজ করেন এতে করে একটা সময় তাদের স্থূলতা সমস্যায় ভুগতে হয়। আমরা যখন অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভোগী, অতিরিক্ত স্ট্রেসের মধ্যে জীবন যাপন করি, তখন কর্টিসল নামক একটি হরমোন আমাদের শরীরে নিঃসরিত হয়। এর ফলে কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। আবার এই কর্টিসল হরমোন অন্য আরেকটি হরমোনকে বাড়িয়ে দেয় যার নাম গ্রেলিন। যার কারণে অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে। তো বুঝতেই পারছেন এই হরমোন গুলো শরীরে মেদ জমাতে সাহায্য করে। তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন, মানসিক চাপকে মোকাবেলা করুন, তাহলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা হবে না। 

৬. পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন 

পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করলে তা শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। গবেষকরা কিছু মহিলার ওপর প্রায় ১৬ বছর যাবত গবেষণা করে দেখেছেন, যারা দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান তাদের তুলনায়, যারা দৈনিক ৫ ঘন্টার কম ঘুমান তাদের স্থূলতার হার বেশি এবং শরীরে মেদ বেশি। 

এছাড়া রাত জেগে কাজ করলে ক্ষুধার পরিমাণ বেড়ে যায়। রাতে সাধারণত আমরা মুখরোচক,  সফট ড্রিংক, তেল চর্বি জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করি। ফলে রাত জেগে থাকার কারণে বেশি ক্যালরি গ্রহন করা হয় এবং পেটে মেদ জমে যায়।পেটের মেদ কমাতে নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো জরুরী। যদি অনিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করতে পারেন তাহলে দেখবেন ৭ দিনেই আপনার পেটের মেদ অনেক কমে গেছে। 

পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা 

পেটের মেদ কমানোর জন্য খাবারের তালিকা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়মিতভাবে খাবার খাওয়া পরিহার করে প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। মেদ কমানোর জন্য যেসব খাবার খাওয়া যায় –

১. সবুজ শাক-সবজি 

আপনি কি অতিরিক্ত মেদ নিয়ে  চিন্তিত? মেদ কমানোর উপায় খুঁজছেন? তাহলে নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রাত্যহিক জীবনে সুস্থ থাকার জন্য যেমন শাকসবজি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই তেমনি দেহ স্লিম ও অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য সবুজ শাকসবজি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। প্লেটে ভাতের পরিমাণ কম রাখবেন শাক-সবজির পরিমাণ বেশি রাখবেন। কারণ শাকসবজি বেশি খেলে কোন সমস্যা নেই। শাকসবজির মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিন থাকায় তা মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে পানির সমতা বজায় রাখে। 

২. বাদাম

বাদাম খুবই সাধারণ একটি খাবার হলেও এর অসাধারণ গুন আছে। বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে। যা দেহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাদাম খেলে খিদার পরিমাণ কম লাগে ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্য কম গ্রহণ করা লাগে। দীর্ঘ কোণ পেট ভরে রাখার জন্য এক মুঠ কাজুবাদাম খান। কাজুবাদামে আমিষ ও ভিটামিন ই থাকার কারণে তা ত্বককে মসৃণ করে। কাজুবাদামের মধ্যে যে উপাদান গুলো আছে সেগুলো দেহে চর্বি জমাতে সাহায্য করে না। তাই পেটের মেদ কমানোর জন্য কাজু বাদাম খান। 

৩. শসা 

শসা অতি প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। শসার মধ্যে পানির পরিমাণ প্রায় 96%। শরীরের মেদ কমানোর জন্য শসা খেতে পারে। শসার মধ্যে ক্যালোরি কম থাকায় এবং পানির পরিমাণ বেশি থাকায় তা মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শশা দেবে ডিহাইড্রেশন রোধ করে। 

৪. তরমুজ

ফিটনেস বাড়ানোর জন্য তরমুজ ভালো উপকার করে। তরমুজের মধ্যে আছে প্রায় ৮৬ শতাংশ পানি যা দেহে পানি শূন্যতা রোধ করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। তরমুজের মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টি  উপাদানগুলো পেটের মেদ ঝরিয়ে দেহকে স্লিম করে। 

৫. সামুদ্রিক মাছ 

সামুদ্রিক মাছ বা চর্বিযুক্ত মাছ খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে 

৬. তৈলাক্ত ও ফাস্টফুট জাতীয় খাবার পরিহার করুন

তৈলাক্ত ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করলে পেটের মেদ কমানো যায়। প্রধানত এই ধরনের খাবার থেকেই কিন্তু পেটে মেদ জমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বানরকে নিয়ে দীর্ঘ একটি গবেষণা করে। সেই গবেষণায় কিছু বানরকে ফাস্টফুড ধরনের খাবার দেওয়া হতো এবং কিছু বানরকে নরমাল খাবার দেওয়া হতো। তো একটা সময় পর দেখা যায় যেগুলোকে নরমাল খাবার দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর  তুলনায়, যেগুলোকে ফাস্টফুড খাবার দেয়া হয়েছিল সেইগুলোর  পেটে অনেক চর্বি জমে যায়। 

পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি 

পেটের মেদ কমানোর একটা ঘরোয়া পদ্ধতি হচ্ছে গরম পানিতে লেবু খাওয়া। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কুসুম কুসুম এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবুর রস চিপিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই অভ্যাসটি করলে আস্তে আস্তে পেটের মেদ কমে যাবে। 

পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম 

মেদ কমানোর জন্য সর্বোত্তম উপায় হল ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে যেমন শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে তেমনি অতিরিক্ত চর্বি কমে যায় শরীর থেকে। ব্যায়াম করার ফলে পেটের মেদ কমানো সম্ভব।

  • প্রতিদিন বেশি বেশি হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। হাটাহাটি  করলে যেমন শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো সচল থাকে তেমনি পেটের মেদ কমে যায়। 
  • প্রতিদিন সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। এতে করে ঘামের সাথে শরীর থেকে ফ্যাট বেরিয়ে যাবে। 
  • প্রতিদিন দৌড়ানোর অভ্যাস করুন। গবেষণায় দেখা গেছে দৌড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি পেটের মেদ কমে যায়। মেদ কমানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে পারেন। 
  • ব্যায়ামাগারে  ভর্তি হতে পারেন। ব্যায়ামাগারের পেটের মেদ কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

তলপেটের চর্বি কমানোর উপায় 

তলপেটের চর্বি কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যায়াম করতে হবে। তলপেটে খুব তাড়াতাড়ি চর্বি জমা হয়। প্রায় প্রত্যেকেরই এ-ই সমস্যা হয়। যদি একটু অবহেলা বা অসচেতনতায় দিন কাটান তাহলেই তলপেটে চর্বি জমে মেদ বেরে যেতে পারে। তাই তলপেটে চর্বি কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি বিভিন্ন বদ অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। 

৭ দিনে পেটের মেদ কমানোর উপায় 

পেটের মেদ কমানোর জন্য আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে, খাদ্যের পরিবর্তন করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। উপরোক্ত কাজগুলো যদি সঠিকভাবে নিয়মিত পালন করা হয় তাহলে অবশ্যই ৭ দিনের মধ্যেই পেটের মেদ অনেকটা কমে যাবে। 

মন্তব্য

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় নিয়ে। আশা করি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন 

স্বাস্থ্য টিপস  নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *