স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। বর্তমানে প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন। স্বাস্থ্য একেবারে খারাপ হলে যেমন শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে তেমনি বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের কাছে শুনতে হয় নানা রকম তিরস্কার এবং হতে হয় হাসির পাত্র। অনেকেই আছেন মোটা হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করতেছেন। মোটা হওয়ার চিন্তা-ভাবনায় দিন দিন আরো শুকনো হয়ে যাচ্ছেন। মোটা হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। কিছু উপায় আছে যেগুলো অবলম্বন করলে সহজেই মোটা হওয়া যায়। আপনারা যারা মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানেন না তারা আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক –

মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি? 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম স্বাস্থ্যবান হতে সাহায্য করে। দৈনিক ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমানোর ফলে  শরীরের ওজন একটু বেড়ে যাবে। ঘুম ভালো হলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। শরীরের ক্রিয়া প্রক্রিয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে। কিন্তু অনিয়মিত ঘুম আবার স্বাস্থ্য খারাপ করে দেবে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে মধু মিশিয়ে পান করুন। কারণ দুধ হলো বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধি। তাই মোটা হওয়ার উপায় হিসেবে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর অভ্যাস অতি প্রয়োজনীয়। 

আরও পড়ুন: দিনে ঘুমানোর উপকারিতা, দিনে ঘুমালে কি হয়? 

মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা

মানসিক চাপের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যায়। আপনি যতই খাবার খান না কেন, যতই নিয়ম ফলো করেন না কেন, যদি আপনি মানসিক চাপে  থাকেন তাহলে কখনোই মোটা হতে পারবেন না। মোটা মানুষ অতিরিক্ত মানুষের চাপে থাকলে আস্তে আস্তে তার চেহারা শুকিয়ে যায়। কিন্তু চিকন মানুষ হলে তো আর কোন কথাই নেই। মানসিক চাপমুক্ত থাকলে শরীরের সবকিছুই ঠিক করে। মানসিক চাপ, চিন্তাভাবনা, মানেই স্বাস্থ্যহীনতার কারণ। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন, একাকীত্ব পরিহার করুন, পরিবার, বন্ধু বান্ধবের সাথে সময় কাটান। 

নিয়মিত ব্যায়াম করা

নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। শরীরে যদি অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় তাহলে সেগুলো গলে যাবে। ব্যায়াম করলে কেউ চিকন হয়ে যায় না বরং ব্যায়াম করলে শরীরের মাসল গুলো মোটা ও মজবুত হয়। ব্যায়াম করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সুস্থের পাশাপাশি বাহিকভাবে সুস্বাস্থ্য অধিকারী হওয়া যায়। 

বিশ্রাম করা

অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। মোটা হওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম বাদ দিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। বিশেষ করে শুয়ে বসে সময় কাটাতে পারলে তো আরো ভালো। অতিরিক্ত বিশ্রাম গ্রহণ করলে অতি সহজেই মোটা হওয়া যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন। 

একটু পরপর  খাদ্য গ্রহণ করা

একটু পর পর খাওয়ার অভ্যাস করে তুলুন। একবারে খাওয়ার চেয়ে একটু পরপর খাওয়ার অভ্যাস করলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। ২ ঘন্টা পর পর অল্প করে খাবার খেলে খাবার হজমেও সমস্যা হয় না। আর সব সময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দিন দিন খাবারের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে বারবার খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে সেই সাথে মোটা হতে পারবেন।

মোটা হওয়ার খাবার কি কি? 

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার: মোটা হওয়ার জন্য দেহে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেহের তাপ শক্তি উৎপাদনের কাজ করে। দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এর দুটি উৎসকে (প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ) সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ সর্তকতা  অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারের উৎস যেমন:

  • শস্যজাতীয়– ভাত,  রুটি, নুডুলস, পাস্তা, ক্র‍্যাকার, সিরিয়াল ইত্যাদি। 
  • ফল জাতীয় – আম, আপেল, তরমুজ, কলা, কমলালেবু। 
  • দুগ্ধ জাত – দুধ, দই, ছানা 
  • সবজি জাতীয় – মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মটর, বিট রুট। 
  • মিষ্টি জাতীয় – মিষ্টি, কেক, ক্যান্ডি, চকলেট। 

আরো বিভিন্ন ধরনের কার্বোহাইড্রেড এর যুক্ত খাবার হল লাল চাল, ওটস, ছোলা, রাজমা, কাউন, কলা ইত্যাদি। এছাড়া ওজন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে আঙ্গুর, আপেল, গাজর, খেজুর। কারণ এগুলো তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ। 

আমিষ বা প্রোটিন যুক্ত খাবার: আমিষ বা প্রোটিন যুক্ত খাবার দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পূর্ণ বয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলার দৈনিক আমিষের প্রয়োজন হয় ৫৬ ও ৪৬ গ্রাম। পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ গ্রহণ করার ফলে শরীরের মাংসপেশির আকার বড় হয়ে যায়। শরীর শক্তিশালী থাকে। মোটা হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার গুলো হল :

  • প্রাণিজ আমিষ:  ডিম, দুধ, ছানা, পনির, মাছ, মাংস। এগুলো হলো প্রথম সারির প্রোটিন। 
  • উদ্ভিজ্জ আমিষ: শিমের বিচি, বাদাম, সয়াবিন, ডাল, আলু, ফুলকফি। এগুলো দ্বিতীয় সারির আমিষ বা প্রোটিন।

স্নেহ যুক্ত খাবার: স্নেহ জাতীয় খাবার মোটা হওয়ার জন্য এবং ওজন ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্নেহ জাতীয় খাবার থেকে তাপ ও অধিক কার্য ক্ষমতা পাওয়া যায়। স্নেহ জাতীয় খাবারও দুই ধরনের –

  • প্রাণিজ: চর্বিযুক্ত মাংস, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, পনির, মাছের তেল  ইত্যাদি। 
  • উদ্ভিজ্জ: সূর্যমুখী তেল, নারিকেল তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, বাদাম তেল ইত্যাদি। স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য স্নেহযুক্ত খাবার অধিক পরিমাণে খেতে হবে। 

ড্রাই ফ্রুটস: ওজন বৃদ্ধিতে নিয়মিত ড্রাই ফ্রুটস  খাওয়ার অভ্যাস করুন। ড্রাই ফ্রুটসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও ফ্যাট থাকার কারণে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য মোটা হবে। প্রতিদিন রাতে একটি পাত্রে কিছু ছোলা, কিছু বাদাম, কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে খেয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের শারীরিক গঠনের পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্য মোটা হবে। 

ফাস্টফুড : নিয়মিত ফাস্টফুড খান। কারণ ফাস্টফুড দেহের ওজন দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীর মোটা করে দেয়। বিভিন্ন ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যেমন – বার্গার পিজ্জা,  আইসক্রিম, ফ্রাইড ফুড। 

মুখরোচক খাবার: বিভিন্ন মুখরোচর খাবার খাওয়া যেতে পারে যেমন- পরোট,  পিয়াজু, সিঙ্গারা। অর্থাৎ ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার। এই ধরনের খাবারে তেল চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

মোটা হওয়ার ঔষধ কি 

মোটা হওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন টিপস অনুসরণ করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পরও মোটা হয় না। এক্ষেত্রে অনেকেই বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে। মোটা হওয়ার জন্য প্রচলিত কিছু ঔষধের নাম হল:

  • পিউটন সিরাপ 
  • সিনকারা সিরাপ 
  • রুচিটন সিরাপ
  • রুসিভিট সিরাপ
  • আমলকি প্লাস 

তবে মনে রাখবেন যে কোন ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই ভালোভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *